প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ৯ই সেপ্টেম্বর, বুধবার
গত ২রা সেপ্টেম্বর, বুধবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৪৬নং ওয়ার্ডে ডাক্তার ও রোগীর স্বজনের মধ্যে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক তথ্য পরিবেশিত হয়েছে যা প্রকৃত ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ)। তাঁরা ঘটনা বর্ণনা করে লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। রামেক ইচিপ সভাপতি ডা. মো. মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মনন কান্তি দাস স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি তুলে ধরা হলো।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ভাষ্যমতে বীর মুক্তিযাদ্ধা জনাব ইসহাক আলীকে কেন্দ্র করে ডাক্তার কর্তৃক যেসব অবমাননাকর প্রতিবেদন প্রচার হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে উক্ত দিনের ঘটনা বর্ণনা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, “২ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা-পত্নী পারুল বেগম মুমূর্ষু ও অচেতন অবস্থায় সকাল ৭.১০ ঘটিকায় জরুরি বিভাগে আসেন। সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মেডিসিন বিভাগের ৪৬নং ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিলে সেখানে তাঁরা পৌঁছান ৭.৪৫ মিনিটে। ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ‘স্ট্রোক’ নির্ণয় করার পর পরই ৮টার মধ্যে তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন। নার্সরা সঙ্গে সঙ্গেই তার ঔষধপত্র ও বেড নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সকাল ৮.৩০ মিনিটে নাইট শিফট শেষ হওয়ার পর মর্নিং শিফটের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পারুল বেগমের পাশের বেডেই চিকিৎসারত ছিলেন জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন নেওয়া মেডিসেন ইউনিট-৫ এর একজন GBS এর রোগী। সেই রোগীকে মেডিসিন ইউনিট-৫ এর মর্নিং শিফটের ডাক্তার চিকিৎসা দিতে গেলে পারুল বেগমের অবস্থা উন্নতি না হওয়ায় তাঁর ছেলে রাকিবুল ইসলাম সেই ডাক্তারের উপর চড়াও হন যিনি পারুল বেগমের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন না। চিকিৎসায় কোন অবহেলা না থাকা সত্ত্বেও রাকিবুল ইসলাম এক পর্যায়ে ডাক্তার ও নার্সদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। তাকে শান্ত করতে মেডিসিন ইউনিট-৫ এর চিকিৎসক বিনয়ের সাথে অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে রাকিবুল ইসলাম ও তার সহযোগী মুস্তাফিজ চিকিৎসককে ধাক্কা দেন। এই নিয়ে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে পরিণত হয়। তখন পাশের ওয়ার্ড থেকে মেডিসিন বিভাগের ইউনিট-৫ এর আরেকজন ডাক্তার সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু উভয় চিকিৎসকই তাদের হাতে অপদস্ত হয়। তখনই ওয়ার্ডে অবস্থানরত আনসার সদস্য ও অন্যান্য রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের সেই পরিস্থিতি থেকে সরিয়ে নার্সদের রুমে নিয়ে বসান। উল্লেখ্য, মুক্তিযাদ্ধা ইসহাক আলী সম্বন্ধে কোনো প্রকার কটূক্তিমূলক কথা চিকিৎসক কর্তৃক বলা হয় নি, গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা।
এমন পরিস্থিতির পর পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন হাসপাতালের সম্মানিত পরিচালক মহোদয়, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ইউনিট প্রধানগণ, পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ এবং অন্যান্য ইন্টার্ন চিকিৎসকগণ। কর্মস্থলের চিকিৎসকগণ এবং নার্সদের মারধর ও মানহানী নিয়ে পরিচালক মহোদয়ের কাছে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ বিচারের দাবি জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাকিবুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু সাংবাদিক বিভিন্ন গনমাধ্যমে নানা রকম বানোয়াট ও মিথ্যে তথ্য প্রচার করে ডাক্তারদের মনঃক্ষুণ্ন করেছে।
পরবর্তীতে ৭ই সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় রাজশাহী সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক জনাব আব্দুল জলিলের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয় এবং উভয় পক্ষের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে মামলা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জনাব জামিলুর রহমান, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী, মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান, রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ডা. আব্দুল মান্নান, গেরিলা কমান্ডার শফিকুর রহমান রাজা, কবিকুঞ্জের সভাপতি, অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামানিক, মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, রবিউল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন প্রমুখসহ প্রশাসন ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, চিকিৎসক ও নার্সগণ।”
পরিশেষে, বীর মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিনীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, উভয় পক্ষের কাছ থেকে সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে যেন সংবাদ পরিবেশন করা হয়।
অনুলিখন – নুসরাত ইমরোজ হৃদিতা