বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
চারজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে পুরো ৫০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল। রোগী থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। এতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। বেহাল এই হাসপাতালটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও উন্নত সেবার মুখ দেখেনি স্থানীয় জনগণ।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, গড়ে প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন উপজেলার ৩ থেকে ৪ শতাধিক বাসিন্দা। গত ১ বছর ধরে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বিধিমালা অনুযায়ী, ৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ৪ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটিতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, এ্যানেসথেসিয়া, গাইনি এন্ড অবস, কার্ডিওলজি, অর্থো সার্জারী, চক্ষু, ইএনিটি, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, মেডিসিন, মেডিকেল অফিসার (৩ জন), ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার প্যাথলজি, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (৮ জন) চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। সংকট রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির র্কমচারীর।
চিকিৎসক সংকট থাকায় যে কোনো রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করতে হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবার গুলো।
স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী। জনবল সংকটে এখন বন্ধ রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় মা ও নবজাতকের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র, জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি), বিকল হয়ে পড়ে আছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ২২ লাখ টাকায় কেনা ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডাঃ সারোয়ার আহমদ বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসকের ব্যাপক সংকট রয়েছে। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা হাসপাতাল চালানো অনেক কঠিন বিষয়। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের জন্য হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক মিলে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হচ্ছে। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জানান, সিলেট জেলার অন্য হাসপাতালগুলোর চেয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেশি। প্রায় ৬ মাস ধরে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের মধ্যেও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি জানিয়ে ডাক্তার সংকট নিরসনের জন্য একাধিকবার আবেদন পাঠিয়েছি।”
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী