সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে বলা চলে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বিভিন্ন উপজেলার প্রায় সাত লাখ মানুষ!
কাঠামো অনুযায়ী – স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা ২১জন। ৮ জন চিকিৎসক পদায়িত থাকলেও একজন চিকিৎসক প্রেষণে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। অর্থাৎ, ১৩ টি পদই ফাঁকা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও পদায়িত আছেন মাত্র একজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ৯টি পদ খালি থাকায় উপজেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে সার্জারি, মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক্স, ইএনটি, চক্ষু, কার্ডিওলজি, চর্ম-যৌন, আয়ুরবেদিক ও অ্যানেস্থেশিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তথা সিনিয়র কনসালট্যান্টের পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন। মোট চিকিৎসকের পদ খালি ২২টি!
তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবসময়ই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এতে তাদের সেবা দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও বাকিদের হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর চলে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট (উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) দিয়ে। আউটডোরে রোগী দেখার কারণে রোগীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে চেম্বারও করছেন তারা। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার শব্দ লিখতে পারবে না। কিন্তু আইন উপেক্ষা করেই ডাক্তার পরিচয়ে দেদারসে রোগী দেখে যাচ্ছেন তারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সাব সেন্টার থেকে নিয়োগপ্রাপ্তসহ মোট তিনজন মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্টের (উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) মধ্যে মো. জাহিদুল ইসলাম এবং কামাল হোসেন নিজেদের ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে রোগী দেখেছেন। ইতিমধ্যে প্ল্যাটফর্মের কাছে এ সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রেসক্রিপশনের তথ্য এসেছে। যেখানে জাহিদুল ও কামাল নিজেদের ডাক্তার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে এসব প্রেসক্রিপশনের মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জরুরি বিভাগের টিকিটও রয়েছে।
ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথাযথ সেবা না পেয়ে অনেক রোগী চলে যাচ্ছেন স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। এখানে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে না। কয়েকমাস যাবত সরবরাহ নেই জলাতংকের ভ্যাকসিন। ইপিআই টিকার মধ্যে হাম-রুবেলা ও পোলিও টিকারও সংকট চলছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন বর্তমানে নষ্ট।
হাসপাতালের একজন কর্মচারী প্ল্যাটফর্মকে জানান, হাসপাতালে রয়েছে পুরাতন মডেলের একটি এক্সরে মেশিন। এই পুরাতন মেশিন দিয়ে ঠিকমত এক্সরে করা যায় না। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। মাঝেমধ্যেই ভুল রিপোর্ট দেয়। লোডশেডিংয়ের বিপরীতে জেনারেটর থাকলেও তেল বরাদ্দ নেই। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকে রোগীরা। অভিযোগ রয়েছে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই নেই সংকটের কারণে হাসপাতালে প্রায় ২০-২৫ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে। তারা হাসপাতালে আসা রোগী নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ক্লিনিকে। ফলে তারা বিভিন্ন সময় অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামানকে ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কর্মরত একজন চিকিৎসক জানান, “গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পাশাপাশি জনবল সংকট চলমান। ফলে কাঙ্খিত সেবা প্রদান সম্ভব না হলেও সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা চেষ্টা করছি। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব তা রোগীদের দিচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।”
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী।