বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
গ্রাম বা ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসক চান ৯৭. ৬ শতাংশ মানুষ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অনুরোধে করা বিবিএসের এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে প্রতিবেদন ঈদুল ফিতরের পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবে সংস্কার কমিশন।

জানা গেছে, সরকারি বিশেষায়িত, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি চিকিৎসা সেবার মান সম্পর্কে ৬৪ জেলার শহর এবং গ্রামের ৮ হাজার ২৫৬টি পরিবারের ওপর এ জরিপ করা হয়। নমুনায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিটি খানা থেকে ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী একজন করে নারী-পুরুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।
জরিপে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষ সন্তুষ্ট নয়। গত বছর ৩৯ শতাংশ মানুষ সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো সেবাই নেননি। সেবাগ্রহীতার তিনজনের একজন মনে করেন, এসব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান খারাপ।
সরকারি সেবায় দুরবস্থার কারণে বড় অংশ ছুটছে বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা অনেক ব্যয়বহুল। ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করেন, বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে খরচ অনেক বেশি। ওষুধের ক্ষেত্রে একই চিত্র বলে জানিয়েছেন ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে অবহেলার শিকার হয়েছেন ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। বেসরকারিতে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধ, অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসকের পরামর্শ মূল্য নির্ধারণে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট। সেবার মান বাড়াতে সব হাসপাতালকে যুক্ত করে সরকারিভাবে ২৪ ঘণ্টা জরুরি রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালুর পক্ষে ৯৯ শতাংশ। রোগীদের স্মার্ট হেলথ কার্ড ৯৩; স্বাস্থ্য বীমা চান ৬৯ শতাংশ মানুষ। গ্রামাঞ্চলের ৬৮ ও শহরের ৭২ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বীমার পক্ষে। বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা পেতে প্রথমে প্রাথমিক সেবাদানকারী এমবিবিএস বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে রেফারেল নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পক্ষে ৭১ শতাংশ। গ্রাম বা ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসক চান ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সঙ্গে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় কমাতে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর পক্ষে ৯২ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।
বিবিএস বলেছে, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ কমের কারণে ব্যক্তিগত ব্যয় বাড়ছে। ৮৭ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এ খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ বরাদ্দ চান। ৯১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে বাধ্যতামূলক সাংবিধানিক অধিকার করার পক্ষে।
জরিপের তথ্য বলছে, দেশের ৯৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার খরচ অনেক বেশি। ২ দশমিক ৮ শতাংশ খরচ কম মনে করেন। মন্তব্য করেননি ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সেবা নেওয়া ৮৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ওষুধের দাম খুব বেশি। ৩ শতাংশের মত, দাম কম। আর ৯ দশমিক ১ শতাংশ মতামত দেননি। রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের মূল বা জেনেরিক নাম লেখার পক্ষে ৪৪; নাম ব্যবহারের পক্ষে ১৭ শতাংশ। তবে ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে একই সঙ্গে জেনেরিক ও কোম্পানির নাম লেখা উচিত।
বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে ও খরচ কমাতে ৯৭ শতাংশ মানুষ মূল্য বেঁধে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। একই সঙ্গে ৯৫ শতাংশ সেবা সহজলভ্য করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ চান। চিকিৎসক এক রোগীকে কমপক্ষে ১৫ মিনিট দেখবেন বলে মনে করেন ২৫ দশমিক ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস