প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ জুন ২০২০, শুক্রবার
ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম শামীম
সহযোগী অধ্যাপক ইপিডেমিওলজি এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর
সাধারন মানুষকে কাপড়ের তৈরী মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি। সাধারণ কাপড়ের মাস্ক ঘরেই তৈরী করা যায় এবং এটা কোভিড- ১৯ এর ছড়িয়ে পরা প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারবে।
কাদের কাপড়ের তৈরী মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ নয়ঃ
২ বছরের নিচের বয়সের শিশু, বা যাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা আছে, অজ্ঞান, অক্ষম বা তারা যাদের অন্যের সাহায্য লাগে মাস্ক খুলার জন্য। কাপড়ের তৈরী মাস্ক সার্জিক্যাল মাস্ক বা এন- ৯৫ রেসপিরেটরের মত নয়।
সিডিসি- এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী সার্জিক্যাল মাস্ক এবং এন- ৯৫ রেসপিরেটর গুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মী যারা রোগীর সংস্পর্শে আসে তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।
সেলাই করা কাপড়ের মাস্ক তৈরির উপকরণঃ
i) দুইটি আয়তকার ১০” × ৬” সুতি কটনের কাপড়
ii) দুইটি ৬” ইলাস্টিক ব্যান্ড (বা রাবার ব্যান্ড, সুতা, কাপড়ের ফিতা বা চুল বাধার ফিতা)
iii) সুঁই এবং সুতা (বা ববি পিন)
কাঁচি এবং সেলাই মেশিন।
কিভাবে বানাবেন?
১/ দুটো সুতি কাপড়কে (১০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ৬ ইঞ্চি প্রস্থ) আয়তাকার আকৃতিতে কেটে নিন শক্ত বা ঘনভাবে বোনা কাপড় বা সুতির কাপড় [কটন শিট] ব্যবহার করুন কিছু না পেলে গেঞ্জি বা টি শার্টের কাপড় ব্যবহার করাও যেতে পারে। মাস্ক সেলাই করার জন্য এবার কাপড়ের খন্ড দুটিকে একসাথে করুন।
২/ দৈর্ঘ্যের বরাবর দুই ধারে ১/৪ ইঞ্চি করে ভাজ করে নিন এবং মুড়িয়ে সেলাই করে নিন। প্রস্থ বরাবর দুই ধারে আধ ইঞ্চি করে ভাজ করে দিন এবং সেলাই করে নিন
৩/ মাস্কের প্রস্থ বরাবর দুধারের চওড়া মুড়ি দিয়ে এবার ৬ ইঞ্চি লম্বা এবং ১/৮ ইঞ্চি চওড়া একটি ইলাস্টিক ফিতা ঢুকিয়ে দিন। এটি কানে পড়ার জন্য ফাস হিসেবে কাজ করবে। সেলাইয়ের জন্য বড় সুই অথবা ক্লিপ ব্যবহার করুন। ইলাস্টিক ফিতা নেই? এক্ষেত্রে মাথা বাধার রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করুন অথবা আপনার বাড়িতে যদি দড়ি জাতীয় কিছু থাকে তাহলে তা ব্যবহার করতে পারেন, মাথার পিছনে বাধার জন্য লম্বা করে নিতে পারেন ফিতাটি।
৪/ ইলাস্টিক ফিতাটিতে সুন্দর করে গিট বেধে নিন এবং তা টেনে নিয়ে মুড়িয়ে নেয়া অংশের ভিতর গুজে দিন। এবার ইলাস্টিক বরাবর মাস্কের দুই প্রান্ত কাছাকাছি নিয়ে আসুন যাতে মাস্কটি আপনার মুখের সাথে খাপ খেয়ে যায়। এখন ইলাস্টিক টি যেন জায়গা থেকে সরে না যায় সে জন্য সাবধানতার সাথে তা কাপড়ের সাথে সেলাই করে নিন।
সেলাইবিহীন কাপড়ের মাস্ক উপকরণ সমূহঃ
১। রুমাল, পুরনো গেঞ্জির কাপড় অথবা চারকোণা সুতির কাপড় (আনুমানিক ২০” X ২০” কাটুন)
২। রাবার ব্যান্ড (চুলের ব্যান্ড)
৩। কাঁচি (যদি আপনি আপনার নিজের কাপড় কেটে থাকেন)
বানানোর পদ্ধতিঃ
১। রুমালটির মাঝখানে সমান ভাবে ভাঁজ করুন।
২। রুমালটি উপরের ও নিচের থেকে দুটি অংশ রুমালটির
মাঝামাঝি জায়গায় এনে ভাঁজ করুন।
৩। দুইটি রাবার ব্যান্ড ৬ ইঞ্চি ব্যবধানে রুমালটিতে স্থাপন করুন।
৪। পাশ থেকে ভাঁজ করে মাঝখানে আটকে দিন।
যেসব বিষয়গুলো কাপড়ের মাস্কের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়ঃ
i) মুখে ঠিকমতো আটকানোর পাশাপাশি পরিধানে আরাম বোধ হবে।
ii) নাক এবং মুখ পুরোপুরি ঢেকে থাকবে।
iii) মাস্কটি কানের সাথে রাবার ব্যান্ড এর মাধ্যমে আটকে থাকবে।
iv) কাপড়ের একাধিক স্তর থাকবে।
v) বাধাহীন ভাবে শ্বাস নেয়া যাবে।
vi) কাপড়ের কোন ক্ষতি এবং আকারের পরিবর্তন ছাড়া ধোয়া এবং মেশিনে শুকানো যাবে।
কোভিড-১৯ এর ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সহ প্রতিদিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার একটি কার্যকরী উপায়। কাপড়ের তৈরি মাস্ক গুলোকে প্রতিবার ব্যবহারের পর ধুয়ে ফেলতে হবে। সঠিক নিয়মে মাস্ক খোলা ও মাস্ক খোলার পর হাত পরিষ্কার করার খুবই গুরুত্বপূর্ণ
যেভাবে পরিষ্কার করতে হবে-
ওয়াশিং মেশিন-
i) প্রতিদিনের ব্যবহার্য কাপড়ের সাথে মাস্ক ধোয়া যাবে।
ii) সাধারন ডিটারজেন্ট ও পানি যা দিয়ে দৈনন্দিনের কাপড় পরিষ্কার করা হয় সেটাই ব্যবহার করা যাবে।
হাতে পরিষ্কারের ক্ষেত্রে-
i) ব্লিচের একটি দ্রবণ নিম্নক্ত উপায়ে তৈরি করতে হবে-
ii) ৫ টেবিল চামচ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার্য ব্লিচ এক গ্যালন পানির সাথে মিশাতে হবে
iii) এক গ্যালনের ১/৪ অংশ পানির সাথে ৪ চা চামচ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার্য ব্লিচ মিশাতে হবে।
iv) ব্লিচের লেবেল পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে এটা জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য কিনা। কেননা বাজারে কাপড় রাঙানোর জন্য ব্লিচ পাওয়া যায় যা জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। এছাড়া ব্লিচের মেয়াদ আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার্য ব্লিচের সাথে কখনই অ্যামোনিয়া বা অন্য কিছু মেশানো যাবে না।
i) মাস্কটিকে ব্লিচ দ্রবনে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে
ii) ঠাণ্ডা বা কক্ষ তাপমাত্রার পানি দ্বারা মাস্কটিকে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে
মাস্ক শুকানোর নিয়ম-
ওয়াশিং মেশিন বা শুষ্ককরণ যন্ত্র দ্বারা-
i) সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় সম্পূর্ণরূপে শুকাতে হবে
ii) বাতাসে শুষ্ককরণের ক্ষেত্রে-
iii) সমানভাবে বিছিয়ে রাখে সম্পূর্ণরূপে শুকাতে হবে। সম্ভব হলে সরাসরি রৌদ্রের তাপে শুকাতে হবে।