প্ল্যাটফর্ম নিউজঃ ১৮ এপ্রিল, ২০২০
চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে চলছে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা। সেখানের চিকিৎসা কর্মীরা এখনো পাননি এন-৯৫ মাস্ক, দিন শেষে পাচ্ছেন না খাবারও। এমন অভিযোগ মিলছে হাসপাতালটিতে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে।
দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজ খরচে খাবার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত মাস্ক না থাকায় একজনের মাস্ক অন্যজন ব্যবহার করছেন। অথচ সরকারের তরফে বারবার বলা হয়েছিল, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনামূল্যে খাবার ও পর্যাপ্ত সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
বিআইটিআইডির সিনিয়র স্টাফ নার্স তার ফেসবুকে লিখেছেন,
‘সারারাত আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ শেষ নাস্তা করতে গিয়ে শুনি, নাস্তা নেই। বাজেট না থাকায় কর্তৃপক্ষ নাস্তা দিতে পারবে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, নিজের খাবার নিজেকে জোগাড় করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। এখন ছয়জনের জন্য দুটি এন-৯৫ মাস্ক রয়েছে। একজনের মাস্ক অন্যজন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আমাদের বাধ্য হয়ে তা করতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইসোলেশনে থেকে কি এখন আমরা খাবারের জন্য বাইরে ঘুরবো? আজকে এ পেশায় এসে কি খুব অপরাধ করে ফেলেছি? নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের সেবা দেয়াটাই কি আমাদের অপরাধ? পজিটিভ করোনা রোগী নিয়ে কাজ করছি অথচ এন-৯৫ মাস্ক পাচ্ছি না। আমরা কি আমাদের প্রাপ্য অধিকারটাও পাবো না?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘খাবার সরবরাহ দূরে থাক, যেসব স্বাস্থ্যকর্মী ইতোমধ্যে করোনা রোগীদের সেবা দিয়েছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়নি। আগে যারা সেবা দিয়েছেন, তারা এখনো বিআইটিআইডিতে আছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এমএ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আসলে করোনা চিকিৎসা ও ল্যাবে কর্মরতদের হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। তাদের বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সদের খাবার সরবরাহের জন্য আমরা কোনো ফান্ড পায়নি। তাই উনাদের নিজেদের খরচে মেসে খেতে বলা হয়েছে। পরে ফান্ড আসলে যার যার টাকা দিয়ে দেয়া হবে।’
করোনা থেকে বাঁচতে চিকিৎসক ও নার্সদের এন-৯৫ মাস্ক না পাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমারতো মনে হয় বাংলাদেশের কেউ এন-৯৫ মাস্ক পাননি। তবে কাছাকাছি মানের কেএম-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করছি আমরা।’
উল্লেখ্য, ১৬ এপ্রিলে চট্টগ্রাম বিএমএ সেক্রেটারি ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী তাঁর ফেসবুকের পোস্টে লিখেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গলা ফাটাইয়া বলতে চাই, চট্টগ্রামে কোথাও ১ টা এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয় নাই। গ্লাভস সংকট! পিপিই মান সম্মত নয়!”
করোনা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতি এরকম অবহেলা চলতে থাকলে চিকিৎসকরা হতাশ হবেন। নিরুৎসাহিত হবেন নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা।
স্টাফ রিপোর্টার/ শরিফ শাহরিয়ার