যে সমস্ত রোগ দূষিত পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বা ছড়িয়ে থাকে সে সমস্ত রোগ কে পানিবাহিত রোগ বলা হয়। এসব পানি বাহিত রোগের জন্য দায়ী মূলত ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের জীবাণু যেগুলো পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
আর এই জীবাণু গুলো খাবার/খাবার পানির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং নানান রোগের সৃষ্টি করে থাকে।
পানিবাহিত রোগের মধ্যে ডায়রিয়া, আমাশয়, পোলিও(ভ্যাক্সিনেশনের জন্য বর্তমানে এর প্রকোপ নেই বললেই চলে) , হিপাটাইটিস A ও হেপাটাইটিস E, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড ইত্যাদি অন্যতম।
বাংলাদেশে সংঘটিত রোগব্যাধির প্রায় ২৫% ই এসব পানিবাহিত রোগ। তাই খাবার পানির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সবাই কে অনেক বেশি সচেতন থাকা খুবই জরুরি। আমরা অনেক সময় রাস্তার পাশের দোকান/ফুটপাতে চটপটি, ফুসকা, নানান রকম শরবত পান করে থাকি যেগুলো তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা হয়। সুতরাং বাইরে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি নিজের ঘরের খাবার পানিও পুরোপুরি বিশুদ্ধ না করে পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে ভালো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং নিরাপদ পানীয় জলের অভাব আছে। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে যেখানে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করা খুবই সাধারণ ঘটনা। সুতরাং সেসব এলাকায় এসব পানিবাহিত রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে সাধারনত পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে,, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থায়ও নানা রকমের অপর্যাপ্ততা, ত্রুটিবিচ্যুতি, যথেষ্ট দেখভালের অভাব লেগেই থাকে।এছাড়া শহরাঞ্চলে ওয়াসা কর্তৃক সরবরাহকৃত পানি নিরাপদ হবার কথা থাকলেও নিম্ন-রক্ষণাবেক্ষণকৃত পয়ঃনিষ্কাশনের কারণে প্রায়শই এই পানি সরবরাহের সময় দূষিত হয়ে যায়।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে ঠিক এরকম ঘটনাই ঘটেছে। যার জন্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১। বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।
২। পানি ৩০ মিনিট ফুটিয়ে ফিটকিরি ব্যবহার করে অথবা পাঁচ লিটার পানিতে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করা
৩। হোটেল বা দোকানের পানি খাওয়া বন্ধ করা।
৪। এছাড়া রাস্তায় খোলা জায়গার শরবত, সালাদ, সস ও অন্যান্য খোলা খাবার খাওয়া বন্ধ করা
৫। এলাকায় কারও চোখ হলুদ হলে, ডায়রিয়া হলে বা তিনদিনের বেশি জ্বর থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
৬।হালিশহর বিডিআর মাঠ থেকে বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সংগ্রহ করা
৭। গর্ভবতী মহিলার চোখ হলুদ হলে স্থানীয় হাসপাতালে যোগাযোগ করা
৮।বাসার ছাদে বা পানির নিচে সংরক্ষিত পানির ট্যাংক চারমাস পরপর ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা
৯। খাবার খাওয়ার আগে ও মলত্যাগের পরে হাত অন্তত ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে ধোয়া
১০। হাতের নখ ছোট রাখা
১১। খালি পায়ে বাথরুমে না যাওয়া
১২। বাথরুমে আলাদা জুতা ব্যবহার করা
১৩। বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের পাত্রটির নিচের অংশ নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা
১৪। পাতলা পায়খানা হলে ওরস্যালাইন ও ঘরের তৈরি চিনি লবন মিশ্রিত শরবত বেশি বেশি পান করা এবং আতংকিত না হয়ে বিশুদ্ধ খাবারের পানি পান ও ব্যবহার করা।
এক সময় বলা হতো – পানির অপর নাম জীবন। আর এখন বলা হয়, “বিশুদ্ধ” পানির অপর নাম জীবন। কেননা অবিশুদ্ধ পানি যেকোনো মানুষের মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চা, গর্ভবতী মহিলা এবং বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে এই পানিবাহিত রোগ গুলো খুব মারাত্মক হয়ে ওঠতে পারে। সুতরাং বিশুদ্ধ পানি পান করুন, নিজেকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন।
লিখেছেন:
ডা. ফাহিম উদ্দিন আহমাদ
খুলনা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল।
জনস্বার্থে:
প্ল্যাটফর্ম