দীর্ঘদিন যাবত মানুষটি আই সি ইউতে ভর্তি ছিলেন। ভুগেছেন নানা রকম জটিলতায়। আজ বিকেল ৪.২৫ মিনিটে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাকে তাঁর কাছে নিয়ে যান। মনটা যে কী ভারাক্রান্ত লাগছে তা বর্ণনাতীত। জাতি কী এক অমূল্য সম্পদ হারালো তাও কল্পনাতীত। বাংলাদেশের মেডিকেল সোসাইটি হারালো তার সর্বোচ্চ অভিভাবককে। আল্লাহ উনার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন।
এম আর খান…
এই একটি নামের মাঝেই যে লুকিয়ে আছে কতো অনুপ্রেরণা, কতো শ্রদ্ধা, কতো ভালোবাসা, কতো সামনে এগিয়ে যাবার হাতছানি–তা বাংলাদেশের চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসা শিক্ষার্থী মাত্রই জানে। যদিও এই নামেই তিনি বেশি পরিচিত, তবে তার আসল নাম কিন্তু মোহাম্মদ রফি খান। ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট সাতক্ষীরায় এই প্রথিতযশা শিশু বিশেষজ্ঞের জন্ম। ১৯৫২ সালে কোলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তিনি এম আর সি পি, এফ আর সি পি, এফ সি পি এস, ডিসিএইচ ইত্যাদি ডিগ্রি লাভ করেন।
বড় বর্ণাঢ্য এই জাতীয় অধ্যাপকের কর্মজীবন। দেশে-বিদেশে নানা সময়ে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে শুরু করে অধ্যাপক হিসেবে নানা জায়গায় কাজ করেছেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালে অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি তার সুদীর্ঘ চাকুরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
চিকিৎসক হিসেবে তিনি যেমন অনন্য, মানুষ হিসেবেও তিনি অনেক মহান। পেনশনের টাকা দিয়ে মা ও শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন ডা. এম আর খান ও আনোয়ারা ট্রাস্ট। এ ট্রাস্ট থেকে শিশু স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অনুদান, হাসপাতাল ও স্কুল প্রতিষ্ঠা, মেধাবী ও গরিব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে ভালো অবদানের জন্য দেয়া হয় ডা. এম আর খান ও আনোয়ারা ট্রাস্ট স্বর্ণপদক।
শিক্ষা, চিকিৎসা, শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা, দুর্গত অসহায় মানুষের সেবাসহ সমাজকল্যাণমূলক কাজে অসামান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ডা. এম আর খানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক দেয়। এছাড়া তিনি ২০০৯ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান।
লিখেছেন ঃ ডাঃ মারুফ রায়হান খান