প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ এপ্রিল, ২০২১, বৃহস্পতিবার
১-৭ এপ্রিল, ২০২১ চিকিৎসক সপ্তাহ উপলক্ষ্যে “প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল সোসাইটি” এবং “বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট” কর্তৃক আয়োজিত এক সপ্তাহব্যাপী কার্যক্রমের সমাপনী ঘোষিত হয়েছে গতকাল। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল– “স্বাস্থ্যখাতের সকল অংশে চিকিৎসকদের সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত এক আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত।”
অনলাইন ভিত্তিক নানান আয়োজন ও দেশের মেডিকেল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মেডিকেল রিসার্চ বা গবেষণা কার্যক্রম প্রভৃতি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা সভায় মুখরিত ও আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে গত ৭ দিন যাবৎ পালিত “চিকিৎসক সপ্তাহ ২০২১” এর “সমাপনী ও চিকিৎসক পদক-২০২১ ঘোষণা” অনুষ্ঠানটি ৭ ই এপ্রিল ২০২১ রাত ৯:৩০ এ channelH1 ও প্ল্যাটফর্মের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেল হতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. মাে. এহতেশামুল হক চৌধুরী (মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল এসােসিয়েশন), ড. ফেরদৌসী কাদরী (সিনিয়র সাইন্টিস্ট ও হেড, মিউকোসাল ইমিউনোলজি ও ভ্যাক্সিনোলজি ইউনিট, সংক্রামক রোগ বিভাগ, আইসিডিডিআর, বি), অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা (সহ-সভাপতি, ট্রাস্টি বাের্ড, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট), অধ্যাপক ডা. মাে. রােকন উদ্দীন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট) এবং ডা. ফয়সাল বিন সালেহ (সভাপতি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সােসাইটি)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন দিলোয়ারা ইয়াসমিন প্রিয়া (সদস্য, প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি)।
অনুষ্ঠানে “প্ল্যাটফর্ম” ও “বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট” কর্তৃক আয়োজিত চিকিৎসক সপ্তাহের ভূয়সী প্রশংসা করেন অতিথিবৃন্দ। এ ধরনের অনুষ্ঠান দেশের চিকিৎসক সমাজের অবদান তুলে ধরবার জন্য এবং তাদের যথাযথ সম্মাননা প্রদানের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত বলেও মনে করেন তারা।
পরিশেষে, উক্ত অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হিসেবে চিকিৎসা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও ভূমিকার জন্য ১৬ ব্যক্তি ও ৩টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে প্ল্যাটফর্ম ও বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে চিকিৎসক পদক প্রদানের ঘোষণা করা হয়। ১৬ জন ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন ১৪ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী ও ১ জন সাংবাদিক। যারা এ সম্মাননা অর্জন করেন তারা হলেনঃ
১. অধ্যাপক ডা. খন্দকার মানজারে শামীম
চিকিৎসক
ব্যসিক এন্ড এলায়েড
২. অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম
চিকিৎসক
ব্যসিক এন্ড এলায়েড
৩. অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক
চিকিৎসক
মেডিসিন এন্ড এলায়েড
৪. অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক
চিকিৎসক
মেডিসিন এন্ড এলায়েড
৫. অধ্যাপক ডা. এ জেড এন মাইদুল ইসলাম
চিকিৎসক
মেডিসিন এন্ড এলায়েড
৬. অধ্যাপক ডা. মো. খলিলুর রহমান
চিকিৎসক
সার্জারি এন্ড এলায়েড
৭. ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী
চিকিৎসক
সার্জারি এন্ড এলায়েড
৮. অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী
চিকিৎসক
গাইনোকোলজি এন্ড এলায়েড
৯. অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম
চিকিৎসক
গাইনোকোলজি এন্ড এলায়েড
১০. অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার
চিকিৎসক
পেডিয়াট্রিক্স এন্ড এলায়েড
১১. অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ
চিকিৎসক
চিকিৎসা গবেষণা
১২. অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু
চিকিৎসক
চিকিৎসা গবেষণা
১৩. অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা
চিকিৎসক
ডেন্ট্রিস্ট্রি এন্ড এলায়েড
১৪. অধ্যাপক ডা. এম মনির হোসেন
চিকিৎসক
সমাজসেবা
১৫. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
হাসপাতাল
সরকারি পর্যায়
১৬. বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল
হাসপাতাল
বেসরকারি পর্যায়
১৭. হাইপারটেনশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার, রংপুর
সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান
সমাজসেবা
১৮. জেড আই খান (পান্না)
আইনজীবী
আইন
১৯. মোহসীন-উল হাকিম
সাংবাদিক
সাংবাদিকতা
উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. ফেরদৌস কাদরী বলেন, “চিকিৎসকদের প্রচেষ্টার কারণেই এখনো দেশে মৃত্যুহার কম রয়েছে। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এবং সরাসরি হাসপাতালে সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাঁরা যে পরিমাণ অবদান রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়।”
এছাড়াও প্ল্যাটফর্মের সদস্য তরুণ চিকিৎসকদের অবদান ও কার্যক্রম নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। পরিশেষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
উপস্থিত অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বলেন, “আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী মনে করছি যে চিকিৎসক সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরেছিলাম। দেশে প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত যে ১৭৯ জন চিকিৎসক করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। প্যান্ডেমিকের সময়ও চিকিৎসকরা যেভাবে নানান প্রতিকূলতা পার করে কাজ করে যাচ্ছে তা অবশ্যই অতুলনীয়। আমি অত্যন্ত গর্বিত এবং আনন্দিত যে চিকিৎসক পদকের মাধ্যমে আমরা কয়েকজন চিকিৎসককে সম্মানিত করতে পারছি।”
প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফয়সাল বিন সালেহ বলেন, “আজ আমাদের জন্য অনেক আনন্দের একটি দিন। মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সময়ে এমনকি করোনাকালেও চিকিৎসকদের অনেক অবদান ছিল। তাই ১-৭ তারিখ প্ল্যাটফর্ম এবং বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফার ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়। এরকম পদক প্রদান চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে কমন ছিলো না। আমরাই মনে হয় প্রথম শুরু করেছি। আমরা আরো যে চিকিৎসক সংগঠন আছে তাদের সাথে কথা বলে এটাকে কিভাবে মডিফাই করা যায় তা নিয়ে কাজ করব।”
পরবর্তীতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সম্মানিত মহাসচিব ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, “অনুষ্ঠানটির আয়োজক প্রতিষ্ঠান একটি চমৎকার কাজ করেছেন। যারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। একটি বিষয় সবার নজরে আনতে চাই, বাংলাদেশের সমসাময়িক করোনা ব্যবস্থাসহ ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের অনেক চিকিৎসক নিয়োজিত ছিল, এমনকি অনেক হাসপাতালের পরিচালকও অবদান রাখেন। তাই মাঠপর্যায়ে কাজ করা এসব চিকিৎসকদেরকে যাতে ভবিষ্যতে সম্মানিত করা হয় সে আশা করি।”
তিনি আরো বলেন, “দেশের মানুষের কাছে আশা ব্যক্ত করছি আমরা যারা এ অসময়ে কাজ করে যাচ্ছি তাদেরকে সাহায্য করবেন। শুধু দুঃসময়ে না, সুসময়েও চিকিৎসকদের স্মরণ করবেন। সরকারের কাছে আবেদন করব, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যাতে অনেক অর্থ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হয়। আমি বলব এ সরকার সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে অবদানের জন্য। তাই আমরা বাংলাদেশে এমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করবো যা বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়াবে।”
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মাে. রােকন উদ্দীন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট) বলেন- “মুজিবশতবর্ষে এবং স্বাধীনতার ৫০ তম বর্ষপূর্তিতে প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসিইটি ও বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর উদ্যোগে “চিকিৎসক সপ্তাহ-২০২১” আয়োজনের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী স্যারকে (মহাসচিব, বিএমএ); অভিনন্দন জানাচ্ছি সহ-সভাপতি, ট্রাস্টি বোর্ড, বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা ম্যামকে; বিশেষ অতিথি সিনিয়র সাইন্টিস্ট ও হেড, মিউকোসাল ইমিউনোলজি ও ভ্যাক্সিনোলজি ইউনিট, সংক্রামক রোগ বিভাগ, ড. ফেরদৌস কাদরী ম্যাম এবং সভাপতি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, প্ল্যাটফর্ম- ডা. ফয়সাল বিন সালেহকে। এছাড়াও গত ৭ দিন ব্যাপী দিন রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে যারা “চিকিৎসক সপ্তাহ -২০২১” কে সাফল্যমন্ডিত করতে নিরলস চেষ্টা করে গিয়েছেন “প্ল্যাটফর্ম” এবং “বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট” এর সে সকল সদস্য, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আরো অভিনন্দন জানাচ্ছি চিকিৎসক পদক-২০২১ প্রাপ্তদের বাছাই করবার কঠিন ও দুঃসাধ্য কাজটি যারা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন উক্ত কমিটিকে। আমি আশা রাখি, ভবিষ্যতে আমাদের চিকিৎসক সমাজের অভিভাবক সংগঠন “বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন” ও দেশের অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠন “চিকিৎসক সপ্তাহ-২০২১” এর মতো কার্যকরী ও ফলপ্রসূ অনুষ্ঠান আয়োজনে এগিয়ে আসবে। সেই সাথে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের চিকিৎসকসমাজের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সর্বশেষে চিকিৎসক পদক-২০২১ এর জন্য নির্বাচিত সকল চিকিৎসক, প্রতিষ্ঠান, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ।”