ভুল চিকিৎসার অভিযোগে চিকিৎসকদের হাত কড়া পরিয়ে থানা হাজতে রাখা অথবা কর্তব্যে অবহেলার জন্য হত্যা মামলা দেয়া হচ্ছে আহরহ । চিকিৎসক কর্মস্থলে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক দায়িত্বপালনরত অবস্থায় খুন হয়েছেন । বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার বিশ্বব্যাপী যে সুনাম, অর্জন সব কিছু প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন ঘটনা-দূর্ঘটনায় । হাসপাতালে পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই, দামী এন্টিবায়োটিকের বিনামূল্যে সরকারী সরবরাহ নেই, টাকা না দিলে ওয়ার্ড বয় ইউরিনের ব্যাগ পরিষ্কার করে না, এক্সরে মেশিন নষ্ট তাই পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে, ক্লিনিকের দালাল রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে-এসব অভিযোগের জন্য একজন চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হতে পারেন না । মুদ্রার অন্য পিঠে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়নকৃত সকল চিকিৎসকের উপস্থিত না থাকা, সময় নিয়ে প্রতিজন রোগী না দেখা-কথা না বলা, সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা অপ্রয়োজনীয় ইনভেস্টিগেশন দেয়া-সকল পেশার মত চিকিৎসা পেশায় হাতেগোণা কয়েকজন অসাধু ব্যক্তির অপকর্মের জন্য দায়ী হচ্ছে বাকী ৯০% চিকিৎসক । একদিকে ঔষধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অপারেশন বা চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্নিহিত ঝুঁকি, চিকিৎসা পরবর্তি স্বাভাবিক জটিলতাকে ভুল চিকিৎসা বলে সাধারণ মানুষের কাছে অপপ্রচার করা হচ্ছে অন্যদিকে হাতুড়ে ডাক্তার-কবিরাজ,ফার্মেসির দোকানদার, অনঅনুমোদিত ডিগ্রীধারী চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের অপচিকিৎসার মত বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে । এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসক এবং সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি অবস্থান এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মনে চিকিৎসকদের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবায় ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে না । প্রশাসনিক ত্রুটি, মিডিয়ার পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ, স্বাস্থ্য সেবায় কর্পোরেট এবং বিদেশী বাণিজ্যের জটিল সমীকরণে জনগণ মারমুখী হয়ে উঠছে, তরুণ চিকিৎসকেদেরও দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে । অসহিষ্ণু জনগণ, সদা-সর্বদা সৎ শ্রম দেয়া অথচ সুবিধা বঞ্চিত তরুণ চিকিৎসকদের অবমূল্যায়ন প্রতিদিনই দূর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে । বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুঃখজনক পরিস্থিতি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা, প্রাইভেট ক্লিনিক, ব্যক্তিগত চেম্বারে অনুরূপ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন চিকিৎসক, সেবাগ্রহীতা রোগী উভয় পক্ষই । এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের অতি আকাঙ্ক্ষিত একটি সংবাদ-“চিকিৎসক সুরক্ষা আইন আসছে” । বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া আজ ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন-“বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন DOCTOR’S PROTECTION LAW প্রণয়নে কাজ করছে । আগামীতে সুবিধাজনক সময়ে এই আইন পাশের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে । চিকিৎসকদের হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যাবে, হত্যা মামলা দেয়া হবে তা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়” । চিকিৎসকদের সুরক্ষায় আইন এখন সময়ের দাবী । শুধু চিকিৎসকদের জন্য নয়, চিকিৎসা পেশার সাথে সংবাদকর্মীদের বিদ্যমান পেশাগত দ্বন্দ্ব , সাধারণ মানুষের সাথে চিকিৎসকদের অবিশ্বাস দূরীকরণে সকলে একযোগে কাজ করবে, দায়ী যে বা যারাই থাকুক না কেন অসহায় রোগীদের ভোগান্তী কমবে , বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার মান বিশ্বসেরা হবে এই কামনা- “প্ল্যাটফর্ম” এর পক্ষ থেকে শেষ করছি , ডাঃ মোহিব নীরব ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে, ৩০/০৪/২০১৪
ডাক্তার সুরক্কা আইন নামে কোন আইন হতে পারেনা।একটাপেশাজীবি কম্যুনিটির নামে ক্যোন আইন অযৌক্তিক। শুধু চিকিতসক না, এখানে অন্তরভূক্ত হতে হবে ডাক্তার, নারস, করমচারি এবং হাসপাতাল স্থাপনা, স্বাস্ত্যহসেবার সাথে জড়িত সরকারী সম্পদফকে অন্তরভূক্ত করে।