চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ “প্ল্যাটফর্ম” এর সহযোগী “প্ল্যাটফর্ম রিসার্চ উইং” এর একটি চলমান গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৩-২০১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং চিকিৎসকদের ব্যাক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠানের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৫টি প্রতিষ্ঠানে মোট ১০২ বার(১৪/৮/১৫ তারিখ পর্যন্ত)।
11995428_1667362430216960_386034805_n
সর্বাধিক যে কারণগুলোয় চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেনঃ
১ রেফার করা রোগী উচ্চতর চিকিৎসা কেন্দ্রে না নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জোর পূর্বক
চিকিৎসা-১৬ বার,
এর মাঝে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী মারা যায় ৯ জন (সড়ক দূর্ঘটনা, বুক
ব্যথা, পানিতে ডোবা, শ্বাসকষ্ট, প্রসূতি)
২ রোগীকে জরুরী বিভাগ বা অন্তঃবিভাগে ইঞ্জেকশন প্রয়োগের পর মৃত্যু-১১ জন
৩ রোগী দেখতে দেরি হওয়া-৬ বার
৪ ক)এ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে (বিকল/ড্রাইভার না থাকা/দেরি করে আসা/না থাকা)-৫ বার
খ) মৃত ঘোষিত রোগী নড়ে উঠলে- ৫ বার
৫ ক) অন্তঃবিভাগে চিকিৎসক রাউন্ড দেবার সময় রোগীর এটেন্ডেন্টকে বাইরে যেতে
বলায়-৩ বার
খ) বিনা ফিসে/টিকিট না কেটে জোর করে চিকিৎসা নিতে বাঁধা দেয়ায়-৩ বার
গ) অক্সিজেন না দেয়ায়/না থাকায়/সরকারি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রাইভেট মাইক্রোবাসে
না দেয়ায়-৩ বার
৬ ক) জরুরী বিভাগে এক সঙ্গে একাধিক রোগী আসলে একজনকে চিকিৎসা দেবার মাঝে
আরেকজনকে চিকিৎসা দেয়ায়-২ বার
খ) জোর করে ইমার্জেন্সি চিকিৎসক ইনডোরে/আউটডোরের রোগী না দেখায়-২ বার
গ) চাঁদা না দেয়ায়-২ বার( একবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, আরেকবার ফুটবল কিনতে)
ঘ) মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া নিয়ে- ২বার
ঙ) সিরিয়াল ভংগ করে রোগী না দেখায়- ২বার
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেটের কলে পানি না থাকায়, চিকিৎসার পর তাৎক্ষণিক ব্যথা ভালো না হয়ায়, বাসায় গিয়ে রোগী দেখতে অপারগতা প্রকাশ করায়, মহিলা রোগীকে গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করায়, মৃত রোগীর মৃত্যু ঘোষণার জন্য ইসিজি করতে বলায়, কাগজপত্র সত্যায়িত করে না দেয়ায়, প্রেশার না মাপায়, যে রোগীর ভর্তির দরকার নেই তাঁকে ভর্তি দিতে অস্বীকার করায়, ফ্র্যাকচারের রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে ডিজিটাল এক্সরে করতে পাঠানোয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি পেতে সুপারিশ না মানা, ডেথ সার্টিফিকেট না দেয়ায় চিকিৎসককে মারধোর করা হয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ছিল। এছাড়া আইসিইউ এর বিল মেটানো, স্থানীয় প্রভাবশালীর প্রভাব বিস্তার, রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণেও হাসপাতাল আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে।
আক্রান্ত চিকিৎসকদের মাঝে, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ৩৮ জন, মেডিকেল অফিসার(সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক) ২৯ জন, দন্ত চিকিৎসক ২ জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১০ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ৭ জন, শরীয়তপুর জেলার সিভিল সার্জন, সিএ ২জন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৪ জন, অনারারী চিকিৎসক ৫জন। এ সময়ের মাঝে ৪টি প্রতিষ্ঠানের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা হামলার শিকার হয়েছেন। অপহৃত হয়েছেন ২ জন চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন ৫জন চিকিৎসক, দায়িত্ব পালনরত সময়ে খুন হয়েছেন ৩ জন।
প্ল্যাটফর্ম চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নানা প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। প্ল্যাটফর্ম রিসার্চ উইং এর একটি প্রজেক্ট ‘CARE FOR CARE GIVER’ এর কার্যক্রমের আওতায় উক্ত গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে।
( যে সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না বা রোগীর অননুমোদিত চিকিৎসা হচ্ছিল, যেখানে চিকিৎসক প্রশাসন কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সে সব ঘটনা বাদ রাখা হয়েছে)
ভাল উদ্যোগ….. প্রশ্ন হল আমাদের মধ্যে যারা সিনিয়র বা ক্ষমতাধর, তারা এতে কতটূকু নাড়া খাবেন?….. অথবা আমরা সিনিয়র হলে অথর্ব সিনিয়র সিন্ড্রোম এ আক্রান্ত হব কিনা….