২৪ অক্টোবর ২০১৯:
চিকিৎসক মশায় যেহেতু দেবতা নন, মানুষ, সুতরাং তিনিও মানসিক বিকারগ্রস্ততার উর্ধ্বে নন। সাধারণ মানুষের মতো চিকিৎসদেরও মানসিক রোগ হয়। দাড়ান দাড়ান মশায়, বিষয়টি জেনে আমার উপর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠার কারন নেই। আসুন গবেষণার আলোকে কথা বলি।
সময়ের দাবীতে বিভিন্ন গবেষণায় এ বিষয়টি কিন্তু উঠে এসছে। গবেষণা করেছেন খোদ বিজ্ঞ চিকিৎসকরাই। শুধু তাই নয়, আৎকে উঠার বিষয় হলো চিকিৎসকদের মধ্যে মানসিক রোগ সাধারণ মানুষের চেয়ে শতকরা ১০ থেকে ৩০ ভাগ বেশি।
চিকিৎসকদের মধ্যে যে কয়টি মানসিক রোগ সাধারণ মানুষ থেকে বেশি দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে প্রধান হলো এনজাইটি ডিসওর্ডার, ডিপ্রেশন, ড্রাগ এডিকশন, মাদকাসক্তি, প্রেস্ক্রিপশন মিস ইউজ, সুইসাইড ইত্যাদি।
আচ্ছা কারো ধারণা আছে, চিকিৎসকদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কেমন? কি মনে হয়?
জানলে অবাক হবেন, চিকিৎসক বা চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা, প্রচেষ্টা এবং হার সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশি।
লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ চিকিৎসক বা চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্ররা কোন না কোন সময়ে ডিপ্রেশনে ভুগে এবং তারা সুইসাইডের কথা চিন্তা করেন এবং সুইসাইড করেন।
কানাডা ও সুইজারল্যান্ডের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শতকরা ৮০ ভাগ চিকিৎসকই এই পেশার প্রতি বিতৃষ্ণা পোষণ করেন কোন এক সময়। প্রবল প্রতাপশালী দেশ আমেরিকান গবেষণায় উঠে এসেছে, চিকিৎসকদের মধ্যে সুইসাইড রেইট সাধারণ এর চেয়ে বেশি এবং ড্রাগ এব্যুজ প্রায় সাধারণ মানুষের মতই।
নিউজিল্যান্ড এতো সুন্দর দেশ। আহা, সোশ্যাল এডভান্টেজ অনেক অনেক সমৃদ্ধ। চিকিৎসকদের স্ট্যাটাস আকাশচুম্বী। তারপরও চিকিৎসকদের মধ্যে ডিপ্রেশন, এনজাইটি, ড্রাগ এব্যুজ সাধারণ জনগন এর চেয়ে ৩ গুন বেশি।
কি ব্যাপার, ভয়ে চুপসে গেলেন?
জানেন এসবের কারন কি? এর প্রধান কারন মানসিক রোগকে চিকিৎসকরা অবজ্ঞা অবহেলা করেন, সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হতে কার্পণ্য করেন। আরো অনেক রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। যেমন প্রচন্ড পরিশ্রমের তুলনায় প্রাপ্তিটা খানিকটা কম, এটাও একটা রিস্ক ফ্যাক্টর।
চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য দেই। চিকিৎসকদের মধ্যে এডজাস্টমেন্ট ডিসওর্ডার কিন্তু খুব বেশী এবং ডিভোর্স সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশী।
আসি আমাদের দেশে। আমাদের দেশে কি চিকিৎসকদের মধ্যে মানসিক রোগ আছে? থাকলে কেমন? কি পর্যায়ে আছে? বিষয়টি নিয়ে কোন গবেষণা হয় নি। এবং এ নিয়ে গবেষণা করার দুঃসাহস বা বুকের পাটা কারো হয় নি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন অবস্থা কি পরিমান ভয়াবহ হতে পারে!
ডা. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট
ডিএমসি, কে-৫২
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন