যেসব শিশুদের কে ছোটবেলা গরুর দুধ খাওয়ানো হয়, বড় হয়ে সেইসব শিশুদের ডায়েবেটিস ম্যালাইটাস হয়!!
এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত লিখেছেন, ডা. আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ ।
নিচে গরুর দুধ খেলে কেন ডায়েবেটিস হবে, সেটার মেকানিজম সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করে দেখাই
আমরা তো সবাই Protein, carbohydrate, fat ইত্যাদি ইত্যাদি খাই। তাই না??
তো আমরা জানি খাওয়ার পর Protein, carbohydrate, lipid গুলা কিন্তু intact অবস্থায় intestine থেকে Absorption হতে পারে না। প্রথমে ডাইজেশন হয়ে ছোট ছোট অংশে ভেঙ্গে তারপর Absorption হয়।
যেমন প্রোটিনের কথাই বলি। যত যাই প্রোটিন খাওয়া হোক, প্রোটিন কিন্তু Absorption হয় না। প্রথমে ভেঙ্গে ছোট ছোট Amino acid কিংবা dipeptide এ পরিণত হয়। তারপর ই Absorption হয়ে দেহে প্রবেশ করে। আমাদের দেহ তখন Amino acid গুলাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেহের জন্যে প্রযোজ্য প্রোটিন তৈরি করে!
মূল কথাটা কিন্তু এখনো বলি নাই। এখন বলবো। তবে সেটা বলার আগে একটা প্রশ্ন করেই ফেলি। প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে মেকানিজম টা বুঝতে সুবিধা হবে।
প্রোটিন গুলা ভাঙ্গার দরকার কী ছিলো? সৃষ্টিকর্তা সরাসরি প্রোটিন Absorption এর সিস্টেম দিয়ে দিলেই তো পারতেন??
হুম সৃষ্টিকর্তা সেটা পারতেন। তবে তখন কী হত??
আপনি হয়তো মুরগির মাংশ খেয়েছেন। তখন মুরগির প্রোটিন আপনার দেহে ঢুকে কোন কাজ করতে পারতো না।
এইজন্যে মুরগির প্রোটিন ভেঙ্গে Amino acid হয়। সেটা পরে অন্যভাবে বিন্যস্ত হয়ে তৈরি করে মানুষের প্রোটিন!!
এইজন্যে গরুর দুধ খাইলে আমাদের দেহে গরুর প্রোটিন জমা হবে না, হাঁসের ডিম খেলে আমাদের দেহে হাঁসের প্রোটিন জমা হবে না। মানুষের প্রোটিন ই হবে
যাক সে কথা। মেকানিজম টা বলে ফেলি??
তার আগে আরো একটা জিনিস বলা দরকার, না হলে কিছু কনফিউশন রয়ে যাবে!
কেউ কেউ মনে মনে বলছেন, “আব্দুল্লাহ তো দেখি ভালো বিটলামী শুরু করছে!! সহজ কথারে শুধু প্যাঁচাইতেছে!!”
আরে বলবো তো। মেকানিজম টা বুঝাতে এই জিনিসটা লাগবেই।
যাই হোক কন্টিনিউ করি
একটা শিশুর জন্মের পর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। যেকোন ইনফেকশনে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
তো এই অবস্থায় শিশু যাতে ইনফেকশনের সাথে লড়াই করতে পারে সেজন্যে আল্লাহ এক সুন্দর ডিজাইন করলেন।
মায়ের বুকের দুধে দিয়ে দিলেন Immunoglobulin বিশেষ করে IgA
IgA শিশুকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
যদিও IgA mainly surface immunity provide করে, তবে কিছু অংশ দেহেও প্রবেশ করে!
একটা প্রশ্ন!! IgA জিনিসটা কী??
একটা প্রোটিন
তাহলে তো এটা সরাসরি Absorption হবে না। এটা প্রথমে ভেঙ্গে Amino acid হবে, তারপর ই Absorption হবে
, এটাই তো নিয়ম, তাই না??
কিন্তু immunoglobulin যদি ভেঙ্গেই যায়, তাহলে তো সে আর Immunoglobulin থাকলো না, রোগের সাথে লড়াই করবে কীভাবে??
অার ভাঙ্গা Amino acid জোড়া লাগিয়ে নতুন Immunoglobulin তৈরি করার ক্ষমতা ছোট শিশুর নাই। থাকলে কি আর মায়ের দুধের মাধ্যমে IgA ট্রান্সফ্রারের বুদ্ধি করার দরকার ছিলো??
তাহলে উপায়??
আল্লাহ সেটার জন্যেও ডিজাইন করলেন।
জন্মের পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত শিশুর intestine, Digestion ছাড়াই প্রোটিন Absorption করে।
অর্থাত যেসব প্রোটিন শিশু খাবে সেটা ভেঙ্গে এমিনো এসিডে পরিণত হবে না, বরং সরাসরি Endocytosis এর মাধ্যমে Intact অবস্থায় Absorption হয়ে যাবে।
[biochemistry by satyanarayana, 3rd edition, page172]
তাহলে শিশু কোন ঝামেলা ছাড়াই মায়ের দুধের ইমিউনোগ্লোবিন পেয়ে ইনফফেকশনের সাথে টিসুম টিসুম লড়াই করবে!!
এখন আসি মূল কথায়!
এতক্ষণে কী বললাম??
জন্মের পর কিছুদিন পর্যন্ত শিশু প্রোটিন না ভেঙ্গে সরাসরি absorption করে।
এখন কোন শিশুকে যদি গরুর দুধ খাওয়ানো হয়, তাহলে??
গরুর প্রোটিন গুলা শিশুর দেহে ঢুকবে!!
তাতে কী হবে?? শিশু বড় হয়ে গরু হয়ে যাবে??
আরে নাহ।
গরুর দুধের একটা প্রোটিন হলো, Bovine serum albumin
তো সেটা তো শিশুর দেহে ঢুকে পড়লো।
পরবর্তীতে কিছুটা বড় হয়ে গেলে, শিশুর দেহে Immunity develop করে গেলে, শিশুর ইমিউন সিস্টেম সেই Bovine serum albumin কে ফরেন বডি মনে করে সেটার বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করবে। এন্টিবডি সেই গরুর প্রোটিন ধ্বংস করবে।
এতটুকু হলে তো ভালো ছিলো। কিন্তু না, কাহিনী আরো আছে।
গরুর সেই প্রোটিন আর আমাদের দেহের প্যানক্রিয়াসের বিটা Cell এর একটা প্রোটিন দেখতে অনেকটা একই রকম।
ফলে গরুর সেই প্রোটিন টার বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি Pancreatic beta cell কেও ধ্বংস করে ফেলে।
আর বিটা সেল থেকে কী আসে?? রসমালাই?
না না। ইনসুলিন আসে!!
সো প্যানক্রিয়াটিক বিটা সেল ধ্বংস হতে থাকলে Insulin তৈরি হওয়া আস্তে অাস্তে কমে যাবে।
ফলে দেখা দিবে ডায়েবেটিস ম্যালাইটাস
এইজন্যেই ছোটবেলা যেসব শিশুদের গরুর দুধ খাওয়ানো হয়, তাদের বড় হয়ে ডায়েবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
[Davidson’s principles & practice of medicine, 22nd edition, page: 804]
ডায়েবেটিস এর এটা কিন্তু মাত্র একটা কারণ। আরো কিছু কারণ আছে। সেটা না হয় অন্যদিন বলবো
বাচতে হলে জানতে হবে।
ধন্যবাদ লেখাটি শেয়ার করার জন্য।