জনগন ও একজন ডাক্তার- ১

লিখেছেন ঃ ডাঃ মুহসিন আব্দুল্লাহ মু ,মেডিকেল অফিসার, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল 
লেখনির সময় ঃ আগস্ট ৩, ২০১১ 

ফ্যাক্টরি অচল । কয়েকদিন থেকে মেশিন চলছে না । বিকল মেশিন কোনভাবেই সারাতে পারছে না ফ্যাক্টরির লোকেরা । উত্‍পাদন বন্ধ । বড় বড় অর্ডার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে । এভাবে চলতে থাকলে দেউলিয়া হয়ে যাবে কোম্পানি । ব্যাংকের লোন পরিশোধ করা যাবে না । শ্রমিকরা বিক্ষোভ করবে ।

 

বাধ্য হয়ে ফ্যাক্টরির ম্যানেজার একজন বিশেষজ্ঞ ইন্জিনিয়ার ডাকলেন । বিশেষজ্ঞ ভালোভাবে সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন একটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় একটি পেরেক খুলে গেছে । তিনি কর্মচারীদের দেখিয়ে দিলেন এবং সেখানে পেরেকটি মেরে দিতে বললেন । যথাস্থানে পেরেকটি লাগানোর পরই আবারও মেশিন চালু হলো ।পরদিন বিল পাঠানো হলো ১ লাখ টাকা । মালিক বেঁকে বসলেন । মাত্র একটা পেরেক ঠুকানোর জন্য এক লাখ টাকা ! তিনি বিল ফেরত পাঠালেন ।পরদিন বিশেষজ্ঞ নতুন করে বিল পাঠালেন । পেরেক ঠুকানো বাবদ ১ টাকা । আর পেরেক কোথায় লাগাতে হবে সেটা খুঁজে বের করা বাবদ ৯৯৯৯৯ টাকা ! এবার ফ্যাক্টরি মালিক কোন উত্তর খুঁজে পেলেন না ।

 

পোস্টের শিরোনামের সাথে গল্পটি মিলিয়ে বুদ্ধিমান পাঠক এতক্ষণে হয়তো আসল কথাটি বুঝে ফেলেছেন । ঠিকই ধরেছেন , আজকের বিষয় ডাক্তারের ফি । ডাক্তারের ফি নিয়ে অনেককেই উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় । এদের মধ্যে ‘বুঝদার’ লোকের সংখ্যাও কম নয় । নিজে কোটি টাকার মালিক , ব্যবসায় আসল দামের দ্বিগুন মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করে মার্সিডিজ বেন্জে ঘোরেন । ডাক্তারের ফি টা দেয়ার বেলায়ই কেবল তার পকেটে টান পড়ে ! এইতো সেদিন রেস্টুরেন্টে বসে একজন ডাক্তারদের চৌদ্দ দুগুনে আঠাশ গোষ্ঠীর কুষ্ঠি উদ্ধার করলেন । এই পোস্টের কমেন্টেও হয়তো অনেকেই কাজটা করবেন । ‘ওনাদের’ মহা ক্ষোভ । ‘ওমুক কার্ডিওলজিস্ট এর কাছে গেলাম , পালস আর ব্লাড প্রেসার মেপে ইসিজিটা দেখে ১০ মিনিটের মধ্যে কিনা কি লিখে ছেড়ে দিলো । বিল নিলো ৫০০ টাকা । ডাহা জোচ্চুরি !’

ওনাদের এটুকু বলা প্রয়োজন মনে করছি – মামা কি দরকার ছিলো কার্ডিওলজিস্টের কাছে যাবার ? মুদি দোকানে গেলেই পারতেন ! দোকানদার আপনাকে দশঘন্টা ধরে চেকআপ করে লজেন্স দিতো , মজা করে সেটাই খেতেন !

এই বেকুবের দলকে আবার দেখবেন মেন্জ ক্লাবের শার্ট আর ক্যাটস আইর ক্যাপ মহানন্দে কিনছে । শৈল্পিক থেকে পান্জাবি । মহিলারা কে ক্রাফট থেকে ওয়ান টু থ্রিপিছ কিনছে । যেটার উত্‍পাদন খরচ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা । সেটাই বিনা প্রশ্নে কিনছেন ওনারা ১৫০০ টাকায় । শোরুম থেকে বের হয়ে আফসোস করেন । ইস্ নতুন ক্যাটালগে একটা চরম ডিজাইন আসছে । আর কিছু টাকা থাকলে ওটাও নিতাম ! ‘ওনাদের’ জন্য আর বেশি কিছু বলতে চাই না । শুধু এটুকু বলবো , যে ছেলেটা আজকে কার্ডিওলজিস্ট হয়েছে সে এমনি এমনি হয়নি । আপনি যখন বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন তখন সে হাসপাতালে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে । আপনি যখন মুভি দেখে সময় কাটিয়েছেন , তখন তার সময় কেটেছে বইয়ের পাতায় আর অপারেশন থিয়েটারে । এমনি করেই সে জীবনের অনেক স্বাদ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে কমপক্ষে ৪০ বছর নষ্ট করেছে । এমবিবিএস করার পরও এমডি , এফসিপিএস ইত্যাদি ডিগ্রি নিয়েছে । এখনো দিনেরাতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে মানুষকে ।

 

 

 

পরবর্তী পর্ব ‘জনগন ও একজন ডাক্তার- ২….আসছে সামনেই … চোখ রাখুন।

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ইন্টার্নীদের বেতন বৃদ্ধির দাবীতে প্রাইম মেডিকেল কলেজে কর্মবিরতি

Tue Sep 27 , 2016
সরকারী নির্দেশনা অনুসারে চলতি বছরে ইন্টার্নীদের বেতন ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার করা হয়েছে। বেতন বাড়ানোর দাবীতে আজ সোমবার টানা তৃতীয় দিনের কর্মবিরতিতে রয়েছে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবীস চিকিৎসকেরা। প্রাইম মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা প্ল্যাটফর্ম প্রতিনিধিকে জানান, নতুন আইন অনুযায়ী ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা বেড়ে পনেরো হাজার গতমাস থেকে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo