প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ জুন, ২০২২, শুক্রবার
ডা. হুমায়ূন কবির
প্রজেক্ট রিসার্চ ফিজিশিয়ান, আই সি ডি ডি আর, বি।
আর যাই করেন, অন্তত টাকা ধরবার পর সাবান, স্যানিটাইজার বা ডিটারজেন্ট দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন। এই টাকায় ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ারা কিলবিল করে বলা চলে।
ধরুন, একজন ডোম কোনো পঁচা গলা লাশ কাটছে কোনো মর্গে। গলিত সে লাশে কোটি কোটি ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া।
কিছুক্ষণ পর সে ডোমের একটা সিগারেট খেতে মন চাইল। একটা ডার্বি সিগারেট কেনার জন্য হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট বের করে কাউকে পাঠাল। সেই টাকা দিয়ে দোকানদারের কাছ হতে সিগারেট আনা হল। টাকায় লেগে থাকল লাশের গন্ধ, উচ্ছিষ্টাংশ, কোটি কোটি ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া।
আপনি আমি যেমন টপাটপ মরে যাই, ব্যাক্টেরিয়ারা তেমন মরে না। ভাইরাস তো মরেই না, অমর। এমনও দেখা গেছে, এন্টার্কটিকার বরফ গলে হাজার হাজার বছর আগের ভাইরাস বেরিয়ে এসে জীবন্ত হয়েছে।
এই ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়াগুলো টাকায় রয়ে যায় বহুদিন, বহুবছর। উপযুক্ত পরিবেশ, পরস্থিতি পেলে এরা পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করে দেয়।
ডোমের দেয়া সেই পাঁচ টাকার নোট বহু হাত ঘুরে একদিন আপনার হাতে এলো। সেই পাঁচ টাকা দিয়ে আপনি দোকান থেকে কিছু কিনলেন। এরপর হাত না ধুয়েই চেটেপুটে খেলেন সে খাবার।
পূর্বেই বলেছি, উপযুক্ত পরিবেশ পরিস্থিতি পেলে এই ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাসগুলো জেগে ওঠে, নব উদ্যমে কাজ শুরু করে দেয়।
আপনার পাকস্থলি বা অন্ত্র এসব অণুজীবের জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক জায়গা। এরা ফুলেফেঁপে বংশবিস্তার শুরু করে দেয় আপনার ভেতরে।
এদের কেউ কেউ ক্যান্সার উৎপন্ন করে আপনাকে মেরে ফেলে, কেউ ডায়রিয়া বাঁধিয়ে আপনাকে মেরে ফেলে, কেউবা আবার অন্যান্য রোগে আপনাকে মেরে ফেলে।
আপনাকে মেরে ফেলে মূলত এমন সব ক্ষুদ্র জীব বা জড় কিংবা জীব অথবা জড় কোনোটাই না, যাদের আপনি খালি চোখে দেখতেও পান না।
শৌর্যবীর্যে ভরা পরাক্রমশালী আপনার মৃত্যু ঘটে সৃষ্টিজগতের সবথেকে ক্ষুদ্র প্রাণীদের হাতে। ভাবা যায়!
এভাবেই পাঁচ টাকা, দুই টাকা বা আরও ক্ষুদ্র কিছুর বিনিময়ে আমরা আমাদের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করছি প্রতিনিয়ত।