যে মানুষটা আকাশের নক্ষত্র হয়ে গেছে
আমি তাঁর কথা বলছি
-ডাঃ শাকিলা মুরাদ।
আকাশ ভরা অসংখ্য নক্ষত্রের ভিড়ে,
প্রতি রাত্রে আমি একটা নক্ষত্রকে খুজি। আমার জীবন
নক্ষত্র। ডাঃ মুরাদ আমার স্বপ্নের রাজপুত্র। অথচ
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। এক
রাত্রে কতগুলো নরপশুর থাবায় ছিন্ন-ভিণ্ন
হয়ে সে নিজেই আকাশের তারা হয়ে গেল। মাত্র নয়
মাসে আমার জীবন নক্ষত্র খসে পড়ল।
ডাঃ মুরাদের স্মৃতি আমার জীবনে অমলিন। অসমান্য
মানবিয় বোধ
মানুষটাকে স্বামী হিসাবে কাছে পাওয়ার সৌভাগ্য
আমার হয়েছিল। অথচ সেই সৌভাগ্য দুভার্গে্ পরিণত
হতে বেশী সময় লাগেনি। গোটা পরিবার সহ আমার
সকল ভালবাসার – সকল ত্যাগের
প্রতিশ্রুতি তাকে আমার
কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।
আমি নিজে একজন ডাক্তার। আমার স্বামী মুরাদ, সেও
একজন ডাক্তার ছিল। যারা তাকে নির্মম
ভাবে হত্যা করে, সেই হত্যাকান্ডকে ভিন্ন
খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করল,
তারা কি ডাক্তার? সম্ভবত না। ডাক্তার
নামধারী অমানুষ অথবা কসাই।
সেই দিনটিকে আমি কোনদিন ভুলবো না। 6ই ডিসেম্বর
2013 তারিখে চিকিৎসার জন্য একটা মেডিকেল টিমের
সাথে সে গিয়েছিল পটুয়াখালী জেলার গলাচিপায়।
সারা রাত থেমে থেমে ফোনে কথা হয়েছিল।
ভোরবেলায়ও ফোনে কথা হলো। স্বভাব সুলভ ভাবেই
মুরাদ ছিলো গুছানো, সৎ, নির্ভীক আর প্রতিবাদী।
গলিাচিপায়
কি একটা অস্বাভাবিকতা তাকে উদ্বেলিত করেছি।
ফোনে এমনটাই সে আমাকে বলেছে। কথা বলার এক
পর্যায়ে সে আমাকে বলেছিল- সুমি ফোনটা রাখ কিছু
লোক আসছে। তারপরই ফোনটা বন্ধ। ফোন আর
খোলেনি। দু-দিন পর মুরাদের ক্ষতবিক্ষত দেহ
পাওয়া গেল পাশের একটা পুকুরে।
আমি সারা জীবন এই একটা প্রশ্নের উত্তর খুজব-
কে সেই দিন আসছিল; কি হয়েছিল? মুরাদ কার আসবার
কথা বলেছিল?
এই আমি, আমার পরিবার, সংসার, আশা-
আকাঙ্খা সবকিছু ঐ জানোয়ারেরা নষ্ট করে দিয়েছে।
ডাক্তার মুরাদের মা-বাবা তাদের একমাত্র
সন্তানকে হারিয়েছে। এদেশ
হারিয়েছে প্রতিশ্রুতিশীল একজন চিকিৎসক।
প্রতিদিন আমি একটা সম্ভাবনা নিয়ে ঘুম
থেকে জেগে উঠি। একটা নতুন ভোরের প্রতিক্ষা করি।
যে ভোরে আমি পত্রিকার
পাতা খুলে দেখতে পাবো ডাক্তার মুরাদের খুনীদের
ফাঁসির রায় হয়েছে। আমার এই চওয়াটা কী খুব
বেশী কিছু??????