ডাক্তার না কসাই?

লিখেছেন:
মোঃ ইমরান হাসান, যশোর মেডিকেল কলেজ
(প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক পেজের ইনবক্স থেকে পাওয়া)

কিছুদিন আগে শখের বসে একটি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস নিতে গেছিলাম।
ক্লাসে ঢুকে প্রথমেই সবাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তোমরা বড় হয়ে কে কি হতে চাও?”
প্রত্যুত্তরে দেখলাম ৭০ শতাংশ ছেলেমেয়েই বলল তারা ডাক্তার হতে চাই।

হ্যাঁ, প্রিয়বন্ধু;
আমি এমন বাংলাদেশের একজন সন্তান যেখানে কিনা ডাক্তার দেখানোর শেষে ভিজিট দেবার সময় তাকে কষাই বলে গালি দেওয়া হয় অথচ বাসায় ফিরে সন্তানকে পড়তে বলা হয় যাতে বড় হয়ে সে ডাক্তার হতে পারে।
১২ টি বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম,কঠোর সাধনার বাধা পেরিয়ে একটি ছেলে এডমিশন টেস্টে উপনীত হয়।
লাখো মেধাবীকে টপকে তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গুটিকতক ছাত্রকে বেছে নেওয়া একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট আমি।
দিনকে রাত আর রাতকে দিন করে লাইফের প্যারাময়তাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট এর কন্টকময় জীবন।
তরুণেরা যখন জীবনের সোনালি যৌবন উপভোগে মত্ত, তখন আমরা বোনসের ডেসক্রিপশন পড়ায় ব্যস্ত।
ব্যক্তিগত শখ,আহ্লাদ,স্টাইল ভুলে কড়া নিয়মের বেড়াজালে বন্দী থাকে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট।
এতটা সংগ্রাম করে পাস করা একজন ডাক্তারের সম্মান কতটুকু?
কতটুকু মর্যাদা দিয়েছে এই সমাজ ডাক্তারদেরকে?
একজন ৩য় শ্রেণির সিপাহি পুলিশকে দেখলে মানুষ ভয় পেয়ে সালামের পর সালাম দেয়।স্যার-স্যার বলে একাকার করে ফেলে।
অথচ সদ্য চেম্বারে বসা ডাক্তারটিকেও পাতি মাস্তানকে চাঁদা দিতে হয়।
পুলিশ ঘুষ নিলে সেটা হয় স্বাভাবিক।আর একজন এফসিপিএস কমপ্লিট ডাক্তার ৫০০ টাকা ভিজিট ফিক্সড করলে সেটা হয় ডাকাতি।আমি সেই হতভাগা ভবিষ্যৎ ডাক্তার।

কোনো রোগীর মৃত্যু হলে, “সাংবাদিকের সহজ লেখনী -ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু।”
আচ্ছা সাংবাদিকরা কি এমবিবিএস পাস করে সাংবাদিকতায় ঢুকেছেন নাকি, যে চিকিৎসকের ভুল সঠিক নির্ণয় করেন!!
বর্তমান সময়ের অন্যতম অভিশাপ হলুদ সাংবাদিকতা।
সাংবাদিকদের সম্ভবত বর্তমানে খবরের খুব সংকট চলছে!
তাই কিছু একটা পেলেই যাচাই বাচাই না করেই কৌতুক রচনা করেন।
আম জনতা তাহাকে অটল সত্য ভাবিয়া লাফালাফি শুরু করে দেয়।
পরিণামে আমকে আমলকি বানিয়ে আমাদেরকে সবাই চেনে কষাই হিসাবে।
এই যে সাংবাদিক বন্ধু, কখনো ডাক্তারদের সফলতার গল্প কি কোনো পত্রিকায় আজও বড় করে তুলে ধরেছেন?
নাকি অন্যের সফলতার গল্প বলতে হিংসা হয়??
যদি আপনি কাউকে কখনো মেরে না থাকেন তবে ডাক্তার ধরে মারতে পারেন।কারণ ডাক্তার মারলে তার কোনো বিচার হয় না।
রোগীর মৃত্যু হলে কোনো কারণ ছাড়াই রোগীর স্বজনেরা গায়ে হাত তোলেন নীরিহ ডাক্তারের উপর।
উনাদের আচরণ দেখলে মনে হয়, মানুষ কখনো মরে না।
আজ পর্যন্ত অগণিত ডাক্তারকে মারধোর করার প্রমাণ আছে।কিন্তু কতজন অপরাধীর বিচার হয়েছে জানা নেই।

কোনো মহিলা ডাক্তারকে উত্যক্ত করলে সেটাকে বলা হয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা।আপনাদের কাছে ডাক্তারের ফিশ কমানোটায় মূল ঘটনা।
গ্রামের আদিম পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা দেওয়া কষাই গোত্রের একজন আমি।আমি এমন একটি পেশায় যেতে চলেছি যেখানে কিনা দোষ না করেও শাস্তি পেতে হয়।
মুহূর্তেই সবুজকে হলুদ বানানো হয় হাতে কলম থাকার জন্য।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই, “হাতে কলম আছে বলেই যা খুশি লেখার অধিকার আপনার নেই।
যে কলম আপনার হাতে আছে সে কলম আমরাও ধরতে জানি।
হসপিটালের গন্ডি পেরিয়ে প্রয়োজনে আমরাও রাজপথে নামতে পারি।
ব্লেডকে ব্লেড বলুন, তাকে রঞ্জিত করে স্পেড বানাবেন না।

আর হ্যাঁ পরিশেষে সবার উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই, “আপনি যদি মানুষ হোন তো আমরা ডাক্তার; আর আপনি যদি পশু হোন তবে আমরা কসাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কি খাবো এবং কখন খাবো..

Fri Mar 17 , 2017
কি খাবো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কখন খাবো সেটা আরও গুরুত্বপূর্ণ….. আমি খুবই স্বাস্থ সচেতন, আমি কবে খাসির মাংস খেয়েছি বলতে পারবো না। সপ্তাহে এক বা দুইদিন মুরগী খাই আর মাছ ও সবজি প্রতিদিন খাই, কোন মিষ্টি, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাই না। 2 মাস আগে খেয়াল করলাম আমার খুব ক্ষুধা লাগে। রাতে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo