প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার
বিশাল বড় বড় ব্যানার হয়ত এরই মধ্যে বানানো হয়ে গিয়েছে, শোক পালনের জন্য কালো ব্যজও রেডি, বিশাল লম্বা মানববন্ধন হবে! বিএমএ, স্বাচিপ এর প্রেস রিলিজও আসবে “হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি”! ২-৩ দিন ফেসবুক গরম থাকবে! কিন্তু তারপর?
নেতারা করোনার মত গুরত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন! সিনিয়র ডাক্তাররা ভাববেন, “আমি তো জেলা/উপজেলার সময় পার করেই ফেলসি। রাস্তায় নামার বয়সও তো নাই! খামাখা ঝামেলা করে লাভ কি?”। আর জুনিয়র ডাক্তাররা এসব দেখে কয়েকদিন হতাশ হয়ে চিল্লাচিল্লি করবে। বেশী আন্দোলন করতে গেলে থ্রেট খাবে। কয়েকদিন পর উনারাও চুপ। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। আর সময় অপেক্ষা করতে থাকবে আরেকজন ডা: রকিব খানের জন্য!
ডা: আবদুর রকিব খান। বয়স ৫৭ বছর। নিজের ক্লিনিকে কম খরচে রোগীদের সেবা দিতেন বলে এলাকায় তিনি “গরিবের ডাক্তার” বলে পরিচিত ছিলেন। উনার ভুল ছিল একটাই। উনি এই করোনাকালেও উনার ক্লিনিক খোলা রেখেছিলেন রোগীদের সেবার জন্য। ভুলের মাশুল হিসেবে নিজের প্রানটাই দিয়ে দিতে হল। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে পেশেন্ট পার্টির হামলা। অত:পর মৃত্যু। আচ্ছা রোগীর আত্নীয়স্বজনরাই যদি বলে দিতে পারে কোনটা ভুল চিকিৎসা আর কোনটা ঠিক তাহলে এদেশে ডাক্তারদের কি দরকার? রোগীর আত্নীয়স্বজনরাই যদি ডাক্তারের বিচার করে তাইলে দেশে আইনের কি দরকার? ডাক্তারদের কি এমন কোনো বিশেষ ক্ষমতা আছে যা দিয়ে ১০০% রোগীকে সুস্থ করা যায়?
ভারতের কোলকাতায় একজন ডাক্তারের উপর হামলা হয়েছিল গতবছর। জবাবে প্রফেসর থেকে শুরু করে জুনিয়র ডাক্তাররা গনহারে চাকরি থেকে রিজাইন দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। মমতা দি’র থ্রেটেও ওইদিন কোনো কাজ হয় নি। এমনকি রোগীরাও সেদিন ডাক্তারের পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এক কোলকাতা থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে যায় গোটা ভারতে। তার ফল হিসেবে তারা পায় স্বাস্থ্যসুরক্ষা আইন। এখন ভারতে ডাক্তার, নার্স এদের গায়ে কেউ হাত তুললে ডিরেক্ট ৭ বছরের জেল! ভারতে তা সম্ভব হলে আমার দেশে কেন সম্ভব হবে না! আর কতকাল মাইর খাইতে হবে? ডাক্তার পিটানো এখন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এইটা এই দেশে এখন একটা ট্রেন্ড!
ডা: রকিব এর এই অকাল মৃত্যুর পরেও যদি এদেশে ডাক্তারের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয় তাহলে মনে হয় না এই সমস্যার সমাধান আর কোনোদিন হবে। জিনিসগুলা এভাবেই চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভালো কেউ আর ডাক্তার হতে চাইবে না। অযোগ্য ডাক্তার তৈরী হবে দেশে। যারা ভালো আছে তারাও দেশ ছেড়ে পালাবে।
তাওসিফ আহমেদ সাজিদ
৫ম বর্ষ
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ