আপনি কি জানেন- যুক্তরাস্ট্রে এমবিবিএস বলে কোন ডিগ্রী নেই? যুক্তরাজ্যে জেনারেল প্র্যাকটিস করতে হলে আপনাকে ৫ বছরের স্নাতকত্তোর ট্রেইনিং শেষ করতে হবে? কানাডায় মেডিকেল স্টাডিস-এ প্রবেশ করতে হলে আপনাকে ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করতে হবে- এই তথ্য কি আপনার জানা ছিল?
আমাদের মাঝে পাশ্চাত্যের মেডিকেল পড়াশোনা নিয়ে কৌতুহল থাকলেও বিষয়টি নিয়ে কখনও ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়নি। তাই ভাবলাম, বিষয়টি একটু পড়ি। পড়ে অনেক কিছুই জানা হল। চলুন দেখি, পাশ্চাত্যের ডাক্তারি পড়ালেখার ধরণ কেমন-
এই প্রবন্ধে মূলত যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল এডুকেশন নিয়ে আলোচনা থাকবে। সাথে, বাংলাদেশ থেকে যে চিকিৎসকরা এসব দেশে যেতে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের পথপরিক্রমা সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে। আমাদের দেশের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের মধ্যে থেকে যারা দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী, তারা সাধারাণত এই ইংলিশ স্পিকিং দেশগুলোতেই যাওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসাবিদ্যা যেহেতু মানুষের সাথে সম্পর্কিত সেহেতু বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা তাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মেডিকেলে এডুকেশনকে সাজানোর চেষ্টা করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশভেদে মেডিকেলে পড়াশোনার নিয়মের কিছুটা পার্থক্য আছে।
যুক্তরাস্ট্র
যুক্তরাস্ট্রে মেডিকেল আণ্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম চার বছরের। এটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুল দ্বারা পরিচালিত হয়। এ প্রোগ্রামে ঢোকার শর্ত হল- অন্য যে কোন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে। তবে, একজন মেডিকেল ভর্তিচ্ছু ছাত্রকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হলে উক্ত বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করাকালীন এসোসিয়েশন অব অ্যামেরিকান মেডিকেল কলেজেস কতৃক নির্ধারিত কিছু কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে আছে- রসায়ন দুই বছর (যার এক বছর জৈব রসায়ন), এক বছরের জীববিজ্ঞান এবং এক বছরের ফিজিক্স। রসায়ন ও জীববিজ্ঞান কোর্সে সেলুলার বায়োলজী, ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, মলিকিউলার বায়োলজি এবং জেনেটিক্স রাখার উপদেশ দেয়া হয়। এছাড়া স্কুল ভেদে সুনির্দিষ্ট ‘বিষয়ের’ শর্তাবলীর পার্থক্য আছে।
একজন ছাত্র এই প্রি-মেডিকেল শর্তাবলী পূরণ করলে মেডিকেল কলেজ এডমিশন টেস্ট (এম,সি,এ,টি) দিতে পারে। মেডিকেল স্কুলে চান্স পাওয়া নির্ভর করে ছাত্রের প্রি-মেডিকেল কোর্সের একাডেমিক রেকর্ড, এম,সি,এ,টি-র ফলাফল, অন্যান্য প্রি-মেডিকেল এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটি(যা ছাত্রের মেডিসিন-এর প্রতি আগ্রহকে স্পষ্ট করে), বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার এবং ইন্টারভিউ-এর ফলাফল ইত্যাদির উপর।
মেডিকেল স্কুল থেকে যে ডিগ্রী দেয়া হয় তার নাম ডক্টর অব মেডিসিন (এম,ডি) অথবা ডক্টর অব অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন (ডি,ও)। মেডিকেল স্টাডিকে স্কুলভেদে চার থেকে পাঁচ বছরের পড়াশোনায় ভাগ করা হয়। প্রথম দু’বছর বেসিক সায়েন্স এবং পরের তিন বছর ক্লিনিক্যাল ক্লার্কশিপ। প্রথম দুই থেকে তিন বছর যে বিষয়গুলো কাভার করতে হয় সেগুলো হল- এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, হিস্টোলজি, এমব্রায়োলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথোলজি, প্যাথোফিজিওলজি, নিউরোসায়েন্স ইত্যাদি। তবে, কারিকুলাম আমাদের দেশের মত সাবজেক্টভিত্তিক সাজানো হয় না বরং সিস্টেম ভিত্তিক (যেমন: ব্রেইন এণ্ড বিহেভিওর, কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম প্রভৃতি)সাজানো হয়। ফলে, একজন ছাত্রের প্রথম থেকেই রোগী ও রোগ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ হয়। এগুলো পড়া শেষ হলে একজন ছাত্র ইউনাইটেড স্টেটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সাম তথা ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ওয়ান দিতে পারে। এরপর কোন একটি টিচিং হসপিটালে তিন বছরের ক্লার্কশিপে প্রবেশ করতে হয়। এ সময় মেডিসিন, সার্জারী, পেডিয়াট্রিক্স, ফ্যামিলি মেডিসিন, গাইনোকোলজি ও অবস্টেট্রিক্স, নিউরোলজি এবং সাইকিয়েট্রি ওয়ার্ডে রোটেশন হয়। এর পাশাপাশি কিছু ইলেকটিভ সাব-স্পেশালিটিতেও ক্লার্কশিপ সম্পন্ন করতে হয়। (কোনো কোনো স্কুল জয়েন্ট পোগ্রাম পরিচালনা করে, যেখানে মেডিকেল সায়েন্সের পাশাপাশি রিলেটেড বিষয়ে পিএইচডি, মাস্টার্স ইত্যাদি করার সুযোগ থাকে) পড়াশোনার চতুর্থ বছরের শেষে মেডিকেল ছাত্ররা সাধারণত ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট টু পরীক্ষা দেয়।
ক্লিনিক্যাল ক্লার্কশিপ শেষে একজন ছাত্র এম,ডি বা ডি,ও ডিগ্রী অর্জন করেন, কিন্তু প্র্যাকটিস করতে পারেন না। প্র্যাকটিস করার লাইসেন্স পেতে হলে তাকে কমপক্ষে এক বছরের ইন্টার্ণশিপ এবং নির্দিষ্ট স্পেশালিটিতে (তথা বিষয়ে) রেসিডেন্সি শেষ করে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ত্রি তথা লাইসেন্সিং পরীক্ষা দিতে হয়। এরপরই কেবল একজন প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করেন।(প্রসঙ্গত, যুক্তরাস্ট্রের অল্প কিছু প্রদেশে এক বছরের ইন্টার্ণশিপ শেষে মেডিসিন প্র্যাকটিস করার সুযোগ আছে।)
রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ চান্স পাওয়া নির্ভর করে ন্যাশনাল রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রামের উপর। এটি একটি কম্পিউটার চালিত প্রোগ্রাম যেখানে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট টু পাশ করা ডাক্তারদের রেসিডেন্সিতে ঢুকার আবেদন ও টিচিং হাসপাতালের বিভিন্ন স্পেশালিটিতে শূণ্য রেসিডেন্সি পদের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে ডাক্তারদের ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়। যেহেতু রেসিডেন্সি পদ কম এবং আবেদন অনেক বেশী থাকে, ফলে এই ম্যাচিং প্রোগ্রামটি অনেক শক্ত হয়। অনেক আবেদনকারীকেই তাদের ইচ্ছেকৃত স্পেশালিটিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। আবার, অনেককে তাদের ইচ্ছে পরিবর্তন করতে হয়। রেসিডেন্সির ম্যাচিং-এর সময় যে প্রভাবকগুলো কাজ করে তা হল: আবেদনকারী ক্রমানুসারে যে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে ইচ্ছুক তার লিস্ট, আবেদনকারীর ইউ,এস,এম,এল,ই পরীক্ষার নম্বর, আলফা-ওমেগা-আলফা (সংক্ষেপে এ,ও,এ) মেম্বারশিপ, ক্লিনিকাল ক্লার্কশিপের গ্রেড, রিকমেণ্ডেশন লেটার, ক্লাসে মেধাক্রম, রিসার্চের অভিজ্ঞতা, কোন স্কুল থেকে এম,ডি পাশ করেছে, আলাদা কোন যোগ্যতা (যেমন রিলেটেড বিষয়ে মাস্টার্স করা থাকলে তা) ইত্যাদি।
বিষয়ভেদে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এর ডিউরেশন তিন বছর থেকে শুরু করে দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে। সংক্ষেপে বললে, ইন্টারনাল মেডিসিন-এ তিন বছর এবং জেনারেল সার্জারীতে পাঁচ বছর ট্রেইনিং করতে হয়। কেউ যদি মেডিসিনের সাবস্পেশালিটি এবং সার্জারীর সাবস্পেশালিটিতে ডিগ্রী করতে চান, তার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫ বছর ফেলোশিপ টেইনিং করতে হয়। ট্রেইনিং শেষে একজন ডাক্তার তার স্পেশালিটিতে বোর্ড সার্টিফিকেশন-এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এরপর তাকে উক্ত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।(একে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ত্রি-ও বলা যায়) পরীক্ষা পাশ করলে উক্ত স্পেশালিটির বোর্ড সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।
যারা জেনারেল ফিজিশিয়ান হতে চান তারা কি করবেন? প্রদেশভেদে এই বিষয়টিতে পার্থক্য আছে। কোন কোন প্রদেশে একবছর ইন্টার্ণশিপ ট্রেইনিং-এর পর প্র্যাকটিস-এর সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ প্রদেশেই এখন জেনারেল প্র্যাকটিস করতে হলে ফ্যামিলি মেডিসিন বিভাগে তিন বছর রেসিডেন্সি ট্রেইনিং করতে হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাস্ট্রে জেনারেল প্র্যাকটিশনার শব্দটি উঠে গেছে। তার পরিবর্তে এদেরকে বলা হচ্ছে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান।
যে সকল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েট যুক্তরাস্ট্রে স্যাটল হতে চান, তাদেরকে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ওয়ান এবং পার্ট টু(সি,কে ও সি,এস) পাশ করে রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করতে হয়। সে হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে যে সকল মেডিকেলে স্টুডেন্ট যুক্তরাস্ট্রে যেতে আগ্রহী তাদেরকেও একই পথে চলতে হবে। পার্ট ওয়ান পরীক্ষা মেডিকেলের চতুর্থ বছর শেষেই দেয়ার সুযোগ আছে। পার্ট ওয়ান এবং টু সি,কে দু’টো পরীক্ষাই বাংলাদেশে আমেরিকান এম্বেসিতে দেয়া যায়। পার্ট টু সি,এস যুক্তরাস্ট্রে গিয়ে দিতে হয়। পার্ট টু সি,এস পাশ করার পর রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করার পর শুরু হয় ন্যাশনাল রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রাম-এ নাম আসার জন্য অপেক্ষা করার পালা। নাম আসলে পড়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়। এরপরই একজন ক্যানডিডেট রেসিডেন্সিতে ঢুকতে পারে। রেসিডেন্সিতে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী ছাত্রদের ই,ইউ,এস,এম,এলই-তে অনেক ভাল করা (অর্থাৎ প্রায় ৯৯ পারসেন্টাইলে থাকা) জরুরী । নইলে সাধারণত রেসিডেন্সি পাওয়া যায় না। কারণ, এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রাম। তবে পরীক্ষার রেজাল্ট পারসেন্টাইলের দিকে দিয়ে সামান্য কম হলেও, যদি যুক্তরাস্ট্রের সিটিজেনশিপ থাকে(অথবা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হয়) অথবা কোন সিটিজেন তাকে স্পন্সর করে(তথা অভিভাবক হওয়ার দায়িত্ব নেয়), তাহলে রেসিডেন্সি ম্যাচ করার সম্ভাবনা বাড়ে।
প্রসঙ্গত, রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ সাপ্তাহিক কর্মঘন্টা সাধারণত ৮০ ঘন্টা বা তার বেশী। প্রত্যেক সপ্তাহে টানা ছত্রিশ ঘন্টার একটা ডিউটি থাকবেই। বছরে তিন সপ্তাহের একটি ভ্যাকেশন বাদে পার্সনাল ছুটি ছয় দিন পর্যন্ত নেয়া যায় (ইন্সটিটিউশন ভেদে পার্থক্য থাকতে পারে)। প্রতিষ্ঠানভেদে বাৎসরিক স্যালারী ন্যূনতম ৪০০০০ ডলার থেকে শুরু। প্রতি বছর পর স্যালারী কিছুটা বাড়ে।
এশিয়ান ডাক্তাররা শুধু এশিয়ান রুগীদের চিকিৎসা দিতে পারে।
কানাডা
কানাডার মেডিকেল এডুকেশন প্রায় যুক্তরাস্ট্রের মেডিকেল এডুকেশন সিস্টেমের মত। কানাডার লাইসেন্সিং পরীক্ষার নাম মেডিকেল কাউন্সিল অব কানাডা কোয়ালিফাইং এক্সামিনেশন (এম,সি,সি,কিউ,ই)। পার্ট দু’টো। ইউ,এস,এম,এল,ই-র মত দ্বিতীয় পার্টের ক্লিনিকাল নলেজ(সি,কে) অংশটি নেই। কানাডাতেও মেডিকেল স্কুলে ঢোকার শর্ত হল একটি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হবে। মেডিকেল কারিকুলাম চার বছরের। প্রথম দুই বছর প্রি-ক্লিনিকাল এবং পরের দুই বছর ক্লিনিকাল ক্লার্কশিপ। প্রি-ক্লিনিকাল শেষে পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দিতে হয়। ক্লার্কশিপ শেষে এক বছর ইন্টার্ণশিপ করার পর পার্ট টু পরীক্ষা দেয়া যায়। পার্ট টু পাশ করলে ডক্টর অব মেডিসিন (কানাডায় ডি,ও নেই) সার্টিফিকেশন দেয়া হয়। কিন্তু প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে যুক্তরাস্ট্রের মতই রেসিডেন্সি ট্রেইনিং শেষে বোর্ড সার্টিফিকেশন এক্সাম দিতে হয়। এমনকি ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান হতে হলেও দুই বছরের উক্ত বিভাগে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং করতে হয়। অন্যান্য বিষয়ে রেসিডেন্সির সময়সীমা বিষয়ভেদে যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন ভার্সিটির মতই।
একজন ছাত্র ইচ্ছে করলে রেসিডেন্সি প্লাস পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে, তাকে কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হয় (যেমন: রিসার্চ-এ অংশগ্রহন করার অভিজ্ঞতা)।
কানাডার ডাক্তারদের ৫ বছর পর পর রিসার্টিফিকেশন করতে হয়। এটি পরিচালিত হয় মেইনটেনেন্স অব সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম দ্বারা, যা কন্টিনিউইং মেডিকেল এডুকেশন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত। রিসার্টিফিকেশনের জন্য একজন ফিজিশিয়ানের কার্যাবলী আপডেট রাখতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। (উল্লেখ্য, এই প্রবন্ধে উল্লিখিত সবগুলো দেশেই এই নিয়ম বিভিন্ন মাত্রায় চালু আছে।)
যুক্তরাস্ট্র বাদে অন্যান্য দেশের ডাক্তারদের কানাডায় চিকিৎসক হতে হলে প্রথম শর্ত হল, কানাডার সিটিজেনশিপ থাকা বা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়া বা ওয়ার্ল্ড হেল্দ অর্গানাইজেশন রেফুজি হিসেবে কানাডায় থাকা। দ্বিতীয় শর্ত হল, যে দেশ থেকে মেডিকেল সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছে সে দেশে প্র্রাইমারী ল্যাঙ্গুয়েজ ইংলিশ হওয়া অথবা সেটা না হলে আইইএলটিএস-এর চারটি ধাপের প্রত্যেকটিতে স্কোর কমপক্ষে ৭ থাকা। এই শর্তগুলো পূরণ হলে একজন মেডিকেল গ্রাজুয়েট এম,সি,সি,ই,ই (তথা মেডিকেলে কলেজ অব কানাডা ইভ্যালুয়েটিং এক্সাম) পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবে। পরীক্ষাটির সেন্টার ইণ্ডিয়ায় আছে, বাংলাদেশে কানাডা এমবেসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার সেন্টারও বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরীক্ষায় পাশ করলে ন্যাশনাল এসেসমেন্ট কোলেবোরেশন অবজেক্টিভ স্ট্রাকচারড ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন (সংক্ষেপে এন,এ,সি-ও,এস,সি,ই)পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষাটি ইন্টারন্যাশনাল গ্রাজুয়েটদের এসেস করার জন্যই আয়োজন করা হয়। এই পরীক্ষাটি দিতে হয় কানাডায়।
এরপর আসে রেসিডেন্সি ম্যাচিং-এর পালা। রেসিডেন্সি ম্যাচিং-এ আবেদন করার আগে ক্লিনিক্যাল এসেসমেন্ট প্রোগ্রাম-এ অংশ নিলে, ম্যাচ করার সম্ভাবনা বাড়ে। এই প্রোগ্রামে একজন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েট (আইএমজি)-কে হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের তত্বাবধানে আট সপ্তাহের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় এবং তার কাজের উপর স্কোরিং করা হয়। অত:পর রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করতে হয়। রেসিডেন্সি ম্যাচ হলেই কেবল রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ প্রবেশ করা যায়।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের ডিগ্রী মূলত এম,বি,বি,এস । তবে ইনস্টিটিউট ভেদে এই ডিগ্রী বিভিন্ন নাম ধারণ করতে পারে, যেমন: এম,বি,সিএইচ,এস; এম,বি,বি,সিএইচ ইত্যাদি । এম,বি,বি,এস পাঁচ বছরের কোর্স। তবে কোন কোন মেডিকেল স্কুল এখন চার বছরের এম,ডি ডিগ্রীও দিয়ে থাকে। মান এবং কারিকুলাম একই। তবে চার বছরের কোর্সে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেশী। আমেরিকা-কানাডার মত মেডিকেলে ভর্তির জন্য গ্র্যাজুয়েশন থাকা জরুরী নয়। বরং, হাইয়ার সেকেণ্ডারী এডুকেশন পার করার পর পরই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা (ইউনাইটেড কিংডম ক্লিনিক্যাল এপটিচুড টেস্ট অথবা বায়োমেডিকেল এডমিশন টেস্ট)দেয়া যায়। এম,বি,বি,এস-এর পাঁচ বছর সময়কালকে আগে প্রি-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল এই দু’ভাগে ভাগ করা হত। প্রি-ক্লিনিক্যাল ছিলো পুরোপুরি লেকচারভিত্তিক এবং সাবজেক্টভিত্তিক(অর্থাৎ এনাটমি, ফিজিওলজি.. এভাবে)। ক্লিনিক্যাল-এর সময় ছাত্রদের লেকচারভিত্তিক এবং রোগীভিত্তিক শিক্ষা দেয়া হতো। তবে, এখন প্রায় প্রতিটি স্কুলে এই পদ্ধতি পরিবর্তন করে, শরীরের বিভিন্ন তন্ত্র(সিস্টেম)-ভিত্তিক কারিকুলাম সেট করা হচ্ছে এবং সেই সাথে ‘প্রবলেম বেজড লার্নিং’ পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন ভার্সিটিতে পাঁচ বছর সময়কালকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। কোন স্কুলে এক-তিন-এক বছর, কোন স্কুলে দুই-দুই-এক বছর ইত্যাদি।
এম,বি,বি,এস শেষ করার পর একজন ছাত্রকে দুই বছর মেয়াদী ‘ফাউণ্ডেশন ইয়ার’-এ প্রবেশ করতে হয়। এক বছর ইন্টার্ণশিপ (যাকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইয়ার এক বলে) এবং এক বছর রেসিডেন্সি (যাকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইয়ার দুই বলে)। রেসিডেন্সি শেষ করার পর একজন যদি জেনারেল প্র্যাকটিশনার(জি,পি)হতে চায়, তাকে জেনারেল প্র্যাকটিস-এ আরও তিন বছরের পোস্টগ্রাজুয়েশন ট্রেইনিং নিতে হয়। আর যারা অন্য কোন স্পেশালিটিতে যাবে তাদের বিষয়ভেদে কমপক্ষে পাঁচ বছরের মত অতিরিক্ত ট্রেইনিং নিতে হয়। ট্রেইনিং প্রক্রিয়াটি সুনির্দিষ্ট নিরিক্ষাপদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়। ট্রেইনিং শেষে একজন কনসালটেন্ট হিসেবে গন্য হয় এবং তারপরেই কেবল স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করার জন্য সার্টিফিকেট পেতে পারে।
ইউরোপিয়ান ওয়ার্কিং টাইম ডাইরেকটিভ (ই,ডাব্লিউ,টি,ডি) ইউরোপে একজন জুনিয়র ডাক্তারের কর্মঘন্টা নির্ধারণ করে দিয়েছে সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা। কিন্তু এটি নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষের আপত্তি আছে। পূর্বে জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল (জি,এম,সি) কর্তৃক নির্ধারিত ওয়ার্কিং আওয়ার ছিল ৫৬ ঘন্টা, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ইণ্টার্ণদের ডিউটি আওয়ার সপ্তাহে ১০০ ঘন্টাও ছাড়িয়ে যেত। ই,ডাব্লিউ,টি,ডি নির্ধারণের পরে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মঘন্টা কমিয়ে ৪৮ ঘন্টা করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স পেতে হলে প্রথম ধাপ হল- প্রফেসনাল এণ্ড লিঙ্গুইস্টিক এসেসমেন্ট বোর্ড (সংক্ষেপে পি,এল,এ,বি বা প্ল্যাব) পরীক্ষা দিতে হবে। প্ল্যাব পরীক্ষার প্রথম পত্র বাংলাদেশ থেকে দেয়া যায় এবং দ্বিতীয় পত্রটি (প্র্যাকটিকেল এসেসমেন্ট)ইংল্যাণ্ডে গিয়ে দিতে হয়।
প্ল্যাব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন ট্রেইনিং-এর জন্য আবেদন করতে পারে। যুক্তরাজ্যে ম্যাচিং প্রোগ্রাম জাতীয় কোন প্রক্রিয়া নেই। স্বাভাবিক ভাবেই অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে ট্রেইনিং-এ চান্স পাওয়া সহজ হয় (যেমন: যুক্তরাজ্যের পরিচিত ডাক্তার থেকে রিকমেণ্ডেশেন লেটার)।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল ডিগ্রী প্রধানত এম,বি,বি,এস। তবে, কোন কোন মেডিকেল স্কুল এম,ডি ডিগ্রীও দেয়। স্কুল ভেদে মেয়াদকাল চার থেকে ছয় বছর। মেডিকেল স্কুলে চান্স পেতে হলে দুটো পথ আছে। কলেজ (অর্থাৎ সেকেণ্ডারী স্কুল) পেরিয়ে ঢুকতে হলে আন্ডারগ্রাজুয়েট মেডিকেল এডমিশন টেস্ট (ইউ,জি,এম,টি) এবং গ্রাজুয়েট হয়ে ঢুকতে গ্রাজুয়েট মেডিকেল এডমিশন টেস্ট (জি,এম,এ,টি) দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। মেডিকেল কারিকুলাম যুক্তরাজ্যের মতই। তবে অস্ট্রেলিয়ায় একটি সুবিধে হল অন্যান্য দেশের মত জেনারেল প্র্যাকটিশনার হতে হলে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং জরুরী নয়। বরং এক বছর ইন্টার্ণশিপ শেষে স্বাধীনভাবে জেনারেল প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাওয়া যায়। কেউ যদি স্পেশালিটিতে ক্যারিয়ার করতে আগ্রহী হয়, তাকে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এর জন্য এপ্লাই করতে হবে। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যের মত এখানেও কোন রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রাম নেই।
বাংলাদেশের তরুণ ডাক্তারদের মধ্য থেকে যারা অস্ট্রেলিয়া যেতে আগ্রহী তাদেরকে প্রথমেই এ,এম,সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে।(উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় রেজিস্ট্রেশন পেতে কয়েকটি পাথওয়ে আছে। তন্মধ্যে, বাংলাদেশী তরুণ ডাক্তারদের জন্য কেবল স্ট্যাণ্ডার্ড পাথওয়ে প্রযোজ্য। এজন্য এখানে স্ট্যাণ্ডার্ড পাথওয়েটাই সংক্ষেপে বলা হল।) এ,এম,সি তথা অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল দু’টো ভাগে পরীক্ষাটি নেয়। প্রথমটি মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন যার নাম সি,এ,টি এম,সি,কিউ এক্সামিনেশন। এটি পাশ করলে পরের পার্টটি দুই ভাবে দেয়া যায়- ‘এ,এম,সি ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন’ অথবা ‘ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্ট’। প্রথম পার্টের সেন্টার ইণ্ডিয়ায় আছে (কোলকাতায় নেই)। দ্বিতীয় পার্ট অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েই দিতে হয়। যারা ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন দিবেন তাদের পরীক্ষা এক দিনে সম্পন্ন হয়। আর, যারা ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্ট-এ অংশ নেবেন তাদেরকে এএমসি পার্ট ওয়ান পাশ করার পর মেডিকেল বোর্ড অব অস্ট্রেলিয়া থেকে লিমিটেড রেজিস্ট্রেসন অর্জন করতে হবে। এরপর নিজ দায়িত্বে (অর্থাৎ সিভি সাবমিট করে, সরাসরি যোগাযোগ করে বা অন্য কোন উপায়ে) অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল অনুমোদিত কোন হাসপাতালে জব নিতে পারলে, কাউন্সিল বরাবর এপ্লিকেশন করে ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্টের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।
এএমসি পাশ করার পর টিচিং হাসপাতালে ইণ্টার্ণশিপের জন্য আবেদন করতে হবে। লক্ষ্যনীয় যে, বাইরের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইণ্টার্ণশিপের পজিশন আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে, পজিশনের জন্য প্রতিযোগীতা বেড়ে গেছে। ইণ্টার্ণশিপ শেষ হলে প্র্যাকটিস-এর লাইসেন্স পেতে আবেদন করতে হয়ে। কিন্তু, লাইসেন্স পাওয়ার অন্যতম আরেকটি শর্ত হল- পারমানেন্ট রেসিডেন্সি থাকা। অস্ট্রেলিয়ার স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার লিস্টে চিকিৎসক না থাকায়, রেসিডেন্সির পাওয়ার একমাত্র উপায় হল ইন্টার্ণশিপ শেষে আবেদন করা। লক্ষ্যনীয়, রেসিডেন্সির আবেদনের ক্ষেত্রে ভিসার রকমভেদে অতিরিক্ত শর্তাবলী আছে। সুতরাং, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বিয়ে করার চেয়ে সহজ কোন উপায় এ পথে নেই।
নিউজিল্যাণ্ডে আই,এম,জি-দের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অস্ট্রেলিয়ার মতই।
পরিশেষে
এ লেখার মধ্য দিয়ে যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল পড়াশোনা সম্পর্কে আমরা সংক্ষেপে জানতে পারলাম। তবে বেশ কিছু জিনিস এই আর্টিকেলে ওঠে আসেনি, যেমন: মেডিকেল স্কুলে পড়ার বিশাল খরচ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের প্রয়োজনীয় ধাপগুলোতে খরচ, ভিসা নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি। তারপরও, প্রবন্ধটি পাশ্চাত্যের মেডিকেল পড়ালেখা সম্পর্কে অনেকের কৌতুহল কিছুটা হলেও মেটাতে পারবে বলে আশা রাখছি।
লেখকঃ ডাক্তার আব্দুল্লাহ সাইদ খান
লেখাটি তৈরী করতে যে ওয়েবসাইটগুলোর সাহায্য নেয়া হয়েছে:
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_the_United_States
২. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_Canada
৩. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_the_United_Kingdom
৪. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_Australia
৫. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_the_United_States
৬. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_the_United_Kingdom
৭. http://en.wikipedia.org/wiki/Residency_(medicine)
৯. http://imgbc.med.ubc.ca/path-to-residency/
১২. http://people.howstuffworks.com/becoming-a-doctor12.htm)
thanks for this post … Singapore N Japan PG/ or any degree er jonno BMDC approved kono Uni ache naki…. can u post about that?? i mean in which countries have bmdc approved uni for PG.
Oh… sorry admin .. i got my ans in ur another article …… thanks …
বিএমডিসি স্বীকৃত ডিগ্রি সমূহের লিস্ট কিছু দিনের মধ্যে আলাদা পোস্টে দেয়া হবে।
Ami mph somporkey jan tey chai pls bolen
Is it true that the mrcs degree is not approved by bmdc? Shei khetre mrcs kore bangladeshe practice, job pawa and promotion e ki problem hobe?
now i m in MRCP course..after completing MRCP, can i get xtra benefit from MRCP to get post graduate degree from australia or canada
To Dr Khan
I think you should know correctly before you post any information at the Facebook page.i am not aware of Canadian , UK or US medical system , so unable to comment about your post but can tell well about Australian medical system .
Who told you that you can practice independently as a general practitioner after internship .
You need to finish intern and one year residency (they call it RMO) before you can apply for GP registration but again u need to enrol with RACGP college . You must need to pass RACGP fellowship exam before consider yourself as a full GP and obviously the exam is not that easy.
Again they way you have written about AMC and getting internship after passing AMC , things are not that simple and easy .
f
F
f