আপনি দিনমান বসে বসে অফিস করেন । বাসায় ফিরে টিভির সামনে পড়ে থাকেন । বোকার বাক্সটাতে একঘেয়ে লাগার পরে নেট খুলে বসেন । ফেসবুক মেইলে যখন খোঁচাখুঁচি করার আর কিছু বাকী থাকেনা তখন আবার টেলিভিশন । ফাকে এটা খান, ওটা খান, চিপস চাবান, কোক পেপসি গিলেন । কখনো সোফার মধ্যেই মাঝ রাতে ধড়মড় করে ঘূম থেকে উঠে দেখেন টিভির ভিতর টকশোতে কারা যেন হাউকাউ করতেছে।
ফলশ্রুতিতে যদি এমন হয়, মেজাজ আপনার নিত্যতিরিক্ষি, রেগে যান অল্পতেই । মগজটা কেমন যেন ধোঁয়াশাময়, মন দিতে পারেন না ঠিকমতো । চেহারায় দুখুদুখু ভাব । আর বসে থেকে থেকে মেদ ভূড়ি কি করি- অবস্হাতো আছেই । তাহলে খুব সম্ভবত: আপনি Couch potato syndrome এ ভূগছেন।
Couch মানে সোফা । টিভির সামনের সোফার মধ্যে আলুর মত পড়ে থাকা, ভূড়িটুড়ি বানিয়ে গোলালুর ন্যায় বেঢপ আকৃতি অর্জন করা- এসব থেকেই এ Syndrome এর নামকরন করা । সরলার্থে একে বলা যায় সোফালু (সোফায় পড়ে থাকে যে আলু ।) এখানে এই আলুটা হতে পারেন আপনি, আমি বা আমাদের মধ্যে অনেকে । বিশেষ করে শিশু কিশোরদের মধ্যে এটি মহামারীর রূপ নিয়েছে ।
এই সোফালুদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, অকাল মৃত্যুর ঝুকি অনেক বেশী । সাথে পিঠ ব্যাথা, জয়েন্ট পেইন, বিষন্নতা, তিরিক্ষি মেজাজ এসবতো আছেই । Couch Potato কে এখন Chair-Potato নামেও ডাকা হয় ।
ধরুন, আপনি দৈনিক ঘন্টাখানেক হাটেন, পুলে সাতরান বা জিমে যান । বাকী সময়টায় আপনি বসে কাটান । আপনি কি সক্রিয় দিনযাপন করছেন ? আপনার জীবনাচরন কি সুস্হ? উত্তর এককথায়, ‘না’ । আপনার জন্যও একটা কেতাবী ট্যাগ আছে- ”Exercising potato couch” বা ব্যায়ামী সোফালু।
প্রতি চারজন ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে একজনের ডায়াবেটিস হবার কারন শারীরিক নিস্ক্রিয়তা বা চেয়ার সোফায় বসে থাকা। চেয়ার একটা খুনী। এটা পেটের মেদ বাড়িয়ে আপনাকে বেঢপ আকৃতির করে দেয়। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হৃদরোগ ঘটায়। তিলে তিলে আয়ূ কমিয়ে দেয়।
আজ ডায়াবেটিসকে রুখে দেবার প্রত্যয় নিয়ে ”বিশ্ব স্বাস্হ্য দিবস” পালিত হচ্ছে। এদিনের অঙ্গীকার থেকেই আপনার চেয়ার সোফাকে যত বেশী সম্ভব ”না” বলুন। পটেটুর মত নয়- মানুষের মত বাঁচুন।
লিখেছেন ঃ ডা. আমিনুল ইসলাম
FCPS(Medicine), MD(Chest Diseases) at BSMMU