প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ জুলাই ২০২০, শুক্রবার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে আমরা অনেকের কাছ থেকেই অনেক কিছু শুনতে পাই, এবারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এডভোকেট এম আর খান সবুজ।
এডভোকেট এম আর খান সবুজ বলেন, কিছুদিন আগে আমার ছোট বোনের স্বামী মারা যায় আর আমার বোন তখন প্রেগনেন্ট ছিল, প্রচুর মানসিক চাপে একসময় তার ব্লিডিং হতে শুরু করে। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে আমরা প্রথমে তার বাড়ির পাশে সায়দাবাদ মনোয়ারা জেনারেল হাসপাতালে যাই সেখানকার ইমারজেন্সি ডাক্তাররা তাকে কোনো চিকিৎসা দেয় না। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললো। তারপর তাকে নিয়ে একটু সামনেই মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই এবং সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তাররাও তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার কথাই বলে। তখনও আমার বোনের অনবরত ব্লিডিং হয়েই যাচ্ছে মুগদা মেডিকেলের পাশেই পপুলার ক্লিনিক আমরা তাকে সেখানে নিয়ে যাই সেখানের ডাক্তাররাও একই ঢাকা মেডিকেলের কথাই বলেন। তখন রাত প্রায় ১ টা, রোযার মাস কোথাও ভর্তি নিচ্ছে না আর এদিকে আমার বোনের অবস্থাও খারাপ হয়েই যাচ্ছে। পরে আমার বোনকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে গেলাম তারা রোগীর অবস্থা দেখে ঢাকা মেডিকেলের কথাই বললো। তখন রাত প্রায় ২ টা, নিরুপায় হয়ে আমরা ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছাতে আমাদের ৩ টা বেজে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ১০ টাকার একটা টিকিট কাটলাম তারা আমাদের দ্রুত লেবার রুমে যেতে বললো, লেবার রুম খুঁজে সেখানে যেয়ে দেখলাম সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তাররা সবাই রোগীদের নিয়ে অনেক ব্যস্ত আর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত অনেক অনেক জটিল রোগের রোগী। লেবার রুমে কোনো সিট খালি নেই, তখন এক ডাক্তার আরেক রোগীর সিটে আমার বোনের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেখানকার কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে আমি আমার বোনের অবস্থা সম্পর্কে বললে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি। তারা আমাদের ২ ব্যাগ রক্ত যোগাড় করতে বললে আমরা তৎক্ষনাৎ ব্ল্যাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত দিলাম। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তারপরেই আমার বোনকে অপারেশন রুমে নিয়ে যান এবং যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করেন আর আমার বোন অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের এতো ব্যস্ততার মাঝেও এতো জটিল রোগের রোগীর ভীড়েও মাত্র ১০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে আর এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো ভালো চিকিৎসা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সম্পর্কে আমার ধারণা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে। টাকার বিনিময়েও আমি উপযুক্ত চিকিৎসা পাইনি অন্য কোনো হাসপাতালে আর মাত্র ১০ টাকা বিনিময়ে আমরা সম্পূর্ণ চিকিৎসাটি পাই। ঢাকা মেডিকেল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ আমার বোনকে পরদিনই রিলিজ দিয়ে দেয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এতো ভালো চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিকট কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।