প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯শে মার্চ, ২০২১, শুক্রবার
রাজধানীতে দিন দিন বেড়ে চলেছে ডিগ্রীবিহীন স্বঘোষিত চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য। ফলশ্রুতিতে এসব এমবিবিএস/ বিডিএস ডিগ্রীবিহীন কোয়াকদের চিকিৎসক ভেবে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী। সম্প্রতি তেমনই এক মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হয়েছেন ঢাকার দোহারে জয়পাড়া উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের নাসিমা বেগম(৫০)।
গতকাল ১৮ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার দোহারে জয়পাড়া উপজেলা মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত সবুজ ডেন্টাল কেয়ারে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। উক্ত উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ ইয়াছিন মিয়ার স্ত্রী নাসিমা বেগম(৫০) “সবুজ ডেন্টাল কেয়ার” এ চিকিৎসা নিতে এলে টেকনিশিয়ান শেখর রায় তাকে ইঞ্জেকশন দেবার পর তিনি প্রাণ হারান বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
এ বিষয়ে নাসিমা বেগমের পুত্রবধূ সুমি আক্তার জানান, “আমার শ্বাশুড়িকে দাঁতের ব্যথার চিকিৎসার জন্য সবুজ ডেন্টাল কেয়ারে আনছিলাম। দাঁত দেখে শেখর মিয়া( টেকনিশিয়ান) জানায়, “দাঁতে কোনো সমস্যা নাই, তবে দাঁতে ক্যাপ বসাতে হবে।” আমিও তার কথায় রাজী হয়ে ক্যাপ বসানোর জন্য টাকার চুক্তি শেষ করে বাসায় ফোনে যোগাযোগের জন্য চেম্বারের বাইরে আসি৷ কথা শেষে চেম্বারে এসে দেখি শেখর মিয়া আমার শ্বাশুড়িকে দাঁতে ইঞ্জেকশন দেয়।এরপরই আমার শ্বাশুড়ির অস্থিরতা বেড়ে যায় সাথে শ্বাসকষ্টও। শেখর রায়ের পরামর্শে আলো-বাতাসের জন্য যখন চেম্বারের বাইরে নিয়ে আসি, তখনই নাক মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়। তৎক্ষণাৎ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার শ্বাশুড়িকে মৃত ঘোষণা করে।”
মূলত, জেসোকেইন হলো এক ধরনের অবশকারী দ্রব্য যা মেডিকেলীয় ভাষায় লোকাল এনেস্থেশিয়া নামে পরিচিত। যে কোনো জটিল দন্ত চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার ব্যথাহীনভাবে সম্পন্ন করতে রোগীকে একটি নির্ধারিত ডোজে চিকিৎসক এটি ইনজেকশন আকারে দিয়ে থাকেন। তবে ইনজেকশন প্রদানকারীর এ সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞানের অভাব এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে এর প্রয়োগ রোগীর জন্য তৈরী করতে পারে নানান ধরনের জটিল শারীরিক পরিস্থিতি এমনকি মৃত্যু। যা ঘটেছে টেকনিশিয়ান শেখর রায়ের অপচিকিৎসার শিকার নাসিমা বেগমের বেলায়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আল আমিন জানান, “জেসোকাইন ইঞ্জেকশন দেওয়ার পূর্বে ৩টা টেস্ট করিয়ে নিতে হয়।” কিন্তু কোনো রকম টেস্ট ছাড়াই জেসোকাইন ইঞ্জেকশন পুশ করার কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, “শেখর রায় যেহেতু বিএমডিসি অনুমোদিত ডেন্টাল সার্জন নয়, সেহেতু রোগীকে চিকিৎসা করার অনুমতি তার নেই।”
নিহতের পরিবার দোহার থানায় অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সবুজ ডেন্টাল কেয়ারের স্বত্বাধিকারী সবুজ হোসেন(৩২) এবং টেকনিশিয়ান শেখর রায়(৩২) কে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, “লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হচ্ছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাকিবুল হাসান শাওন