মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
২০২৩ সালের ৭ জুন বরগুনার পোশাক শ্রমিক বাদশাহ মিয়া ও মাহমুদা আক্তার দম্পত্তির ঘরে জন্ম নেয় বুকে ও পেটে জোড়া লাগানো দুই শিশু শিফা ও রিফা। জন্মের আগে আল্ট্রাসোনোগ্রামের মাধ্যমে জমজ শিশুর ব্যাপারটি জানতে পারলেও জোড়া লাগানোর বিষয়টি তারা জানতেন না।
১৪ ই জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহানুর ইসলামের কাছে শিশু শিফা-রিফাদের নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। পরে ২১ জুন শিশু -সার্জারি বিভাগের ৫ নাম্বার ওয়ার্ডে তাদের ভর্তি করানো হয়। শিশু শিফা-রিফার জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করেন চিকিৎসকেরা, তাদের তত্ত্বাবধায়নেই চিকিৎসা চলতে থাকে। জন্মগত ভাবে দুই শিশুর মাথা, দুই হাত, দুই পা, মলদ্বার ও প্রস্রাবের রাস্তা আলাদা হলেও তাদের হৃৎপিন্ডের পর্দা(পেরিকার্ডিয়াম), কমন হেপাটিক ডাক্ট, পোর্টাল শিরা ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ একে অপরের সাথে জোড়া লাগানো ছিলো।
এরপর দীর্ঘ দিন তাদের নানা জটিলতার চিকিৎসা করার পর ৭ সেপ্টেম্বর সকালে শুরু হয় তাদের পৃথকীকরণের অস্ত্রোপচার ৮২ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে এই অস্ত্রোপচার চলে ১০ ঘন্টা ব্যাপী। অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহানুর ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
“জমজ শিশুর জন্মগত ত্রুটি ছিল। এসব রোগীর ক্ষেত্রে কখনো দুজনের কাউকেই বাঁচানো যায় না, আবার কখনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়। এই দুই শিশুর মধ্যে শিফার জন্মগত হৃদরোগসহ আরও কয়েকটি সমস্যা ছিল। এরপরও অস্ত্রোপচার–পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। এত সব সমস্যার মধ্যেও সফলভাবে শিশু দুটিকে পৃথক করা গেছে। সবার সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সফল হয়েছে। তিনি দেশবাসীর কাছে শিশু দুটির জন্য দোয়া চান।”
অস্ত্রোপচার শেষে শিশু শিফা-রিফাকে আইসিইউ এর ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর মুক্ত করা হয়। এর দুইদিন পর ১১ ই সেপ্টেম্বর শিফার “কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট” হলে তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ট্রান্সফার করা হয়। পরবর্তীতে আবারো ১৮ ই সেপ্টেম্বর শিশু শিফাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
এই চিকিৎসার খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজসেবা অধিদপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেমের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার বাবা-মা।
শিশুদের পিতা বাদশাহ মিয়া বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার পক্ষে এ চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না। চিকিৎসক স্যারেরা আমার শিশুদের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন। তাঁরা অনেক কষ্ট করেছেন। আমার সন্তানদের চিকিৎসার জন্য সব খরচও দিয়েছেন তাঁরা। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। শিফা ও রিফার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: মোঃ ফাতিহুল ইসলাম তায়ফুর