‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হতে যাচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে যৌথ উদ্যোগে কর্মসূচির আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্লাইড সাইকোলজি বিভাগসমূহ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস (১০ অক্টোবর)-কে সামনে রেখে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সেমিনার, কর্মশালা, তথ্য প্রদর্শনী, মানসিক স্বাস্থ্য মেলা, সচেতনতামূলক র্যালি ও মানববন্ধন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ প্রায় মাসব্যপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে বিনামূল্যে বা নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফী দিয়ে অংশগ্রহণ করে মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে জানতে পারবেন।
তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির আজ ছিল প্রথম দিন। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এবং কলাভবনে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি (এমপি)।
‘সংকটাপন্ন রোহিঙ্গাদের জন্য টেকসই মনোসামাজিক সেবা’-শীর্ষক দ্বিতীয় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল দুপুর ১২টায়। এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। ‘সময়ের দাবি – হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের দ্রুত নিয়োগ দিন’- বিষয়ক তৃতীয় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হবে বিকেল ৩টায়।
এ ছাড়া বিশেষ আয়োজন হিসেবে থাকবে উন্মুক্ত মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রদর্শনী ও কর্মশালা। কর্মশালার মধ্যে রয়েছে-মানবিক বিপর্যয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, প্যারেন্টিং স্কিল ট্রেনিং, উদ্বেগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষণ কৌশল, রাগ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ মোকাবিলা, মাইন্ডফুলনেস, অটিজম, ফ্যামিলি থেরাপি, নিউরোসাইকোলজি, স্বপ্রণোদিত আসক্তি নিয়ন্ত্রণ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার শতকরা ১৬.১ ভাগ যে কোন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রতি ১ লাখের জন্য ০.০৭ জন মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ রয়েছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।
উন্নত দেশে এ অনুপাত ১ লাখ মানুষের জন্য ১০ জন, মধ্য আয়ের দেশে ২.৭ জন, অনুন্নত দেশে ০.০৫। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, বর্তমান হারে জনবল বৃদ্ধি পেতে থাকলে আগামী ১শ’ বছরেও এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচীতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্তকরণ এখন সময়ের দাবি।
এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এ লক্ষ্য অর্জনে সাধারণ চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান, মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থায় মানসিক রোগ চিকিৎসার কারিকুলাম সম্প্রসারণ ও স্কুল পর্যাযের পাঠ্যসূচীতে বিষয়টির অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উপজেলা, জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচীতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
নিউজ ডেস্ক
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক/মারিয়া সচি