প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ মার্চ ২০২২, সোমবার
বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ মারা যাচ্ছে। তামাকজনিত এ মৃত্যু ও আর্থিক ক্ষতি রোধ করতে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবি জানিয়েছে তরুণ চিকিৎসকরা।
গতকাল রোববার (২০ মার্চ) রাতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ : তরুণ চিকিৎসকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এ কথা বলেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। তরুণ চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. আহমদ খাইরুল আবরার। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, তামাক ব্যবহার বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম বড় হুমকি। তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ প্রাণ হারায়, যার বড় একটি অংশই অকাল মৃত্যু। তাছাড়া তামাকের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তামাকের এ ভয়াবহতা রোধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
শতভাগ ধূমপান বন্ধ নিশ্চিতে ছয়টি প্রস্তাব দেওয়া হয়। এগুলো হলো উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার বাড়ানো, সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) নামে সিগারেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা এবং বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা।
সভায় তরুণ চিকিৎসকদের সংগঠন প্লাটফর্ম অব মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল সোসাইটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. মোহিব নীরব, সংগঠনের সভাপতি ডা. নাজমুল আবেদীন নাসিব সহ প্ল্যাটফর্মরর এক্টিভিষ্টগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ডা. নাজমুল আবেদীন নাসিব বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যার ফলে আইনটি তামাকের ব্যবহার কমাতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিশেষ করে পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনকে শতভাগ তামাকমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারায় ‘ধূমপান এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে বলে তিনি মত দেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক তরুণ চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।