১২ এপ্রিল, ২০২০
প্রতিরোধ নয়, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য করোনাকে পুরোপুরি নির্মূল করা- চায়না তা ই করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রও একই পথে হাঁটছে। মাত্র দশ সপ্তাহেই (জুনের শুরুতেই) সমগ্র বিশ্ব একই ভাবে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে যদি পৃথিবীর সব দেশে এই ছয়টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
১। সমগ্র দেশকে একই নির্দেশনার আওতায় আনাঃ
একজন বিশ্বস্ত কমান্ডার/ নেতৃত্ব নিয়োগ দিতে হবে যিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করবেন। তাকে সাধারণ জনগণেরও বিশ্বাসভাজন হতে হবে। যুদ্ধে জয়ী হবার জন্য, এর সকল আয়োজন এর পরিপূর্ণ ক্ষমতা থাকবে তার অধীনে। একইভাবে সকল আঞ্চলিক প্রধানকে বলুন তার এলাকার জন্য এরকমই কমান্ডার/ নেতা/প্রশাসক নিয়োগ/মনোনয়ন দিতে। এভাবে এক নির্দেশনায় দেশের সকল পর্যায়ে ছোট ছোট ক্লাস্টারে ভাগ করে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে। এই কাজে প্রতি ধাপ থকে পাওয়া অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য শিক্ষা নিতে হবে এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হবে।
২। ডায়োগনস্টিক টেস্ট সহজলভ্য করতে হবেঃ
সকলের টেস্ট করার প্রয়োজন নেই কিন্তু যাদের করোনা-১৯ উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদের জন্য টেস্ট করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিটি দেশকে এই ডায়োগনস্টিক টেস্ট এর গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে টেস্ট এর সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৩। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবেঃ
সমর যুদ্ধে যেমন সৈনিককে অস্ত্র ছাড়া পাঠানো যায়না তেমনি করোনা যুদ্ধে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম। তবে যৌক্তিক ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে আর আঞ্চলিক ডিস্ট্রিবিউশন কেন্দ্রের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে হাসপাতালে ভেনটিলেটর এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রেরণ করতে হবে।
৪। সমগ্র জনগোষ্ঠীকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করুন এবং সে অনুযায়ী সেবা প্রদান করুনঃ
ক) আক্রান্ত রোগীদের দল
খ) সন্দেহভাজন রোগীদের দল
গ) আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছে এমন ব্যক্তিদের দল
ঘ) আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন কিনা জানা যায়নি এবং আক্রান্ত কিনা তাও জানা যায়নি তাদের দল
ঙ) যারা রোগ থেকে সেরে উঠেছে তাদের দল
i) উপসর্গ যাচাই [কেস ডেফিনিশন] এবং রোগীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস বিবেচনা করে প্রথম চারটি দলে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
ii) এদের মাঝে যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
iii) কমিউনিটি সেন্টারকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে যেখানে মৃদু উপসর্গ আছে এমন রোগীকে আইসোলেটেড করে রাখা যাবে।
iv) এরপর যেসকল জনগোষ্ঠী আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছে তাদের দুই সপ্তাহের জন্য অন্যান্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। তাদের বাসস্থানের জন্য খালি হোটেলগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
v) যারা পূর্বেই আক্রান্ত ছিল এবং এখন সেরে উঠেছে তাদের জন্য প্রয়োজন সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা এবং এন্টিবডি বেইসড টেস্ট সহজলভ্য করা।
৫। সাধারণ জনগোষ্ঠীকে অনুপ্রাণীত এবং সচল রাখতে হবেঃ
করোনা নির্মূল করার এই প্রচেষ্টায় সকলকেই অংশগ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন ভলান্টিয়ার দল সোশাল মিডিয়া, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার বৃদ্ধি করে সকলের সাহায্যে এই ভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।
ঘরের বাইরে কাজের সময় সকলেই যদি সার্জিক্যাল মাস্ক পরে তার দায়িত্ব পালন করে তাহলে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
৬। গবেষণামূলক কাজঃ
করোনা যুদ্ধ মোকাবেলা করার সাথে সাথে COVID-19 নিয়ে আমাদের বিশেষভাবে গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ জারি রাখতে হবে যেন ভবিষ্যতেও কখনো এরকম মহামারি হলে তার মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি।
মূল প্রবন্ধঃ
Ten Weeks to Crush the Curve
Editorial; The new england journal of medicine
Harvey V. Fineberg, M.D., Ph.D
অনুবাদঃ ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম
রাইয়ান আমজাদ