শনিবার, ০৮ মার্চ, ২০২৫
দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে দুই দফা দাবিতে ডাকা কর্মবিরতি আগামী ১২ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আজ শনিবার (৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কর্মবিরতি স্থগিত করেন তারা।
এর আগে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বাগান গেটে মৌন মিছিলে সমবেত হন চিকিৎসকরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে আসেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলা জটিলতা, অনিয়ম ও স্থবিরতা দূর করার জন্য কার্যকর চেষ্টা শুরু করেছি। আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল অভ্যুত্থানে আহতদের সেবা নিশ্চিত করা। চিকিৎসক, নার্স ও ফিজিওথেরাপিস্টসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রচেষ্টায় সন্তোষজনকভাবে সেবা দান করতে পেরেছি এবং পরবর্তীতে ক্ষেত্র বিশেষে অনেক আহত রোগীকে বিদেশেও প্রেরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল পেশার, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিশ্চিতকরণ এবং বঞ্চনা ও বৈষম্য দূর করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রায় তিন মাস আগে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা জানার চেষ্টা করেছি, কোন প্রক্রিয়ায় একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী বলেন, ‘বিস্ময়কর হলেও সত্য, পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য ৭-৮ হাজার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীর্ঘ দিন যাবৎ পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমাণ। এগুলোর সন্তোষজনক ও আইনসিদ্ধ সমাধানের জন্য আমরা আপনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। আপনার জানেন, এটি শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তের বিষয় না। এ কারণে আপনাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি স্বীকৃত পদ্ধতি তৈরি করেছি। এর পাশাপাশি পাবলিক সার্ভিস কমিশনকেও আমরা সম্পৃক্ত করেছি, যে সকল ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা প্রয়োজন। এগুলো করতে গিয়ে আমাদের বেশ সময় অতিবাহিত হয়েছে। পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমাণ সাত হাজারের অধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তালিকা করার প্রক্রিয়াটি জটিল ছিল। পুরো তালিকাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করি। পরে তাদের পর্যাবেক্ষণের আলোকে তিন ভাগে ভাগ প্রেরণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, তিন হাজার ৩৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদোন্নতির জন্য সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব আগামী ১০-১১ মাচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই হাজার ৬৫ জনের প্রস্তাব আমাদের পক্ষ থেকে গত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী তারা দ্রুত এ তালিকা নিয়ে কাজ করবেন।’
‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সকল দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ রেখে যেন পদোন্নতি ও গত ২৫ বছর ধরে চলমান অপারেশনাল প্ল্যানকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নেওয়া হয়, সেজন্য গত দশ দিন আগে তিনি ও স্বচিব সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন’—যোগ করেন অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।
সবগুলো কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সম্মতি প্রয়োজন উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী বলেন,‘মাননীয় উপদেষ্টার মাধ্যমে সম্মতি নিয়ে এসেছি। আমরা আশাবাদী আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এটা করা হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুরুতে একটি তালিকা তৈরি হতে পারে, তার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালিকা সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে আমরা দৃশ্যমাণ পদোন্নতি দেখতে পাবেন। আমরা নিশ্চিত করছি, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রথম তালিকার ৩০৬৫ জন, দ্বিতীয় তালিকার তিন হাজার ৩৩ জন, এবং তৃতীয় তালিকার ২০২৪ জনের পদোন্নতি আমরা পর্যায়ক্রমে করতে পারবো।’
পদোন্নতি প্রক্রিয়ার সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে চিকিৎসকদের সেবায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন। আপনাদের ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আমাদেরকে কৃতজ্ঞ করবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সামর্থ দিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পদোন্নতিগুলো কার্যকর করার। ’
এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি স্থগিত করেন তারা। তবে আগামী ৫ সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না এলে আবারও কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্ল্যাটফর্ম/