লেখকঃ ডাঃ সেলিম শাহেদ
গতকাল খবরে দেখলাম তিশার এপেন্ডিটিসাইটিসের অপারেশন হয়েছে।অপারেশন শেষে সুস্থ হয়ে বাসায়ও চলে গেছেন।এর আগে প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুনের হার্টের বাই-পাস অপারেশন হলো।তিনিও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন।
অপারেশন কিংবা চিকিৎসা শেষে তিশা কিংবা কবির মতো সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি যান না।এঁদের কেউ কেউ না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।যেমন সিভিয়ার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গত বছর ঢাকার একটি স্থানীয় হাসপাতালে মারা গিয়েছেলেন।
সিম্পল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার ব্যাপারটা কেউ ই মেনে নিতে পারেন না।আমার কারোর হলে আমিও হয়তো মেনে নিতে পারবো না।
একই হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত একজন রোগী মারা যান কিন্তু বাইপাস সার্জারীর মতো একটি অপারেশন শেষে নির্মলেন্দুগুনের মতো রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।প্যারাডক্সিক্যাল।
কমন পিপলের কমন সেন্সে ‘ডায়রিয়া’ মানে শধুই ‘ডায়রিয়া’।একজন ক্রনিক কিডনী ডিজিসের পেশেন্টের ডায়রিয়া,হার্ট ফেলিউরের পেশেন্টের ডায়রিয়া,ডায়রিয়া থেকে শকে চলে যাওয়ায় পেশেন্টের ডায়রিয়া বলতে শুধু ডায়রিয়াই বুঝবেন কমন পিপল।এর বেশী কিছু নয়।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পরিবার এবং ছাত্ররা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে জরিমানাও আদায় করেছিলেন সে সময়।তারও কয়েক বছর আগে ঢাকার আরেক নামী হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেন চিত্রনায়ক মান্নার স্ত্রী।অভিযোগ ভুল চিকিৎসা।
অথচ তীব্র বুকের ব্যথা নিয়ে নায়ক মান্না নিজেই গাড়ী চালিয়ে যখন হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ইসিজি করার পর চিকিৎসক ইন্টারভেনশনের কথা বলেন তখন তিনি রাজি হন নি।মানুষ তার দেহের চিকিৎসার মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতা রাখেন।রোগী না চাইলে আমরা ভালো কিংবা খারাপ কোন চিকিৎসাই দেয়ার যোগ্যতা রাখি না।সে মামলা এখনও চলছে কিনা জানি না।তবে সে মামলার আসামী এক বড় ভাইকে প্রায়শঃই হাজিরা দিতে যাওয়ার কথা শুনেছি।
২
তিশার মতো,কবি নির্মলেন্দুগুনের মতো বাংলাদেশে শত শত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।নায়িকা কিংবা কবি ভালো আছেন সে খবরটাই আসে কাগজে।বাকীদের টা আসে না।
চিকিৎসা কোন শো-বিজ না যে একটা অপারেশন হিট কিংবা সফল হলে শৈল্যবিদ কি খান,কেমন করে ঘুমান তার খবরা খবর কাগজে চলে আসবে।সেটা বোধ হয় তাঁরা চান ও না।
মান্নার মতো,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককের মতো রোগীরা যখন হাসপাতালে এসে মৃত্যু বরন করেন তখন মৃত্যুর খবরটা আর ‘মৃত্যুর’ থাকে না।
তখন হয়ে যায় ‘চিকিৎসকের অবহেলায় শিক্ষকের মৃত্যু-হাসপাতাল ভাংচুর’।
অদ্ভুত!
এ অদ্ভূতটা আরও অদ্ভুত হয় যখন ভেটেরান রাজনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাক লন্ডনের হাসপাতালে পাঁচ কোটি টাকা(কিংবা তারও বেশী) খরচ করে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনে ব্যর্থ হয়ে লাশ হয়ে ফেরেন,হুমায়ূন আহমেদ আড়াই কোটি টাকা খরচ করে লাশ হয়ে ফেরেন, আব্দুল জলিল সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে কোটি টাকা খরচ করে নিথর দেহটা নিয়ে দেশে ফেরেন।
তখন শিরোনাম হয় ‘বাংলা সাহিত্যের দিকপাল হুমায়ূন আহমেদ আর নেই’, ‘ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতির কান্ডারী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুর রাজ্জাকের জীবনাবসান’ এই সব।
খবরের কাগজে আসে না- ‘সফল হলোনা আব্দুর রাজ্জাকের পাঁচ কোটি টাকার অপারেশন!
কিংবা ‘জলে গেল হু্মায়ূন আহমেদের আড়াই কোটি টাকার চিকিৎসা সফর।’
এই আর কী!
৩
এজন্য দায়ী কে?
সব সময় ই দেশকে দেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর অবার্চীন মানসিকতা!