সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
মোবাইল বা কোনো স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটানো ব্যক্তিদের জন্য দেয়া হয়েছে সতর্কবার্তা। গবেষণা বলছে, দিনে মাত্র ১ ঘণ্টা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহারের ফলে মায়োপিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যেতে পারে।
মায়োপিয়ার সমস্যায় মানুষ কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখলেও দূরের বস্তু ঝাপসা দেখে।
আমেরিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একটি জার্নাল জামা নেটওয়ার্ক ওপেন এক গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছে। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ১ ঘণ্টার বেশি ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে মায়োপিয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে মোবাইলের মতো স্ক্রিন ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে মায়োপিয়ার হারও বেড়েই চলছ। গবেষকেরা ৪৫টি ভিন্ন গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন, যেখানে ৩ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষের স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ও মায়োপিয়ার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে দেখা হয়েছিল। শিশু ও তরুণদের ওপর এই গবেষণার জরিপ চালানো হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, স্ক্রিন ব্যবহারের সময়ের সঙ্গে মায়োপিয়ার ঝুঁকির সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিন ১ ঘণ্টার কম স্ক্রিন ব্যবহারে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকতে পারে। তবে, দৈনিক ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে ঝুঁকি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
স্ক্রিন ব্যবহারের সময়ের সাথে সাথে মায়োপিয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। যাঁরা প্রতিদিন ১ ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহার করে, তাদের মায়োপিয়ার ঝুঁকি ৫ শতাংশ বেশি। আর চার ঘণ্টা ব্যবহারকারীদের এই ঝুঁকি বাড়ে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত।
তবে গবেষকেরা বলছেন, চার ঘণ্টা পর এই ঝুঁকি ধীর গতিতে বাড়ে এবং প্রতি দিন ১ ঘণ্টার কম স্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে মায়োপিয়ার সঙ্গে স্পষ্ট কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
গবেষকেরদের ধারণা, যেহেতু স্ক্রিন সাধারণত ঘরের ভেতরে ব্যবহার করা হয়, তাই প্রকৃতির সুরক্ষামূলক প্রভাব থেকে কম সময় কাটানোর ফলে মায়োপিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় কেবল চোখের নয়, বরং শরীরের অন্যান্য অংশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে মস্তিষ্কের কগনিটিভ কার্যক্ষমতা অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ প্রভাবিত হতে পারে। যার ফলে মনোযোগের স্থায়িত্ব কমে যায়। অনেক সময় অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে বসতে হয়, যা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি স্থূলতা, শারীরিক ব্যথা, মেরুদণ্ডের সমস্যা ও পিঠের ব্যথার মতো নানা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
গবেষকেরা মনে করেন, বিশ্বজুড়ে মায়োপিয়া মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গবেষণার ফলাফল চিকিৎসকদের জন্য মায়োপিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিতে পারে।
অ্যাংলিয়া রাস্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চক্ষু বিশেষজ্ঞ রুপার্ট বোর্ন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, মায়োপিয়া বাড়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি হুমকির মুখে পড়তে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণার ফলাফল শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী মায়োপিয়া সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।’
প্ল্যাটফর্ম/