২৯শে এপ্রিল,২০২০
নারায়ণগঞ্জে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক মেডিকেল অফিসারের পরিবারের ১৭ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন পরিবারটিকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালায়। বাড়িটি লক্ষ্য করে স্থানীয়রা ইট-পাটকেলও নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চিকিৎসক।
বিষয়টি জানতে পেরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন এবং হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। মাইকে তিনি বলেন ‘নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করলে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না। আপ্নারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করুন।
দিনরাত যিনি হাসপাতালে পড়ে আছেন, দিনরাত আপনাদের জন্য খাটছেন, রোগীর সেবা দিচ্ছেন, তাঁর পরিবারের লোকজন ১৭ জন আজ আক্রান্ত। আজ তাঁদের বাড়িতেই হামলা করছেন?
আপনাদের যদি অসুখ হয়, হাসপাতালে যাবেন না? চিকিৎসা নিবেন না? কে করবে চিকিৎসা? যিনি চিকিৎসা করবেন তাঁর বাড়িতেই হামলা করছেন?’
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওই মেডিকেল অফিসার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে কে বা কারা যেন ঢিল ছুঁড়েছে। বিষয়টি আমি প্রশাসনে জানিয়েছি। থানা পুলিশও এসে ঘুরে গিয়েছে। আমাকে প্রশাসন থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী নিয়মিত এখানে আসা যাওয়া করবে।
এমনিতেই পরিবারটির মানসিক অবস্থা ভালো নয়। এখন তাদের পর্যাপ্ত সাপোর্ট দরকার,সহমর্মিতা দরকার। অথচ এলাকাটিতে হচ্ছে উল্টোটা।
ইউ এন ও নাহিদা বারিক বলেন পরিবারটি এখানকার স্থানীয়। তারপরও মানুষগুলো কেন এমন করছে বুঝতে পারছি না। তাছাড়া আমরা বাড়িটিকে আগে থেকেই লকডাউন করেছি। কাউকে এখান থেকে বের হতে দিই না। বাইরে থেকেও কেউ ভেতরে আসতে পারে না। তারপরেও তাদেরকে উৎখাতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়িতে রেখেই তাদের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। অন্য চিকিৎসকেরাও এসে দেখে যাচ্ছেন। সার্বক্ষণিক আমি এখানে আসা যাওয়া করবো। এই বাড়ির লোক বের না হলে ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও স্থানীয়দের কেউ কেউ হয়তো ভুল বুঝিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার।
উল্লেখ্য এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদা বারিক ওই এলাকায় গিয়ে উশৃঙ্খল লোকজনদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি শান্ত করে বাড়িটিকে লগডাউন করেন। এরপর মাইকে এলাকাবাসীকে নিজ নিজ ঘরে থাকার অনুরোধ করে করোনা সম্পর্কে ধারনা দেন ইউএনও।
এদিকে আক্রান্ত পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে তাকে ফোন করার অনুরোধ করেন ইউএনও নাহিদা বারিক।
নিজস্ব প্রতিবেদক
ওয়াসিফ হোসেন