রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
নিরাপদ রক্তের জন্য একসময়ের শ্লোগান ছিল- আপন জনকে রক্ত দিন। এই শ্লোগানের কারণে পেশাদার রক্তদাতার সংখ্যা কমতে শুরু করে। কিন্তু বিজ্ঞান একটি গতিশীল জিনিস। অনেক কিছুর ব্যাখ্যা আগে যেখানে ছিলোনা এখন তার অনেক কিছুই উন্মুক্ত। তেমনই একটি হলো- নিকট জনকে রক্ত দান থেকে বিরত থাকুন। কেন?
আমার শরীরে যা আছে তা আমার জন্য আপন কিন্তু আরেকজনের শরীরের জিনিস ক্ষতিকারকও হতে পারে। সেকারণে একজনের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে আরেকজনের শরীরে বসিয়ে দেওয়া যায়না।দিলে জীবনসংহারও হতে পারে।
শরীর কিভাবে বুঝে এটা আরেকজনের জিনিস? জীবাণু হোক বা যাই হোক, কারো শরীরে প্রবেশ করতে গেলে প্রথমে এসে উপস্থিত হয় প্রথম ধাপের প্রতিরক্ষা বা সেল মিডিয়েটেড ইমিউনিটি। সে বুঝার চেষ্টা করে এটাকে মেনে নেওয়া যায় কিনা মানে এটি শরীরবান্ধব কিনা। বান্ধব না হলে সেখানেই বিনষ্টের চেষ্টা আর বান্ধব হলে তো কথাই নেই, আপন করে নেওয়া। বিপত্তি আসলে এখানেই ঘটে অনেক জায়গায়। তারই উদাহরণ হলো, যখন আমরা নিকট জনকে রক্ত দান করি। রক্তদাতা আর গ্রহীতার জীনগত মিল থাকার কারনে রক্তের যে অংশটি নির্ণয় করে শত্রু না মিত্র তা তখন আর পার্থক্য করতে পারেনা। নিজের মনে করে আপন করে নেয়। দাতার রক্তে উপস্থিত T cell তখন শুরু করে ব্যাঘাত। কারণ নতুন পরিবেশ তো তার পরিচিত নয়। সে নষ্ট করা শুরু করে তার দ্বারা যা যা সম্ভব। যে রোগের উৎপত্তি হয় তার নাম Transfusion Associated Graft versus Host Disease.
আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের পূর্ব পুরুষদের অনেক জাতি শাসন করে গেছে, ফলে মিশ্র প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে। জীনগত মিল অনেকের মাঝেই নেই সেই কারনে। জাপানের মত দেশ যাদের কে এতো জাতির অধীনে থাকতে হয়নি তাদের এই রোগের সম্ভাবনা প্রতি ৮৭৮ জনে ১ জন!! কতটা ভয়াবহ। রোগীর যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তখন আসলে কে আসল বা কে নকল যাচাই করার ক্ষমতা কমে যায় ফলে সৃষ্টি হতে পারে এই ঝামেলা। বাইরের দেশে Irradiated Blood দেওয়ার বিধান চালু রয়েছে এসব কারণে যাতে রক্ত গ্রহণ করার ফলে কারও জীবন চলে না যায় কারণ আক্রান্ত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯০%।
তাই এটাই সত্য- নিকট জনকে রক্ত প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন।
ডা. আশরাফুল হক
সহকারী অধ্যাপক
ব্লাড ট্রান্সফিউশন
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট