প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ এপ্রিল ২০২০, শনিবার
পিপিই সাম্প্রতিক কালের জনপ্রিয় একটি নাম। পিপিই নিয়ে অনেক গাইডলাইন আছে। একেকটা রোগের জন্য এক এক প্রকার পিপিই, আবার এক এক কাজের জন্য এক এক প্রকার পিপিই। কোভিড-১৯ এর জন্য WHO, US CDC, ECDC, China CDC, PAHO সবাই ই তাদের ওয়েবসাইটে পিপিই কেমন হবে ও তার ব্যবহার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। আমাদের দেশে সরকারিভাবে সবসময় WHO এর গাইডলাইন অনুকরণ করা হয়। এ বিষয়ে WHO ৬ এপ্রিল তাদের ৩য় অন্তর্বর্তীকালীন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। প্রথম প্রকাশের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাংলা করা একটা কপি সার্কুলেট ও হয়েছিল। এই গাইডলাইন মূলত করা হয়েছে হেলথ কেয়ার ও হোম কেয়ার সেটিংস এবং সেই সাথে cargo handle করার সম্পর্কে।
কিভবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করা যায়:
এই ভাইরাস ৩ মাধ্যমে ছড়ায়:
– ক্লোজ কনটাক্ট
– ড্রপলেট
– বাতাসের মাধ্যমে
এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মূলত ৪ ধরণের সতর্কতা নিতে হবে-
১। Standard precaution: সাধারণ কাজ করার সময় বা রোগী দেখার সময় ঘরের কাপড়চোপড়ে যাতে কন্টামিনেশন না হয়, রক্ত যেন গায়ে লেগে না যায় ইত্যাদি। এই সতর্কতা আমরা যেকোন জীবাণুর বিরুদ্ধেই নিয়ে থাকি।
২। Contact precaution: যে কাজ করতে গিয়ে রোগীর কন্ট্যাক্টে আসতে হবে এবং যে রোগ গুলো কন্ট্যাক্টের মাধ্যমে ছড়ায় তাদের জন্য এই সাবধানতা। যেমন টাইফয়েডের একজন রোগী থেকে সাধারণত কন্ট্যাক্টের মাধ্যমে কোন সংক্রমণ ছড়ায় না, তার ক্ষেত্রে Standard precaution নিলেই হয়। কিন্তু Staphylococcal skin infection বা ইনফ্লুয়েঞ্জা কিন্তু কন্ট্যাক্টের মাধ্যমে ছড়ায়। সুতরাং তার জন্য এই precaution লাগবে। যেমন গ্লাভস পরা এই precaution এর একটা অংশ। কোভিড-১৯ এর জন্যও এটা প্রযোজ্য।
৩। Droplet precaution: যে রোগ গুলো ড্রপলেটের (>5-10 μm in diameter) মাধ্যমে ছড়ায় তাদের জন্য এই সাবধানতা। যেমন মেডিকেল মাস্ক পরা একটি Droplet precaution। কোভিড-১৯ এর সর্বাধিক সংক্রমণ এভাবে হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ড্রপলেট সাধারণত হাঁচি কাশির সময় ১ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত যায়।
৪। Airborne precaution: যে রোগ গুলো ড্রপলেট নিওক্লিই (<5μm in diameter) এর মাধ্যমে ছড়ায় তাদের জন্য এই precaution। ড্রপলেট নিওক্লিই ১ মিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, কারণ এরা বেশি সময় ভেসে থাকতে পারে। এখনো পর্যন্ত WHO এর মতে এভিডেন্স বলছে, কোভিড-১৯ এর রোগীর এরোসল সৃষ্টিকারী প্রসিডিওর যেমন: ইনটিউবেশন, সিপিআর, ভেন্টিলেশন, ব্রংকস্কপি, ট্রাকিয়াল এসপিরেশন, ট্রাকিয়েস্টোমি ইত্যাদির সময় ড্রপলেট নিওক্লিই তৈরি হয়। রেস্পিরেটর যেমন N95 or FFP2 or FFP3 স্ট্যান্ডার্ড অথবা ইকুইভেলেন্ট হল Airborne precaution এর একটি অংশ।
WHO এই গাইডলাইনে বলেছে কোভিড-১৯ এর জন্য প্রথম ৩ টি সাবধানতা হেলথ কেয়ার সেটিংস এ নিতে হবে। আর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে Airborne precaution নিতে হবে।
পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) আমাদের কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারে?
আসলে এমন কোন পিপিই ই নাই যা ১০০% নিরাপত্তা দিতে পারে। মূলত বাকি সব ইনফেকশন প্রিভেনশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে পিপিই পরলে তবেই তা কাজে আসবে। Hand hygiene, Donning, doffing, environmental control, engineering control measures না নিয়ে শুধু পিপিই পরে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় না। এই কথাটা এই গাইডলাইনে গুরুত্বের সাথে বলা হয়েছে।
সারা পৃথিবীতে পিপিই সংকট আছে। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কম। এ কথা মাথায় রেখে WHO ৩ টি মূল Strategy নিয়েছে। তা হল-
১. হেলথ কেয়ার সেটিংসে পিপিই এর প্রয়োজনীয়তা কমানো।
২. পিপিই এর যথার্থ এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
৩. পিপিই সরবরাহের চেইন ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়াগুলো সমন্বয়করণ।
স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন গাইড লাইন:
a. প্রাথমিক স্ক্রিনিং কিন্তু ডিরেক্ট কনটাক্টে যাবে না (যেমন ট্রিয়েজ) :
১। রুগীর থেকে নূন্যতম ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
২। রুগী ও সেবাদানকারীর মাঝে কাঁচের অথবা প্লাস্টিকের বাধা থাকা আইডিয়াল
৩। কোন ধরণের পিপিই দরকার নাই।
৪। তবে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হলে, মাস্ক ও আই প্রোটেকশন গগলস/ ফেস শিল্ড ব্যবহার করতে হবে।
*যে রুগীর সাইন/সিম্পটম আছে তাদের severity দেখার জন্য (Manchester classification) আলাদা ট্রায়েজ এলাকা করতে হবে।
b. রুগীর কক্ষ/ ওয়ার্ডঃ
i. সরাসরি পরিচর্যা দিবে COVID-19 রুগীকে কিন্তু aerosol-generating procedures করবে নাঃ প্রয়োজন-
১। মেডিকেল মাস্ক
২। গাউন
৩। গ্লভস
৪। চোখ সুরক্ষার জন্য গগলস, ফেস শিল্ড
৫। হ্যান্ড হাইজিন
ii. সরাসরি পরিচর্যা দিবে COVID-19 রুগীকে এবং aerosol-generating procedures করবেঃ প্রয়োজন-
১। রেস্পিরেটর N95 or FFP2 or FFP3 স্ট্যান্ডার্ড অথবা ইকুইভেলেন্ট
২। গাউন
৩। গ্লভস
৪। চোখ সুরক্ষা
৫। এপ্রোন
৬। হ্যান্ড হাইজিন
c. কন্সাল্টেশন রুমঃ
i. যে রুগীর কোভিড-১৯ এর সিম্পটম আছে তাদের পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজন-
১। মেডিকেল মাস্ক
২। গাউন
৩। গ্লভস
৪। চোখ সুরক্ষা
৫। হ্যান্ড হাইজিন
ii. যে রুগীর কোভিড-১৯ এর সিম্পটম নেই তাদের পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজন-
১। PPE (স্ট্যান্ডার্ড প্রিকোশান এর জন্য এবং রিস্ক এসেসমেন্ট অনুযায়ী)
২। হ্যান্ড হাইজিন
d. ল্যাবরেটরি: রেসপিরেটরি স্যাম্পল- মেনিপুলেশন এর জন্য তা অবশ্যই কমপক্ষে BSL-2 সুবিধার মাঝে করতে হবে। অন্যান্য স্যাম্পল standard precaution নিয়ে করতে হবে। প্রয়োজন-
১। কর্মীদের মাঝে ১ মিটার ন্যুনতম দূরত্ব বজায় রাখা
২। মেডিকেল মাস্ক
২। গাউন
৩। গ্লাভস
৪। চোখ সুরক্ষা
৫। হ্যান্ড হাইজিন
e. ক্লিনার্সঃ সকল ক্ষেত্রেঃ
প্রয়োজনঃ
১। মেডিকেল মাস্ক
২। গাউন
৩। হেভি ডিউটি গ্লাভস
৪। চোখ সুরক্ষা
৫। ক্লোজড ওয়ার্ক শোজ/ জুতা
৬। হ্যান্ড হাইজিন
এছাড়া আরো অনেক ক্ষেত্রে পিপিই ব্যবহারের পরামর্শ রয়েছে। নতুন ডকুমেন্ট এ আরেকটি সংযোজন হল পিপিই এর তীব্র সংকটে কি করণীয় তা নিয়ে। এর মূল থিম হল-
১। পিপিই এর সম্প্রসারিত ব্যবহার।
২। পিপিই এর পুনঃব্যবহার।
৩। WHO এর সুপারিশকৃত আইটেমের সাথে তুলনা করে বিকল্প কিছু বিবেচনা করা।
https://www.who.int/csr/resources/publications/putontakeoffPPE/en/
আর এই ডকুমেন্টটির লিংক হল-
https://apps.who.int/iris/bitstream/handle/10665/331695/WHO-2019-nCov-IPC_PPE_use-2020.3-eng.pdf
এছাড়া সকল টেকনিক্যাল গাইডেন্স এর জন্য দেখুনঃ
https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/
তথ্যসূত্র- শাহরিয়ার রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক- মেহেনাজ সুলতানা তামান্না