প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মাসে হঠাৎ করে চীনদেশের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়ে এক নতুন ধরনের নিউমোনিয়া, দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিস্তার লাভ করে গোটা বিশ্বে। সারা বিশ্বজুড়ে নতুন আবিষ্কৃত এই SARS-CoV-2 অল্প দিনের মধ্যেই সৃষ্টি করে প্যান্ডেমিক। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা কিন্তু বসে নেই, ইতিমধ্যেই তারা আবিষ্কার করেছেন এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে।
গতকাল চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম সেরা গবেষণামূলক প্রকাশনা The Journal of the American Medical Association (JAMA) Network Open তে একদল চীনা গবেষকদের প্রকাশিত চিঠি সৃষ্টি করেছে নতুন চাঞ্চল্য। এই চিঠিতে তারা সম্পাদককে জানান যে তারা তাদের গবেষণায় দেখেছেন পুরুষের বীর্যেও রয়েছে এই নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি। রোগ সংক্রমনের প্রথম দিকে তো বটেই, এমনকি সংক্রমণ থেকে সেরে উঠার পর্যায়েও পুরুষের বীর্যের মধ্যে ভাইরাসটির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন তারা। গবেষকেরা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘তবে কী নতুন এই ভাইরাসটি যৌন মিলনের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে?’
চীন দেশের শাংঙ্কুই মিউনিসিপ্যিাল হসপিটালে কোভিড-১৯ রোগে জানুয়ারী ২৬ থেকে ফেব্রুয়ারী ২৬ এর মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়ষ্ক চিকিৎসাধীন ৫০ জন ব্যক্তির মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ এই গবেষনায় অংশ নেন।তাদের মধ্যে সংক্রমনের তীব্র পর্যায়ে ছিলেন ১৫ জন এবং সুস্থ হবার পর্যায়ে ছিলেন ২৩ জন। বীর্য নমুনা পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যায়
যে ৩৮ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৬ জন রোগীর বীর্যে রয়েছে SARS CoV-2। এই ৬ জনের মধ্যে ৪ জন ছিলেন সংক্রমণের তীব্র পর্যায়ে থাকা ১৫ জনের দলে এবং ২ জন ছিলেন সুস্থ হতে থাকা ২৩ জন রোগীর দলে।
পুরুষ প্রজনন তন্ত্রে ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রকাশনাটিতে গবেষকগণ লিখেছেন, ‘কোভিড-১৯ আক্রান্ত পুরুষের প্রজনন ব্যবস্থায় ভাইরাসটির উপস্থিতি রয়েছে। রক্তের সাথে শুক্রাশয়/ভাস ডিফারেন্স/ এপিডিডাইমিস যে স্বাভাবিক ব্যারিয়ার রয়েছে তাতে স্থানীয় প্রদাহের কারণে SARS-CoV-2 হয়ত বীর্যে এসে উপস্থিত হয়েছে।’
তারা মত প্রকাশ করেছেন যে হয়ত শুক্রাশয়ের গঠনগত বৈশিষ্টের কারণে প্রতিরক্ষা কোষ গুলো SARS-CoV-2 কে নষ্ট করতে পারছে না তবে ভাইরাসটি সংখ্যাবৃদ্ধি করতেও পারছে না। উল্লেখ্য শুক্রাশয়ের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা মূলত স্বতন্ত্র ধরনের এবং এই ব্যবস্থাকে প্রিভিলেইজড ইমিউনিটি বলে।
কোভিড-১৯ অনিরাপদ যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়াতে পারে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে বলেই যে তা সংক্রামক হবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। এর আগেও কিছু গবেষণায় দেখা যায়, যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ায় না এমন অনেক ভাইরাসই পুরুষের প্রজনন তন্ত্রে টিকে থাকতে পারে। ইতিপূর্বে পুরুষের বীর্যে ইবোলা ও জিকা ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে, এমনকি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সেরে উঠার কয়েক মাস পরও ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
গবেষক দল এও মত প্রকাশ করেছেন যে, ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন। গবেষণায় যদি প্রমাণিত হয় যে SARS-CoV-2 যৌনবাহিত সংক্রমণে সক্ষম, তাহলে তা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।
তবে সে তথ্য নিশ্চিতভাবে আসার আগে রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে যৌনমিলনে বিরত থাকা বা কনডম ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকগণ। এছাড়াও এই ভাইরাস ভ্রণের বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করে কিনা তা নিয়েও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মনে করেন। এই গবেষণাটি যেহেতু রোগীর সংখ্যার দিক থেকেও ছোট আকৃতির এবং স্বল্প সময় ধরে রোগীদের পর্যবেক্ষন করা হয়েছে তাই ভাইরাস আদৌও কত দিন যাবত বীর্যে উপস্থিত থাকে, ভাইরাসে ক্রিয়াশীল থাকার সময় এবং বীর্যে ভাইরাসের ঘনত্ব ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্যও আরো গবেষণা করার প্রয়োজন আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সোর্স- edition.cnn.com
নিজস্ব প্রতিবেদক / আশরাফ মাহাদী