মাত্রাতিরিক্ত পুষ্টিহীনতা (Severe acute malnutrition/ SAM) বাংলাদেশে শিশু স্বাস্থ্য সমস্যার একটি বড় অংশ। UNICEF এবং BBS এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬ লাখ শিশু (৫ বছরের কম বয়সী) মাত্রাতিরিক্ত পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত এবং এই রোগাক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার হাসপাতালে ভর্তির পরেও প্রায় ১৫ শতাংশ। যারা মারা যায় না তাদের একটি বড় অংশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা যায়।
Icddrb এর তথ্য অনুসারে সারাবিশ্বে প্রায় ২ কোটি শিশু (৫ বছরের কম বয়সী) মাত্রাতিরিক্ত পুষ্টিহীনতায় ভুগছে যাদের প্রায় ১০ লক্ষ শিশু প্রতি বছর মারা যায়। SAM এর চিকিৎসায় সাধারনভাবে বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবারের মিশ্রন ব্যবহার করা হয় পাশাপাশি অন্যান্য জটিলতার চিকিৎসা চালানো হয়। প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাদ্য মিশ্রনটিকে RUTF (Ready to Use Therapeutic Food) নামে চিহ্নিত করা হয় এবং বিভিন্ন দেশে স্থানীয় খাদ্য উপকরনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। বানিজ্যিকভাবে একটি ফরাসী কোম্পানি Plumpy’nut নামে RUTF বাজারজাত করে এবং নেপাল, আফগানিস্তানসহ অনেক দেশে ব্যবহার করা হয় যেটি পুষ্টিহীন শিশুদের চিকিৎসায় ব্যবহার করার পক্ষে যথেষ্ট সাশ্রয়ী নয়।
একটু নতুন, সাশ্রয়ী এবং সহজপ্রাপ্য RUTF তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশে icddrb এর অধীনে প্রফেসর তাহমিদ আহমেদ এর নেতৃত্বে একদল গবেষক এ বিষয়ে গবেষনা শুরু করেন ৪ বছর আগে। স্বর্ণালী-১ এবং স্বর্ণালী-২ নামে দুটি প্রকরন তৈরি করা হয় যার মধ্যে প্রথমটি চাল ও ডালের গুড়া এবং দ্বিতীয়টি মটর সমৃদ্ধ। উপকরনগুলোকে আলাদাভাবে গুড়াদুধ, চিনি এবং সয়াবিন তেলের সাথে মেশানো হয়।
দুটি প্রকরনই সমান খাদ্যগুণ সম্পন্ন যার প্রতিই ১০০ গ্রামে ক্যালরির পরিমান ৫০০ কিলোক্যালোরি।
গবেষনার অংশ হিসেবে মহাখালি, মিরপুর এবং কুড়িগ্রামে ৩টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে মোট ৩২৭ জন মারাত্নক পুষ্টিহীন শিশুকে বুকের দুধ এবং সাধারন খাবারের পাশাপাশি স্বর্ণালী-১, স্বর্ণালী-২ এবং plumpy’nut খাওয়ানো হয়। গবেষনায় স্বর্ণালী-১ এবং Plumpy’nut এর সমপর্যায়ে কার্যকরী হিসেবে প্রমানিত হয় যা আরো অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং সহজপ্রাপ্য। গবেষনায় প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত শিশুদের ওজন বৃদ্ধির হার ছিল প্রতি দিন প্রতি কেজিতে ৯.৩ গ্রাম যেটি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি (৭.৫ গ্রাম প্রতি কেজিতে)।
আবিষ্কৃত এই নতুন RUTF কে SAM এর চিকিৎসায় মিরাকল ফুড হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের শিশু মৃত্যুর অন্যতম বড় কারন এই SAM কে প্রতিহত করার একটি নতুন সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী হাতিয়ার তৈরি হল যা শুধু বাংলাদেশেই নয় দক্ষিন এশিয়ার বাকি দেশগুলোতেও ব্যবহার করা সম্ভব।
তবে এর কনসেন্ট্রেটেড পুষ্টি উপকরন এর জন্য স্বাভাবিক সুস্থ শিশুকে খাওয়ালে বদহজমসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান icddrb নিউট্রিশন এবং ফুড সিকিউরিটি সেন্টারের ডিরেক্টর প্রফেসর তাহমীদ। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক এই সাফল্যের পর এই নতুন RUTF কে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বাংলাদেশে কমিউনিটি লেভেলে প্রয়োগ করে ফলাফল দেখা জরুরী। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিতসকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের মাধ্যমে SAM আক্রান্ত শিশুদের সনাক্তকরন এবং RUTF এর ডোজ নির্ধারন করে প্রয়োগের মাধ্যমে SAM প্রতিহতকরণ করা সম্ভব এবং প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিকে একে জাতীয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।
তথ্যসূত্রঃ icddrb, The Daily Star