লেখক-
ডা সুরেশ তুলসান।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।
একজন মহিলা রোগী আর তার অতি বেশি বুঝনেওয়ালা স্বামী।
মেয়েটির বয়স বড়জোড় ২৪/২৫।
গর্ভবতী,পেটে এটা তার তৃতীয় বাচ্চা। আগের ২ টা নরমাল ডেলিভারি।
এখন চলছে ৩৬ সপ্তাহ।
আমার কাছে স্বামীসহ এসেছেন সিজারিয়ান অপারেশনের বিষয়ে কথা বলতে।
উদ্দেশ্য দরদামের বিষয়ে যাচাই-বাছাই।
রোগী দেখাতে আসেন নাই। এসেছেন খোঁজখবর নিতে।
রোগী দেখা ছাড়া কিভাবে পরামর্শ দিবো বলাতে শেষপর্যন্ত রোগী দেখাতে রাজি হলেন।
দেখলাম ৩৬ সপ্তাহের স্বাভাবিক প্রেগনেন্সি। রিপোর্ট গুলো দেখতে চাইলাম।
শুধুমাত্র দুইটা আল্ট্রাসনো ছাড়া আর কোন রিপোর্ট করা নাই। বাচ্চার যা বয়স তাতে আরও এক মাস বাকী আছে।
রক্তের গ্রুপ জানতে চাইলাম, জানেন না।
বললাম রক্তের গ্রুপ জানেন না দুইটা বাচ্চা হয়ে গেল? যদি কোন সমস্যা হতো?
উত্তর এলো, বাচ্চা হতে আবার রক্তের গ্রুপ লাগে নাকি?
ডায়াবেটিস আছে কি না বা কখনও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলাম।
উত্তর এলো, ওর ডায়াবেটিস নাই,পরীক্ষা করা লাগবে না। সেই সাথে স্বামী বাবাজী আরও বললেন উনার (স্বামীর) নাকি এপেন্ডিসাইট (উনার ভাষ্যে) অপারেশন হয়েছে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা লাগে নাই। ঘা দিব্বি শুকিয়েছে।
বললাম আপনার তো আগের দুইটা বাচ্চাই নরমাল ডেলিভারি হয়েছে,
এবার কেন সিজারের জন্য আসলেন? নরমাল হয়ে যাবে।
স্বামী উত্তর দিলেন, জরায়ুতে ঘা আছে তাই একবারেই কাজ সারতে চান।
বললাম কাজ সারা অর্থাৎ লাইগেশন করাতে চান?
বললেন, না একবারে জরায়ু সহ ফেলে দিতে হবে।
বললাম, জরায়ুতে ঘা আছে ভালো কথা, বাচ্চাটা হয়ে যাক পরে সুযোগসুবিধা মতো জরায়ুর অপারেশন করে নিবেন। তিনি নাছোড়বান্দা, একবারেই কাজ সারতে চান।
বললাম সিজার এমনিতেই একটা ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন। বিনা প্রয়োজনে সিজার করা উচিৎ হবে না।
তারপর আবার সাথে জরায়ু ফেলে দেয়া।
ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। মোটেও উচিত হবে না।
দুজনেই সমস্বরে বলে উঠলেন, তাদের কোন কোন আত্মীয়ের সিজারের সাথে জরায়ু কাটা হয়েছে।
স্বামীর এপেন্ডিসাইট অপারেশন যিনি করেছেন সেই ডাক্তারই নাকি তাদের সেই অপারেশনগুলো করেছেন।
বললাম, অনেকসময় কিছু কারনে যেমন সিজারের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করা না গেলে সিজারের সাথে জরায়ু কাটা লাগে বাধ্য হয়ে।
তবে সচরাচর সিজারের সাথে জরায়ু কাটার নিয়ম নেই।
কিন্ত তিনি নাছোড়বান্দা।
জেগে থেকে যে ঘুমায়, তাকে বোঝাবে কার সাধ্য।
সুতরাং, সোজাসাপ্টা বলে দিলাম প্রথমত আমি বিনা প্রয়োজনে সিজার করতে পারবো না।
দ্বিতীয়ত সিজার করলেও সিজারের সাথে জরায়ু কাটতে পারবো না।
আপনারা এপেন্ডিক্স যার কাছে অপারেশন করেছেন বা আপনাদের আত্মীয়দের যিনি সিজারের সাথে জরায়ু কেটেছেন তার কাছেই যান।
নাছোড়বান্দা, না আপনাকেই করতে হবে। শুনেছি আপনার হাত ভালো। সাথে কিন্তু অবশ্যই জরায়ু কেটে দিবেন। এজন্যই তো সিজার করা।
আচ্ছা বিপদে পড়লাম। কোন ক্রমেই এড়াতে পারছি না।
শেষমেশ, অত্যাবশকীয় পরীক্ষাগুলো লিখে দিয়ে বললাম, এই পরীক্ষাগুলো লাগবেই। যদি পারেন করে নিবেন।
আর সময় হলে চলে আসবেন। আসার আগে অবশ্যই ফোন করে আসবেন। আর বলতে ভুলবেন না যেন, সিজারের সাথে জরায়ু কাটা লাগবে আপনারা সেই রোগী,যেন আমি বুঝতে পারি আপনারা কোন রোগী।
আর মনে মনে ভাবলাম আমি কুষ্টিয়াতে নাই বা এ জাতীয় কোন, মিথ্যা বলতে হলেও ফোনে রোগীকে ২৫০ বেড সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলে দিবো।
সাথে রোগীর স্বামীর একটু প্রশংসাও করে দিলাম। আপনিতো অনেক বোঝেন। আজকালতো বোঝার মতো মানুষই পাওয়া যায় না। তবে বেশি বোঝা ভালো না। কম বোঝা ভালো। একেবারেই না বুঝলে আরও ভালো।
জানিনা আমার কথার কি অর্থ বুঝলেন তিনি।
আমার হয়তো মিথ্যা বলার ছোট্ট একটা পাপ হবে,
কিন্তু রোগীর অনেক বড় উপকার হয়ে যাবে।