লিখেছেন: ডা. এ বি এম কামরুল হাসান
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ এপ্রিল, ২০২০:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম নিবেন এবং বেয়াদবি মাফ করবেন।
আপনাকে অনেকেই খোলা চিঠি লেখেন। আমি কখনোই লিখি নাই। আজই প্রথম। প্রথমেই পরিচয় দিয়ে নেই। আমি ব্রুনেইতে কর্মরত একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক। এখানকার করোনা যুদ্ধে সামনের সারির একজন সামান্য সৈনিক। আপনার মূল্যবান সময় বেশি নিবো না। শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে জানাবো। বড়ই অস্থিরতায় আছি দেশে সরবরাহকৃত এন ৯৫ মাস্ক নিয়ে।
আপনি আমাদের শেষ ভরসাস্থল। দেশে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যা হচ্ছে তাতে আমি প্রবাসী চিকিৎসক হিসাবে অস্থিরতায় ভুগছি। যুদ্ধের শুরুতেই অর্ধশতাধিক সৈনিক (শুধু ডাক্তার) আক্রান্ত হওয়া আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মনে হয় আপনার পর্যন্ত সঠিক তথ্য পৌঁছাচ্ছে না। মাঝে কেন যেন একটা দেয়াল পরিলক্ষিত হচ্ছে। এজন্যই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। যারা পজিটিভ রোগীর সেবা দিবেন তাদের এন ৯৫ মাস্ক পরিধান করা অপরিহার্য। স্বীকার করছি, এন ৯৫ মাস্ক কোথাও নাই। এটা আমেরিকা বানায়। ইউরোপ বানায় এফ এফ পি ২, এফ এফ পি ৩। চীন বানায় কে এন ৯৫। সবই একই মানের। একেক দেশে একেক নামে বানায়। আমাদের সুযোগ আছে চীন থেকে কে এন ৯৫ আনানোর। আলী এক্সপ্রেস থেকে এখনো অনলাইন এ অর্ডার দেয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবে আনলে তো কথাই নেই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে সেটা আদৌ এন ৯৫ এর সমপর্যায়ের মাস্ক নয়। ফেইসবুক এ ডাক্তারদের ক্লোসড গ্রুপে (প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরাম, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস রাইট এন্ড সেফটি ইত্যাদি) যে কেউ দেখলে বুঝতে পারবেন। দেশের প্রায় সকল ডাক্তার এসব গ্রুপের সাথে সংযুক্ত। এ ধরণের মাস্ক এর সবদিক থেকে মুখমন্ডল কে সিল করে রাখবে যাতে করে তিনি মাস্ক এর পাশ দিয়ে নয়, মাস্ক এর ভেতর দিয়ে রেস্পিরেশন নিবেন। এটা ড্রপলেট বাহিত ইনফেকশন। ভাইরাস ঢুকবে নাক-মুখ-চোখ দিয়ে। আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন সুরক্ষা সামগ্রীর কোনটা সবচেয়ে বেশি অপরিহার্য, আমি বলবো এন ৯৫ গোছের মাস্ক। তবে এই অপরিহার্যতা তাদের জন্য, যারা পজিটিভ রোগীকে কাছ থেকে সেবা দিবে। এটা ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হবেই। ব্রুনেই তে পজিটিভ রোগীদের সেবা চলছে আজ ৩৭ দিন ধরে। আল্লাহ এর রহমতে আজ পর্যন্ত কোনো স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয় নাই।
আজ আপনার সাথে লাইভ আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন বললেন, “আমরা একটাও এন ৯৫ গোছের মাস্ক পাই নাই।” উত্তরে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বললেন, “আগেও দেয়া হয়েছে, আবারো দেয়া হবে।” ফেইসবুক থেকে জানলাম, কুষ্টিয়াতে আজ যে মাস্ক দেয়া হয়েছে প্যাকেট এর ওপর লেখা আছে এন ৯৫, তবে ভেতরে অনুপযোগী মাস্ক (মাস্ক এর একটি ভিডিও দেয়া আছে সেখানে)। সংবাদপত্রে দেখলাম, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অনুপযোগী মাস্ক গ্রহণ না করাতে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল পজিটিভ রোগীর প্রধান আশ্রয়স্থল। সেখানেও উপযোগী মাস্ক দেয়া হচ্ছে না। আজ পর্যন্ত দেশের কোনো প্রান্ত থেকে শুনলাম না যে, কোথাও উপযোগী মাস্ক দেয়া হয়েছে। অথচ এন ৯৫ এর সমপর্যায়ের মাস্ক ছাড়া পজেটিভ রোগীর সেবা করলে সে আক্রান্ত হবেই, যদি কেউ আক্রান্ত না হয় তবে সেটা একটা মিরাকেল।
যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহ করছেন, হয় তারা না জেনে, না বুঝে, এটা করছেন অথবা সরকারকে বিপদে বা বিব্রত করতে এটা করছেন। জরুরি ভিত্তিতে এটার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় স্থানে উপযুক্ত মাস্ক সরবরাহ না করলে আমি সমূহ বিপদের সম্ভাবনা দেখছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশে ডাক্তারদের সুরক্ষা নিয়ে অস্থিরতায় আছি। উপায় না দেখে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। আমি মনে করি আপনি এই মেসেজটা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এটা না করলে আমাদের স্বাস্থ্য সেক্টর করোনার ভারে খুব শিঘ্রই ভেঙে পড়ার আশংকা করছি।
আপনি ভালো থাকবেন। আপনার সুস্বাস্থ্য এবং করোনামুক্ত জীবন কামনা করছি।
একজন অতি সামান্য করোনা যোদ্ধা।
ডা. এ বি এম কামরুল হাসান
অ্যানাসথেসিয়া বিভাগ, রিপাস হাসপাতাল
বন্দর সেরি বেগাওয়ান, ব্রুনেই দারুসসালাম
ইমেইল: [email protected]