শনিবার, ২০ জুন, ২০২০
ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড হসপিটাল।
ডা. রাইয়িক রিদওয়ান
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল
সামনে ধেয়ে আসা বিপদ থেকে সাবধান করছি।
১) একটা ওষুধ গ্রহণ করার আগে কী কী মাথায় রাখা উচিত?
উত্তর: প্রথমত, যে অসুবিধার জন্য ওষুধটি গ্রহণ করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে এটি কাজ করে কি না। দ্বিতীয়ত, ওষুধটি আমাদের শরীরের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ কি না। এ দুটোর উত্তর ‘না’ হলে সে ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে না।
২) তার মানে কী যে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে সে ওষুধ গ্রহণ যাবে না?
উত্তর: বিষয়টি আসলে তেমন না। প্রায় সব ওষুধেরই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তবে যেসব ওষুধের অনেক বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, সেগুলো অহরহ না ব্যবহার করে, ‘শেষ অস্ত্র’ হিসেবেই রাখা উচিত।
৩) শোনা যাচ্ছে নতুন একটি ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে ‘ডেক্সামেথাসোন’?
উত্তর: এটি আরও বহু বছর আগ থেকেই বিভিন্ন রোগে ব্যবহার হয়ে এসেছে। নতুন কোনো ওষুধ না। এটি এক ধরনের স্টেরয়েড।
৪) ডেক্সামেথাসোন কি কোভিডে কাজ করে?
উত্তর: যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি এবং অক্সিজেন লাগছে অথবা ভেন্টিলেটরে আছে গবেষণায় শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভেন্টিলেটরে আছে তাদের মৃত্যুহার ৩৪% এবং যাদের অক্সিজেন লাগছে তাদের মৃত্যুহার ২০% পর্যন্ত কমে।
৫) কীভাবে কাজ করে ডেক্সামেথাসোন?
উত্তর: ওষুধটি মূলত দুভাবে কাজ করে। শরীরের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশানের বিরুদ্ধে কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে কাজ করে।
৬) যেহেতু ওষুধটি কোভিডে কাজ করছে বলা হচ্ছে, তাহলে আগে থেকেই ওষুধটি খাওয়া শুরু করা যাবে কি?
উত্তর: মোটেও না। বরং আগে থেকে খেলে রোগটি আরও খারাপ দিকে যেতে পারে৷ সেই সাথে এই ওষুধের কারণেই শরীরে জুটতে পারে আরও অন্যান্য রোগ। এই ওষুধের রয়েছে অনেক অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সিভিয়ার/ক্রিটিক্যাল কোভিড হলে চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হচ্ছে কিন্তু এটা কোনোভাবেই এটি কোভিড প্রতিরোধ করে তা না৷ অর্থাৎ কেউ যদি মনে করে এই ওষুধটি খেলে কোভিড হবে না, সেটি বড্ড বোকামি হবে।
৭) ওষুধটির কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
উত্তর: অনেক লম্বা তালিকা করতে হবে। এখানে শুধু কয়েকটি উল্লেখ করছি।
– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে ইনফেকশানের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।
– পেটে আলসার হওয়া।
– রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া।
– রক্তের শুগার বেড়ে যাওয়া।
– কুশিং সিন্ড্রোম নামে ভয়ঙ্কর রোগ হওয়া।
– হাড় ক্ষয়ে যাওয়া।
– দুর্বলতা।
– রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।
– চামড়ায় র্যাশ হওয়া।
– ওজন বেড়ে যাওয়া।
– মাথা ব্যথা।
– অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা।
– ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।
এছাড়া হঠাৎ করে ওষুধটি বন্ধ করে দিলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
৮) তাহলে মূলকথা কী দাঁড়ালো?
উত্তর: খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়া কোভিড রোগীদের জীবন রক্ষাকারী এক ওষুধ হতে পারে ডেক্সামেথাসোন। ঠিক তেমনই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করলে ডেকে আনতে পারে মারাত্নক পরিণতি। যার কোভিড হয়নি কিংবা সাধারণ কোভিড, তাদের জন্য এই ওষুধটি কার্যকর তো নয়ই বরং ক্ষতিকর হতে পারে।