প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ই জানুয়ারি ২০২১, শনিবার
লেখাঃ ডা. ফাহমিদা রশীদ স্বাতি
সহকারী অধ্যাপক
গাইনি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
টিভি খুললেই টিকার খবর; পত্রিকার পাতায় পাতায় টিকার খবর, মানুষের মুখে মুখে টিকা পাবার ও নেয়ার খবর- সাথে আবার টিকার সাথে জড়িত টাকার খবর!!!
যারা প্রেগন্যান্ট বা ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছেন তারা এসময় সবচেয়ে আতংকে। শুধু নিজের জন্য নয়, অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য। মনে মনে আশা করে আছে তারা- টিকা পাবে তো!? পেলেও নিতে পারবে তো?
তাদের হতাশ করছি আজকে।
চলতি মাসের ১২ তারিখে প্রকাশিত RCOG, CDC এর তথ্য মতে-
শুধুমাত্র কিছু কিছু প্রেগন্যান্ট মহিলাকে কোভিড টিকা দেয়া যাবে। তারা হলো- যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি বা যারা ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত বা যারা ঝুঁকিপূর্ণ সমাজসেবী বা যাদের এমন কোন রোগ আগে থেকে আছে যার কারণে করোনা হলে তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
এখনো পর্যন্ত প্রেগন্যান্ট মহিলা ও ব্রেস্ট ফিডিং এর উপর টিকার ট্রায়াল শেষ হয়নি। তারপরও একজন প্রেগন্যান্ট মহিলা টিকা নিবে কিনা, তা তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে তা হওয়া উচিত টীকার সব রকম তথ্য জানার পরে।
টিকা নেওয়ার ব্যাপারে যেসব তথ্য অবশ্যই জানা উচিত–
– টিকা নিলে গর্ভবতী মায়েরা হয়তো করোনা ভাইরাস এ এক্সপোজার হতে পারে।
-এতে, তাদের ও গর্ভস্থ শিশুর কোভিড হতে পারে।
-টিকা ও প্রেগন্যান্সির উপর গবেষণা তথ্য নাই এখনো।
কাদের টিকা দেয়া যাবে?
এখন পর্যন্ত গবেষণা মতে নীচে উল্লেখিত প্রেগন্যান্ট মহিলারা টিকা নিতে পারবে-
১. যারা ঝুঁকিপূর্ণ কোন রোগে ভুগছে যার কারণে কোভিড হলে তীব্র কোভিড হবার ঝুঁকি আছে।
২. স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা কর্মী- যাদের কোভিড হবার তীব্র সম্ভাবণা আছে।
যে সব রোগ থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়–
১. অঙ্গ প্রতিস্থাপন।
২. ক্যান্সার চিকিৎসারত।
৩. বোনম্যারো বা স্টেমসেল প্রতিস্থাপিত হয়েছে গত ৬ মাসের মধ্যে এমন কেউ।
৪. ফুসফুসের তীব্র কোন রোগ। যেমন- সিস্টিক ফাইব্রোসিস, তীব্র এ্যাজমা।
৫. যেসব কারণে শরীরে প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন- এইডস, রক্তের সিকল সেল রোগ।
৬. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এমন কোন ওষুধ যদি খায় যার কারণে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
৭. যদি কারো প্লীহা না থাকে।
৮. ডাউন সিনড্রোম এর রোগী।
৯. কিডনির তীব্র কোন সমস্যা বা কেউ যদি ডায়ালাইসিসরত থাকে।
১০. তীব্র হৃদরোগ।
১১. যদি কোভিড চিকিৎসা টীম মনে করে প্রেগন্যান্ট মহিলার এমন কোন সমস্যা রয়েছে যার কারণে কোভিড টিকা নেয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় উপরের যে কোন কারনে টিকা নিলেও তার নীচের নিয়মগুলো পালন করে যেতে হবে। যেমন-
১. মাস্ক পরা
২. সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা
৩. জনসমাগম পরিহার
৪. বারে বারে হাত ধোয়া
প্রেগন্যান্সির আগে টিকার সুবিধাঃ
গর্ভাবস্থায় করোনা হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেগন্যান্ট মহিলার কোভিড হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি লাগে বেশি, তাদের তীব্র কোভিড হবার সম্ভাবনাও বেশি(বিশেষ করে কেউ যদি গর্ভাবস্থার শেষ ভাগে থাকে)। তাদের অনেকের সঠিক সময়ের আগেই প্রসব হবার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। দেখা যায় যেসব গর্ভবতীর আগে থেকেই অন্য কোনো রোগ আছে তাদের তীব্র কোভিড হবার সম্ভাবনা বেশি। এসব কারণে যারা প্রেগন্যান্ট হবার কথা চিন্তা করছেন, তারা আগেভাগেই কোভিড টিকা নিয়ে নিলে ঝুঁকির সম্ভাবনা কমে যায়।
টিকার আগে করোনা টেস্ট করানোর দরকার নাই যদি না তার উপসর্গ থাকে। যারা টিকা নেয়ার পর বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা করছে তাদের সন্তান ধারণের চেষ্টা করতে কোনো বাধা নাই – যদি সে mRNA টিকা নিয়ে থাকে।
টিকায় কি করোনা হয়?
এক কথায় উত্তর -“না”। কেননা, এই টিকায় কোনো জীবিত করোনা ভাইরাস থাকে না। এটা mRNA টিকা। এ টিকায় এমন কোনো উপযোজক নাই যা গর্ভাবস্থায় মা ও অনাগত সন্তানের ক্ষতি করবে। করোনা টিকা ছাড়াও আরো যে সব নন-লাইভ টিকা আছে সেগুলোও প্রেগন্যান্সিতে নিরাপদ। যেমনঃ হুপিং কাশির, ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা।
গর্ভবতীদের উপর কোন গবেষণা লব্ধ ফলাফল নাই এখন পর্যন্ত। গর্ভবতীদের উপর এ টিকা কাজ করে কিনা অথবা নিলে এবরশন কিংবা গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক কোন সমস্যা হবে কিনা সে ব্যাপারেও কোন সঠিক তথ্য জানা যায় নি। তবে এখনো পর্যন্ত যাদের দেয়া হয়েছে তা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে এটি কার্যকর ও নিরাপদ।
টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
১. ইনজেকশন এর জায়গায় প্রদাহ
২. মাথাব্যথা
৩. দুর্বলতা
৪. মাংসপেশির ব্যথা
৫. জ্বর
৬. জয়েন্ট ব্যথা
এই ২০২১ এর শুরুতে একটাই প্রার্থনা- পৃথিবী করোনামুক্ত হোক, বিজ্ঞানীরা এমন কোভিড টিকা তৈরি করুক যা মা ও অনাগত শিশু দুজনকেই করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা দিবে।সেদিনের অপেক্ষায় পুরো পৃথিবী।