প্লাজমা লিকেজের ব্যাসিক কনসেপ্ট

কত পার্সেন্ট প্লাজমা লিকেজ হচ্ছে, কিভাবে বুঝবেন? 

প্লাজমা লিকেজ :
রক্ত থেকে জলীয় অংশ রক্ত নালীর বাহিরে চলে আসাকে প্লাজমা লিকেজ বলে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ব্লাড ভেসেলের ক্যাপিলারি সমূহে
ইনফ্লামেশন হয়ে ক্যাপিলারি পারমিয়াবিলিটি বেড়ে যায়,  প্লাজমা ফ্লুইড ভেসেল থেকে বেরিয়ে চলে আসে।

একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রায়  ৫ লিটার রক্ত থাকে,, তার মধ্যে প্লাজমা হচ্ছে ৫৫%,  এই প্লাজমা যদি রক্তনালী (ব্লাড ভেসেল)  থেকে বেরিয়ে  যায়, তাহলে রক্তের ভলিউম কমে যাবে, হাইপো ভলিউমিয়া হবে,  হাইপোভলিউমিয়া হলে ব্লাড প্রেশার কমে যাবে,
তথা হাইপোটেনশন হবে.  হাইপোভলিউমিয়ার কারণে হাইপোটেনশন হলে যে সব সমস্যা হতে পারে :

১.
যদি হাইপোটেনশন হয়, তাহলে কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যাবে, তখন পারফিউশন কমে যাবে, অর্থাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যাবে।  রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে হাত পায়ে পরিমিত রক্ত সঞ্চালিত হবেনা,
তাই হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবে,  যাকে বলা হয়
cold clammy periphery. আবার কিডনিতে
হাইপোপারফিউশন হবার কারণে রেনাল ফেইলুর হতে পারে, এতে করে ইউরিন আউটপুট কমে যাবে।

২.
হাইপোটেনশন হবার কারণে যেহেতু সারা শরিরে স্বাভাবিক ভাবে রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছেনা, এবং কিডনিতেও হাইপোপারফিউশন হচ্ছে, তাই
Renin Angiotensin Aldosterone system Active হবে,পেরিফেরাল ভাস্কুলার রেজিস্টেন্স বৃদ্ধি পাবে,
এতে করে সিস্টোলিক প্রেশার ও ডায়াস্টোলিক প্রেশারের ব্যবধান কমে আসবে।  নরমালী সিস্টোলিক প্রেশার হচ্ছে 120 mmhg আর ডায়াস্টোলিক
হচ্ছে 80 mmhg,  সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক এর ব্যবধান প্রায় 40 mmhg. এই ব্যবধান কে পালস প্রেশার বলে।।।  কিন্ত যখন হাইপোভলিউমিয়া থাকবে, এবং সাথে  পেরিফেরাল ভাস্কুলার রেসিস্টেন্স থাকবে,
তখন সিস্টোলিক আর ডায়াস্টোলিক এর ব্যবধান কমে যাবে। কারণ পেরিফেরাল ভাস্কুলার রেজিস্টেন্স এর কারণে ভেসেল সমূহ সংকুচিত হয়ে থাকবে,  তাই সিস্টোলিক প্রেশার আর ডায়াস্টোলিক প্রেশার কাছাকাছি থাকবে।  সিস্টোলিক ১০০ হলে ডায়াস্টোলিক ৮০ বা ৮৫ তে চলে আসবে,
সিস্টোলিক ৯০ হলে দেখা যাবে ডায়াস্টোলিক ৭৫ থেকে ৮০। এইটা নির্ভর করবে কি পরিমান প্লাজমা লিকেজ হয়েছে তার উপর।।

সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক এর ব্যবধান যদি ২০ এর নিচে নেমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে পেশেন্ট Compensated  shock  এ রয়েছে। যা খুবই দ্রুত সময় ফ্লুইড দিয়ে কারেক্ট না করলে রোগী যে কোনো মুহুর্তে হাইপো ভলিউমিক শকে চলে যাবে,  এবং কার্ডিয়াক ফেইলুর হয়ে মারা যাবে।

সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেশারের ব্যবধান কমে যাওয়াকে Narrow pulse pressure বলে. যা Congestive cardiac failure এবং Hypovolemic shock এর ক্ষেত্রে দেখা দেয়।। এই অবস্থাতেও পেশেন্ট
স্বাভাবিক কথা বার্তা বলতে পারবে।।।

৩.
হাইপোভলিউমিয়ার কারণে যখন অর্গান সমূহে ব্লাড সাপ্লাই কমে যায়, তখন হার্ট চেষ্টা করবে শরিরে
স্বাভাবিক ভাবে রক্ত সঞ্চালন চালু রাখতে, তাই হার্ট খুব দ্রুত contraction হতে থাকবে,,  এতে করে হার্ট রেট বেড়ে যাবে, টাকিকার্ডিয়া দেখা দিবে।।।।

৪.
এইভাবে কিছুক্ষণ ধারাবাহিক ভাবে থাকলে অর্থাত
ন্যারো পালস প্রেশারের কয়েক ঘন্টার মধ্যে যদি ফ্লুইড ভলিউম  কারেকশন করা না হয়, তাহলে
profound Hypovolemic shock develop করবে,
পালস খুব weak হয়ে যাবে,  অথবা পালস নাও পাওয়া যেতে পারে,  প্রেশার সিস্টোলিক ৬০-৭০ এ চলে আসবে,  মাল্টি অর্গান ড্যামেজ হতে থাকবে,,  হাইপোক্সিয়া দেখা দিবে,, মেটাবলিক এসিডোসিস হবে ,  এবং কার্ডিও-রেস্পাইরেটরি এরেস্ট হয়ে পেশেন্ট মারা যাবে।

এবার আসি,  কি পরিমান প্লাজমা লস হচ্ছে তা কিভাবে বুঝবো??

প্রথমে একটি কথা মনে রাখা চাই, WHO Dengue গাইড লাইন অনুযায়ী জ্বর শুরু হবার ৪র্থ ও ৫ম দিন
প্লাজমা লিকেজ হয়ে থাকে।
সর্বোমোট ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত প্লাজমা লিকেজ হয়,  এই কারণে ৪র্থ দিন থেকে নিয়ে রিকভারি উপসর্গ  দেখার আগ পর্যন্ত সময়
কে ক্রিটিক্যাল স্টেজ বলে ।

প্লাজমা লিকেজ বোঝার জন্য যা করতে হবে :

১.
ডেঙ্গু জ্বর শুরু হবার ১-২ দিনের মধ্যে একটি CBC /PCV টেস্ট করে নিবে,  সেখানে হেমাটোক্রিট লেভেল টা ভালোভাবে দেখে নিবে।।

২.
এর পরে প্রতিদিন Repeated CBC করবে, অবশ্যই  কোনো ডেঞ্জার সাইন দেখা না দিলে ৪র্থ দিন
CBC করলেও চলবে, যাই হোক, রিপিটেড CBC/PCV  এর মধ্যে হেমাটোক্রিট লেভেল পর্যবেক্ষণ করবে,  যদি
হেমাটোক্রিট লেভেল পূর্বের রিপোর্টের  তুলনার  বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে প্লাজমা লিকেজ হচ্ছে।

৩.
প্লাজমা লিকেজের ক্লিনিক্যালি নিদর্শন হচ্ছে Ascites ও Plural effusion  দেখা দিবে।।

৪.
প্লাজমা লিকেজের উপসর্গ হিসাবে পেটে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিবে।।

৫.
প্লাজমা লিকেজের কারণে হাইপোটেনশন হবে বা ব্লাড প্রেশার কমে যাবে..ট্যাকিকার্ডিয়া ও হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবে।।।

৬.
২০% এর বেশি প্লাজমা লিকেজ হলে Severe plasma leakage হিসাবে বিবেচনা করা হবে,  পেশেন্ট শকে চলে যেতে পারে।

কত পার্সেন্ট প্লাজমা লিকেজ হয়েছে তা কিভাবে বুঝতে পারবেন????

একটি ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে তা বুঝতে পারেন :

মনে করুন,
আশিক মাহমুদের ডেঙ্গু জ্বর, উনি
জ্বরের ২য় দিন হেমাটোক্রিট দেখলেন ৪২%
এবং জ্বরের  ৪র্থ দিন দেখলেন, ৫৪% ,   তাহলে এখন বুঝতে হবে কত % প্লাজমা লিকেজ হয়েছে,  কারণ এইটা না বুঝলে রোগীর পর্যাপ্ত কেয়ারিং হবেনা।

হেমাটোক্রিট ৪২ % থেকে ৫৪%,  আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ১২% প্লাজমা লস হয়ে ১২% ইউনিট  হেমাটোক্রিট বৃদ্ধি পেয়েছে তাইনা???  তবে বিষয় টা মোটেও এমন না।

আসুন হিসাব করে দেখি..
প্রথম রিপোর্টের হেমাটোক্রিট ছিলো ৪২%
অর্থাৎ ৪২% হেমাটোক্রিটের সাথে Circulation এর সব প্লাজমা সংযুক্ত ছিলো। Circulation এর পরিপূর্ণ প্লাজমা কে ১০০% হিসাবে বিবেচনা করুন.

তার মানে কি দাড়ালো,  ৪২% হেমাটোক্রিট এর সাথে আছে ১০০% প্লাজমা।

তাহলে ১% হেমাটোক্রিট এর সাথে ছিলো =
(১০০÷৪২)% = ২.৩৮% প্লাজমা।।
1% HCT =Equivalent to 2.38% প্লাজমা

আমরা জানি প্লাজমা লস হলে হেমাটোক্রিট বেড়ে যায়,
সুতরাং ১% হেমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে
২.৩৮% প্লাজমা লস হওয়া।।।
অর্থাৎ উপরে উল্যেখিত ব্যক্তির শরিরে ২.৩৮% প্লাজমা
লস হলে ১% করে হেমাটোক্রিট বাড়বে.

আমরা দেখতে পেয়েছি, উপরে উল্যেখিত ব্যক্তির হেমাটোক্রিট বেড়েছে,  ৫৪-৪২=১২%  ইউনিট
তাহলে তার মোট প্লাজমা লস হয়েছে
১২*২.৩৮=  ২৮.৫৭%.

আমরা জানি ২০% প্লাজমা লস হলেই পেশেন্ট severe dengue stage এ চলে যায়।।

তাই হেমাটোক্রিটের দিকে সর্বোচ্ছ দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রথম হেমাটোক্রিট লেভেলের সাথে সব সময় ২য়
হেমাটোক্রিট লেভেলের তুলনা করে কত পার্সেন্টে( %) প্লাজমা লস হচ্ছে তা বের করে নিবে। আর প্লাজমা লিকেজ শুরু হলেই রোগীকে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে
ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট দিয়ে ব্লাড ভলিউম কারেকশন করবে,  প্রেশার নরমাল লেভেলে আনবে।

প্লাজমা লিকেজ হিসাব করার জন্য  উপরের নিয়ম
ফলো করবে,,
( ১০০ ÷ প্রথম দিনের HCT)=
যেই ফলাফল আসবে তা হচ্ছে ১% ইউনিট  হেমাটোক্রিট বৃদ্ধির সাথে প্লাজমা লিকেজের পার্সেন্টেজ।।

এবার নিজে সমাধান করুন,

শাফিয়া বেগমের প্রথম  HCT =37%
২য় HCT = 44.4.
তাহলে ওনার প্লাজমা লিকেজের পরিমান কত???

মূল লেখক
Ismail Azhari
DCMC :13-14

platform feature writer
Sumaiya Nargis
STAMC
Session :2016/17

Special Correspondent

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হলো ডেঙ্গু বিষয়ক সচেতনতার ক্যাম্পেইন

Wed Aug 7 , 2019
Awareness Campaign On Dengue Fever. Organized by Marqee Foundation In Associated With Platform Supported by Digital Hospital Cox’s Bazar. আমরা আজ কক্সবাজার জেলার ছয়টি স্কুলে ডেঙ্গু বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন ও লিফলেট বিতরণ করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো হলো- কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি, খুরুশকুল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo