বাংলাদেশের কোন মিডিয়াতেই মেডিক্যাল কারেসপন্ডেন্ট কিংবা সংবাদদাতা নেই।অথচ প্রতিদিন টিভি চ্যানেল খুললে কিংবা পত্রিকার পাতা উল্টালে আমরা চিকিৎসা সংক্রান্ত কিংবা চিকিৎসক সংক্রান্ত অনেক নিউজ দেখে থাকি।যে নিউজগুলো করে থাকেন সংশ্লিষ্ট মিডিয়ার স্টাফ রিপোর্টার কিংবা বিশেষ সংবাদদাতা যাদের মেডিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড তো দূ্রের কথা সায়েন্সের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে কিনা সে ব্যাপারেও যথেস্ট সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান কতটুকু বেড়েছে জানিনা তবে ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে।এক সময়ে তেরোটি মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও এখন সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় ষাটটি মেডিক্যাল কলেজ।এই ‘এক-সময়’ মানে এমন না যে এক-শতাব্দী আগের ‘এক-সময়’।এই একসময়ের বয়স সাকুল্যে সতেরো কী আঠারো!
বেসরকারী খাতে হাজার হাজার ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।বিদেশী বেনিয়ারা হাসপাতাল খুলে বসেছে।দেশে বিদেশী হাসপাতালের আঞ্চলিক অফিস গড়ে উঠেছে।এমন কী রাস্ট্রের গ্রাস-রুট লেভেলেও এই সংবেদনশী্ল পেশার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে।আগে উপজেলা লেভেলে একজন এম বি বি এস ডাক্তারের দেখা না মিললেও এখন ইউনিয়নেও উনাদের পোস্টিং হচ্ছে!
এই ঘটনাগুলোকে কে কী বলবেন? চিকিৎসা-শিল্পের ব্যাপক প্রসার, নাকি চিকিৎসা-সেবার অতি প্রতুলতা,নাকি চিকিৎসার কথা বলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার বানিজ্য?
জানিনা!
তবে সেটা যাই হোক এই সংবেদনশীল পেশার কলেবর বহুগুনে বেড়েছে।
এ অবস্থায় রাস্ট্রের মিডিয়াগুলোর দায়িত্বও বেড়েছে।যে মানুষ পয়শা দিয়ে সংবাদ কিনে খাবে তাকে সঠিক সংবাদটা দেয়াও মিডিয়ার দায়িত্ব!চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন নিউজ করতে গিয়ে যদি গ্রামের কোয়াক কর্তৃক তরুনীর শ্লীলতাহানির ঘটনাকে লিখে দেন-‘চিকিৎসক কর্তৃক তরুনী ধর্ষিত’ কিংবা ‘কলেরার’ জীবানু কে ভাইরাস বলে চালিয়ে দেন কিংবা রোগীর লোকজনের মুখের কথার উপর বিশ্বাস করে যদি ছেপে দেন ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’ তবে সেটা সাংবাদিকতা হবে নাকি অপসাংবাদিকতা হবে সেটার বিচারের ভার আপনাদেরই হাতে।
আমার জানামতে বাংলাদেশের সবকয়টি টিভি চ্যানেলেই চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।সেখানে যিনি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে থাকেন তারা বলতে গেলে সবাই ডাক্তার।একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য যদি ডাক্তার ব্যবহার করার ব্যবসায়িক উপযোগীতা তৈরী হয় তবে একটি নিউজ তৈরী করার জন্য কেনো নয়?
একটি ভুল নিউজের সামাজিক ইমপ্যাক্ট অনেক বেশী!
একজন চিকিৎসক বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে তার পেশায় যে ব্যক্তিগত ‘গুড-উইল’ তৈরী করেন সেটা একটি ভুল-রিপোর্টিং এর কারনে মুহুর্তের মধ্যেই ধসে যেতে পারে।
সেটার উদাহরন ভুরি ভুরি!
এই তো কদিন আগে সিলেটের একজন স্বনামধন্য সার্জনের বিরুদ্ধে খবর এসেছে তিনি পেটে প্লাস্টিকের নল রেখে এসেছেন।ডি যে স্টেন্ট করা চিকিৎসারই একটা অংশ।অথচ সেটাকেই রিপোর্টার লিখে দিলেন ‘ভুল-চিকিৎসা’।
যা হওয়ার তাই হলো,বেচারা সার্জনের তিল তিল করে গড়ে তোলা সুনাম মাটিতে মিশে গেলো!
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টেকনিক্যাল সাবজেক্ট গুলোতে নিউজ টেকনিক্যাল পার্সনরাই করে থাকেন।বিজ্ঞান বিষয়ক নিউজগুলো তৈরী করতে বিজ্ঞানী নিয়োগ না দিলেও বিজ্ঞানের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এমন ব্যক্তিবর্গই নিউজগুলো করে থাকেন।
চিকিৎসা সংক্রান্ত নিউজগুলোতে প্রফেশনালিজম না এলে দেশের স্বাস্থ্যের রুপ রস গন্ধ (?) মারাত্নকভাবে হুমকির মুখে পড়বে,বিদেশী বেনিয়ারা এসে সব লুটে খাবে,কিংবা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অরক্ষিত থাকবে।
তাই এটা সময়ের দাবী যে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নিউজের জন্য সব মিডিয়াতে একটি মেডিক্যাল ডেস্ক থাকুক এবং সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এমন কেউ কাজ করুক।যেকোনো নিউজের টেকনিক্যাল স্ক্রুটিনি করে সেটা খবরে আসুক।
এতে দেশের স্বাস্থ্যের চেহারা ভালো বৈ খারাপ হবে না…