বাংলাদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়ে দেশে গেলেন, এলেন প্রধান মন্ত্রী হয়ে
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২৮তম ব্যাচের ছাত্র লোটে শেরিং। এখান থেকেই এমবিবিএস ও এফসিপিএস শেষ করে নিজ দেশ ভুটানে পাড়ি জমান তিনি। এবার লোটে শেরিং বাংলাদেশে এলেন নতুন পরিচয়ে। দেশ তাকে সংবর্ধনা দিল লাল গালিচায়। তিনি আর কেউ নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
রয়্যাল ভুটান এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমান (ড্রুক এয়ার) ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, তার স্ত্রী এবং সফরসঙ্গীদের নিয়ে সকাল ৮টা ৮ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে। সেখানে ড. লোটের আগমন উপলক্ষে ১৯ বার তোপধ্বনি ধরা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে স্বাগত জানান। এ সময় ছোট্ট দুটি শিশু ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।
পরে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যদের গঠিত একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
এ সময় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচয় করান।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ, তিনবহিনীর প্রধানগণ, কূটনৈতিক কোরের ডিন এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা পর্ব শেষে একটি সুশোভিত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন।
ভুটানের নির্বাচনের পূর্বে একটি গণমাধ্যম দেশটির প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারে বলেছিল, ডা. লোটে শেরিংয়ের প্রোফাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতায় লেখা আছে এমবিবিএস ঢাকা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান।
সেখানে আরও বলা হয়েছিল, ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথমে এমবিবিএস এবং পরে বাংলাদেশে জেনারেল সার্জারি বিষয়ে এফসিপিএস করেন। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ১৮তম ব্যাচের ছাত্র।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ডা. লোটে ভুটানের সিভিল সার্ভিস ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে যোগ দেন।
সফরের প্রথম দিন বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেল কক্ষে সাক্ষাৎ করবেন।
পরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে একটি ব্যবসায়িক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
শনিবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে (পিএমও) এক বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকের পরে, দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, অভ্যন্তরীন কার্গো চলাচল সংক্রান্ত সহযোগিতা, স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাত সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
পরে সন্ধ্যায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তার সম্মানে হোটেল প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত নৈশ ভোজে তিনি যোগদান করবেন ।
১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে তিনি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারা আয়োজিত বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক আয়োজনে যোগ দেবেন। একই দিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে থেসারিং সেখানকার পুনর্মিলনীতে যোগ দেবেন এবং সেখানে ভাষণ প্রধান করবেন।
সফর শেষে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ১৫ এপ্রিল সকালে ঢাকা ত্যাগ করবেন।