মঙ্গলবার ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)-এর শহীদ ডা. মিলন হলে দিনব্যাপী বাংলাদেশ স্টেমসেল অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন সোসাইটির প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল ।
লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন রোগীকে সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিএসএমএমইউ’র স্টেম সেল থেরাপি । লিভার অকার্যকর ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্তসহ বিভিন্ন রোগীকে সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত স্টেম সেল থেরাপি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগ, হেপাটোলজি (লিভার) বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্টেম সেল থেরাপি লিভার সিরোসিস ছাড়াও ত্বকের ঘা, স্পাইনাল কর্ডে ইনজুরি, ডায়াবেটিস, হার্ট অকার্যকর, চোখের রোগসহ বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ জন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর দেহে স্টেমসেল প্রতিস্থাপন করে ৩৪ জনের ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ওই সকল রোগীর লিভারের অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং অকার্যকর লিভার কাজ করতে শুরু করেছে। এটা একটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর চিকিৎসা বিষয়ক আবিষ্কার ও সফলতা।
লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের দেহে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন দিয়ে স্টেমসেলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। রক্ত থেকে স্টেমসেল আলাদা করে পরবর্তীতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে তার লিভারে অটোলোগাস পদ্ধতিতে স্টেমসেল প্রতিস্থাপন করা হয়।
এই সম্মেলনে জাপান, ইরান ও ভারতের পাঁচজন বিশেষজ্ঞসহ অর্ধশতাধিক দেশীয় বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ স্টেমসেল অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন সোসাইটির সভাপতি ও বিএসএমএমইউ-এর হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরানের এ্যাম্বাসেডর চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইব্রাহীম সাফি রিজওয়ানি নেজাদ (Mr. Ebrahim Shafi Rizwani Nezad), ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি অফ ইকোনোমিক্স মিস জিনা ইউকি (Ms. Gina Uiki), জাপানের ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, ইরানের ডা. হামিদ রেজা আগায়ান (Dr. Hamid Reza AGhayan) প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল ও বিএসএমএমইউ-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, স্টেম সেল থেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন আঙ্গিক ও সংযোজন। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এ পদ্ধতির সফল বাস্তবায়নে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা প্রদান করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন,
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ জন রোগীর দেহে স্টেমসেল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এটা একটা বিরাট অর্জন। স্টেম সেল থেরাপি ব্যবহার করে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা যায় সেটা এখন আর শুধু স্বপ্ন নয়, এটা এখন এক সুন্দর বাস্তবতা। ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রিজেনারেটিভ মেডিসিন নিয়েও কার্যক্রম শুরু করা হবে। “
সম্মেলনে বাংলাদেশ স্টেমসেল অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) জানান, স্টেমসেল অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনন্য সংযোজন। প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে স্টেমসেল থেরাপি নিয়ে তারা কাজ করছেন। লিভার বিশেষজ্ঞ হিসেবে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যথাযথ অনুমোদন নিয়ে লিভার সিরোসিস রোগীদের স্টেমসেল ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন।
ছবি: সোহেল গাজী। তথ্য : প্রশান্ত মজুমদার।