একটা প্রশ্ন আমি প্রায়ই পেয়ে থাকি জুনিয়রদের থেকে “ভাইয়া আমি বাইরে পড়াশুনা করতে চাই, সেক্ষেত্রে আমি কি বাংলাদেশে MPH করবো কিনা?” প্রশ্নটির কোন সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। তবে আমি নিজে MPH করেছি বাংলাদেশে এবং আমি বিশ্বাস করি এটা আমাকে আমার আজকের পজিশনে আসতে অনেক সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশে MPH করলে তা কিভাবে বাইরের ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন এবং ফান্ডিং পেতে সাহায্য করতে পারে সেই সম্পর্কে আমি নিচে ৫টি পয়েন্টে বলার চেষ্টা করেছি।
১। রিসার্চ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জনঃ
আমাদের মেডিকেল কারিকুলাম আমাদেরকে ডাক্তার হতে শেখায়, রিসার্চার নয়। এমবিবিএস শেষে আমাদের সবারই রিসার্চ সম্পর্কে ধারণা এবং জ্ঞান থাকে খুবই সীমিত। তাই MPH করতে এসে আমাদের প্রায় সকলেরই রিসার্চ সম্পর্কে হাতেখড়ি হয়।
২। রিকমেন্ডেশন লেটার পেতে সুবিধাঃ
বাইরের ইউনিভার্সিটিগুলোতে আ্যপ্লাই করার সময় আপনার টিচারদের থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিয়ে জমা দিতে হয়। এবং অধিকাংশ সময় সেটা প্রফেসরদের অফিসিয়াল ইমেইল থেকে পাঠাতে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোর প্রফেসরদের অফিসিয়াল ইমেইল থাকে না। তাই রিকমেন্ডেশন লেটার জমা দেয়ার সময় বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। MPH করা যায় এমন সব ইউনিভার্সিটি এর প্রফেসরদের অফিসিয়াল ইমেইল থাকাতে এই প্রসেসটা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। আর যদিওবা মেডিকেল এর টিচার থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নেয়া হয়, সেখানে আপনার রিসার্চ কাজ নিয়ে উনার তেমন কিছু বলার থাকেনা। MPH এ আপনি রিসার্চ মেথড নিয়ে পড়বেন, থিসিস করবেন – তাই আপনার প্রফেসর আপনার সম্পর্ক এ সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবেন।
৩। থিসিস করার সুযোগঃ
বাইরের ইউনিভার্সিটিতে সবাই আন্ডারগ্র্যাড করার সময়ই থিসিস করে, এমনকি ডাক্তারি পড়লেও। তাই পোস্টগ্র্যাডে অ্যাপ্লাই করার সময় ওরা আপনার থিসিস নিয়ে জানতে চায়। আপনার থিসিস থেকে আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট এবং রিসার্চ করার যোগ্যতা সম্পর্কে ওরা একটা ধারণা করতে পারে। আমরা যেহেতু মেডিকেলে থিসিস করি না, তাই MPH এর থিসিস আপনাকে বাইরের ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন এবং ফান্ড পেতে সাহায্য করবে। আর থিসিস থেকে যদি পাবলিকেশন করতে পারেন, তাহলে তো সোনায়-সোহাগা।
৪। বেসিক বায়োস্ট্যাটিস্টিকস কোর্সঃ
অনেক ইউনিভার্সিটিতেই এডমিশনের শর্ত থাকে যে বেসিক বায়োস্ট্যাটিস্টিকস কোর্স করা থাকতে হবে। আমাদের মেডিকেল ট্রান্সক্রিপ্টে এই ধরণের কোন কিছু উল্লেখ করা থাকে না। কিন্তু MPH ট্রান্সক্রিপ্টে বায়োস্ট্যাটিস্টিকস কোর্সে আপনার ক্রেডিট এবং গ্রেড উল্লেখ করা থাকে। ফলে ইউনিভার্সিটি এডমিশন কমিটির আপনার বায়োস্ট্যাটিস্টিকস জ্ঞান সম্পর্কে বুঝতে সুবিধা হয়।
৫। রিসার্চ প্রপোজাল লিখতে শেখাঃ
বাইরের ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করার অবিচ্ছেদ্য অংশ হল রিসার্চ প্রপোজাল জমা দেয়া। মেডিকেল এডুকেশনে আমরা কখনই রিসার্চ প্রপোজাল লিখতে শিখিনা। একটি ভালো রিসার্চ প্রপোজাল লেখা অনেক সাধনার একটি ব্যাপার। MPH করাকালীন সময় assignment এবং থিসিস করতে গিয়ে আপনার রিসার্চ প্রপোজাল লেখার আইডিয়া এবং প্র্যাকটিস দুটোই হবে।
সর্বোপরি, একটি MPH ডিগ্রি আপনার সিভিকে অনেক বেশি enrich করবে।
লিখেছেন:
ডা. সাজেদুর রহমান শাওন
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়