বাল্যকাল থেকেই প্রথম স্থান অধিকার করে সকল পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন। ১৯৩৫ সালে দিল্লির হার্ডিং মহিলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে শীর্ষ স্থান অধিকার করে তিনি এম.বি.বি.এস ডিগ্রি লাভ করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় কর্তৃক প্রদত্ত পদকে ভূষিত হন। জনসেবা ও সমাজকল্যাণমূলক আদর্শকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে ডাঃ জোহরা কাজী মহাত্মা গান্ধীর ‘সেবাশ্রমে’ তার চাকরিজীবন শুরু করেন।দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশে (পূর্ববাংলায়) চলে আসেন।
১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও জোহরা কাজীর অনবদ্য ভূমিকা ছিল।একবার কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি নিজের ব্যক্তিগত গাড়িটা দিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মাঝামাঝি অবস্থানে তার গাড়িটি পরিত্যাগ করে পালিয়ে যায়। গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে খুঁজে খুঁজে পাক বাহিনী চলে আসে তাঁর বাসায়। তিনি তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনারারি কর্নেল। তার মুখনিঃসৃত বিশুদ্ধ উর্দু ভাষা এবং তার পদমর্যাদার কথা শুনে পাক সৈন্যরা ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিয়ে যায়। শিক্ষক হিসেবে, বিশেষ করে পরীক্ষায় পাসের ব্যাপারে তিনি বেশ কড়া ছিলেন। তাঁর এই কড়াকড়ি ছিল ছাত্রকে পড়াশোনা করিয়ে যোগ্যতর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। তাঁর সময়ানুবর্তিতা ছিল কিংবদন্তিতুূল্য। ৭টার ক্লাস ৭টায়, এর কোনো নড়চড় হতো না।
ব্যক্তিগত জীবনে জোহরা কাজী বেশ কড়া মেজাজের হলেও অত্যন্ত মানবিক, সংবেদনশীল, সংযমী ও সহমর্মী ছিলেন। আর শিক্ষক হিসেবে ছিলেন মেধাবী, পরিশ্রমী ও যথেষ্ট ন্যায়নিষ্ঠ ও আদর্শস্থানীয়। ইংল্যান্ড থেকে তিনি DRCOG, FCPS, FRCOG এবং MRCOG ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন ।তিনি ছিলেন রোগীদের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ সর্বসুনামের অধিকারী ‘চিকিৎসক’। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে মেডিকেল কলেজের মহিলা হোস্টেলগুলোর প্রশাসনিক দায়িত্বে বেগম জোহরা কাজী ছিলেন যথেষ্ট যত্নশীল, বিশেষ করে ভাষা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছাত্রীদের সুরক্ষার ব্যাপারে তিনি ছিলেন যথেষ্ট দায়িত্বশীল।
তিনি বিপদগ্রস্তদের পাশে থাকতেন। অগণিত অসহায় রোগীকে তিনি সরাসরি সহায়তা করতেন, বাড়ি যাওয়ার টাকা না থাকলে টাকা দিতেন। তিনি অনেককে ডাক্তারি পড়িয়েছেন, বিদেশে পাঠিয়েছেন।
তিনি ছাত্রদের বলতেন— ‘Don’t run after money, money will run after you and be sincere to your noble profession.’
তিনি নিজে সাইক্লিস্ট, নামি ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর ৯৭ বৎসর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান ব্যাক্তি । ডাঃ জোহরা কাজী তমঘা-ই-পাকিস্তান (১৯৬৪), বেগম রোকেয়া পদক (২০০২) এবং একুশে পদক (২০০৮) অর্জন করেন।
nice post