প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বৃহস্পতিবার
মুধাম্মাতান মাহ্দী
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেট
২য় বর্ষ, সেশনঃ ২০১৮-১৯
প্রফেসর ডা. জোহরা বেগম কাজী হচ্ছেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম বাঙালি মুসলিম মহিলা অধ্যাপক। তিনি ১৫ অক্টোবর, ১৯১২ সালে, ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনানগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালে দিল্লির লেডি হার্ডিং মেডিকেল কলেজ ফর ওমেন থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি এমবিবিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় মেধাবী কৃতিত্বের জন্য প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন এবং “ভিসারির পদক” পান। তিনি তাঁর ছাত্রদের বলতেন,
“অর্থের পিছনে দৌড়াবেন না, অর্থ আপনার পিছন পিছন আসবে এ জন্য আপনাকে আপনার মহৎ পেশার প্রতি আন্তরিক হতে হবে।”
অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী ১৩ বছর ধরে তৎকালীন ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে সহকারী সার্জন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেসিডেন্ট সার্জন (গাইনি) হিসাবে যোগদান করেন এবং ঢাকায় স্থায়ী হন। পরবর্তীতে লন্ডন থেকে তিনি সফলভাবে এফআরসিওজি এবং এমআরসিওজি ডিগ্রি অর্জন করার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান হিসাবে যোগদান করেন।
তাঁর সময়ে আধুনিক এলোপ্যাথিক ওষুধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে অবহেলিত মহিলা রোগীদের দুর্দশা দেখে তিনি হতবাক ও বিরক্ত হয়েছিলেন। তারা সাধারণত লাজুক এবং পুরুষ অধ্যুষিত হাসপাতালে বহিরঙ্গন চিকিৎসা সহায়তা নিতে অভ্যস্ত ছিল না। সেই সময়ে মহিলা রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেশি ছিল। তাই তিনি প্রায়ই ঘরে ঘরে গিয়ে মা ও শিশু উভয়কে চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে উৎসাহিত করেছিলেন, যা পরবর্তীতে অবহেলিত মহিলাদের উপর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। তাছাড়া তিনি মেডিকেল সায়েন্সে মহিলাদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা এমবিবিএস কোর্সে ছাত্রীদের ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছিল।
অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজীর দর্শন ছিল – মানবিক আচরণ, দানশীল দৃষ্টিভঙ্গি, ধৈর্য, বন্ধুত্বপূর্ণ, যত্ন, নিষ্ঠা এবং মানবজাতির জন্য নিবেদিত সেবা যা তিনি তাঁর দীর্ঘ পেশাদার জীবন জুড়ে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বজায় রেখেছিলেন।
তিনি সেই পিছিয়ে থাকা বাঙালি জাতিকে আলোকিত করার জন্য আলোর রশ্মির মতো এসেছিলেন। তাঁর নিঃস্বার্থ, নিবেদিত ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই তিনি খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছিলেন। তিনি ২০০৭ সালের, ৭ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। তাঁর এই অবদানের জন্য জাতি তাকে চিরকাল স্মরণ রাখবে। মানবতার প্রতি তাঁর নিঃস্বার্থ ও নিবেদিত সেবার জন্যই তাঁকে বাংলাদেশের ” ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ” বলা হয়।