সিলেট নগরীর টিলাগড় পয়েন্টে একটি মার্কেটের পুরো ফ্লোরজুড়ে লাগানো ‘খন্দকার ডেন্টাল কেয়ার’র বিশাল সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে চিকিৎসকের নাম রয়েছে ডা. শাহ আল তানিয়া। পদবী উল্লেখ করা হয়েছে ‘বিডিএস (ডিইউ), পিজিটি (বারডেম)। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাইনবোর্ড দেখে প্রতিদিন এই ডেন্টাল ক্লিনিকে অনেকেই আসেন দাঁতের চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সবার ভাগ্যে জুটে না এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই ক্লিনিকটিতে রোগী দেখেন হাতুড়ে ডাক্তার।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাইনবোর্ডের আড়ালে মুলত টেকনিশিয়ানরাই সেবার নামে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। নিজেদেরকে দন্তচিকিৎসক দাবি করে রোগীদের দাঁতের চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা পয়সা। শুধু টিলাগড়ের খন্দকার ডেন্টাল কেয়ারই নয়, প্রতারণার এই কৌশল সিলেটের প্রায় সকল ডেন্টাল ক্লিনিকে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাবের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সনদ ও নিবন্ধন ছাড়া ডেন্টাল ক্লিনিক পরিচালনা ও ডেন্টাল প্র্যাকটিস করার দায়ে তিন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে একমাসের করে জেল দেয়া হয়েছে।
সিলেটের বেশিরভাগ ডেন্টাল ক্লিনিকে লোকদেখানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যে ডাক্তারের সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে তিনি সপ্তাহে এক বা দুইদিন নির্দিষ্ট সময়ে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। অথচ সপ্তাহে সাত দিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে টেকনিশিয়ান ও হাতুড়ে ডাক্তাররা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে সেবার নামে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। অনেক সময় হাতুড়ে ডাক্তারদের অপচিকিৎসার ফলে দাঁতের সামান্য সমস্যাও বড় হয়ে ওঠে।
অনুসন্ধানে জানা যায়- ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোর প্রেসক্রিপশনের উপরে কোন চিকিৎসকের নাম লেখা থাকে না। ক্লিনিকের নামেই ছাপানো প্যাডই রোগীদের ব্যবস্থাপত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে কোন চিকিৎসক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তা রোগীর বোঝার উপায় থাকে না।
ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার নগরীতে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত্ র্যাব-৯ এর একটি দলের সহযোগিতায় অভিযান চালানো হয় টিলাগড়ের খন্দকার ডেন্টাল কেয়ার, আম্বরখানার হিমেল ডেন্টাল কেয়ার ও বন্দরবাজার এলাকার মনির ডেন্টাল হলে। অভিযানকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল আহমদ দেখতে পান তিনটি প্রতিষ্ঠানই চলছে সনদ ও নিবন্ধন ছাড়া। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তারাও নিবন্ধিত চিকিৎসক নন।
প্রতারণার এই প্রমাণ পেয়ে খন্দকার ডেন্টাল কেয়ারের খন্দকার মাছুম আহমদ, হিমেল ডেন্টাল কেয়ারের আবদুল আলিম সরকার ও মনির ডেন্টাল হলের দিদার উদ্দিন আদিলকে একমাস করে কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত। চিকিৎসার নামে যারা এভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল আহমদ।