চিকিৎসক না হয়েও বড় বড় ডিগ্রিধারী চিকিৎসক সেজে দিব্যি চিকিৎসা দিচ্ছেন। এরকম প্রতারকদের ক’জনই আর ধরা পড়ছে? দু একজন ধরা পড়লেও শাস্তি বলতে আইনের দৃষ্টিতে জরিমানার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। অপরাধ বিবেচনায় শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর বিষয়টি নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। একই সাথে ভুয়া চিকিৎসক শনাক্ত করতে ব্যবস্থাপত্রে রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাধ্যতামূলক করা দরকার। রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাধ্যতামূলক করার সাথে সাথে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পরিচয়, ছবি সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে দেয়াও জরুরি। এতে ভুয়া চিকিৎসকদের তড়িত মুখোশ উন্মোচন সহজ হবে। রোধ হবে অপচিকিৎসা। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, অপচিকিৎসার কারণে গোটা জাতিই ভুগছে স্বাস্থ্য সমস্যায়। অথচ স্বাস্থ্য প্রশাসনের উদাসীনতা কুম্ভঘুমকেও হার মানায়।
চুয়াডাঙ্গা ফুলবাড়ির এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়ায় চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। তিনি ভারতে লেখাপড়া করেছেন বলে দাবি তুলে কিছু কাগজপত্রও মেলে ধরেন। যা দেখে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা হলেও সময় ব্যয় হয়েছে। এরকম ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করে আনাচে কানাচে অসংখ্য ভুয়া ডাক্তার চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিচ্ছেন। পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ দেখে তাকে সন্দেহ করাই কঠিন। চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়িতে এক স্ত্রী রেখে জনৈক ব্যক্তি খোদ রাজধানীতেই চিকিৎসক সেজে দীর্ঘদিন ধরেই অপচিকিৎসা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ডায়াবেটিক রোগীদের পথ্যও নাকি ওই ভুয়া চিকিৎসক প্রস্তুত করে বাজারজাত করেন। অবশ্য কিছুদিন আগে সাতগাড়ির আস্তানায় ৱ্যাব’র সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানাসহ তার ওই স্ত্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা পথ্য খাদ্য বাজেয়াপ্তও করা হয়। এতে তার কিছুই এসে যায়নি। দিব্যি চিকিৎসক সেজে অপচিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা ফুলবাড়ির ওই ব্যক্তিও দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়ায় অপচিকিৎসা দিয়েছেন। এদের অপচিকিৎসায় কতোজন চিররোগী হয়েছে? কতোজনকে হারাতে হয়েছে প্রাণ? পরিসংখ্যান নেই। ভুয়া চিকিৎসকদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় যখন এখন পর্যন্ত বেশ জটিল তখন অপচিকিৎসায় কতোজন মারা গেছে, কতোজন পঙ্গু হয়েছে, কতোজন চিররোগী হয়ে শয্যাগত তার হিসেব তো আরো কঠিন।
ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকই শুধু নয়, রাতারাতি ক্লিনিক নার্সিং হোম খুলে বসে নিজেই চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দিয়ে মানুষ হত্যা করছে- এরকম খুনির সংখ্যাও সমাজে কম নয়। ক’জনকেই আর আইনের আওতায় নেয়া সম্ভব হয়? যদিও দুদিন আগে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার একটি ক্লিনিক মালিকসহ দুজনের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মেরে ফেলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত আপসেরও চেষ্টা চলেছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে। চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসার নামে যারা অপচিকিৎসা দিয়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ হাতিয়ে নেয়, তাদের কেউ কেউ যখন ধরা পড়ে, তাদের শাস্তির মাত্রা জরিমানার মধ্যে সীমিত না রেখে দীর্ঘ মেয়াদী কারাদণ্ডের বিধান থাকলে ওরা অতোটা সাহসী হবে না। সে কারণেই দরকার কড়া আইন। আর রেজিস্ট্রেশন নম্বর? প্রতিবেশী দেশ ভারতেও চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ধরে ওয়েব সার্চের মাধ্যমে দ্রুত ভুয়া বা প্রকৃত চিকিৎসক শনাক্ত করা সহজ। ভুয়া চিকিৎসক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের যেমন বিকল্প নেই, তেমনই ভুয়া চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এ ধরনের অপরাধীরা ধরা পড়লেও জরিমানা দিয়ে অঞ্চল বদলে আবারো গাড়বে প্রতারণার আস্তানা তথা অপচিকিৎসার দোকান। ঠকবে সাধারণ মানুষ।
অবশ্যই দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসনকে সক্রিয় করে তুলতে হবে। জেলা উপজেলাসহ গ্রামে গ্রামে যারা চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তারা কতোটা চিকিৎসা দিতে পারেন, তা জানতে হলেও দরকার তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর বিশেষ নজরদারি। আলমডাঙ্গার পল্লি কুলপালার এক স্কুলছাত্রী জ্বরে আক্রান্ত। তাকে উচ্চক্ষমতার এন্টিবায়োটিক দিয়েছেন গ্রাম্যচিকিৎসক। তা কি তিনি দিতে পারেন? একে তো কড়া এন্টিবায়োটিক, তার ওপর ডাবল ডোজ। শেষ পর্যন্ত স্কুলছাত্রীর জীবনই যায় যায়। হাসপাতালে নিয়ে অবশ্য তাকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে। এরকম অপচিকিৎসা রোধেও দরকার কঠোর আইন। এ ছাড়া ওষুধের দোকানগুলো থেকে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধও দেদারছে বিক্রির প্রবণতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে কোম্পানির দেয়া ওষুধের নামের বদলে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা।