প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৭ আগস্ট, ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. আসির মোসাদ্দেক সাকিব
ডেন্টাল সার্জন,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
নিজের শরীর গঠন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সৌন্দর্য ইত্যাদি নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকা একটা মানসিক সমস্যা। এটাকে বিজ্ঞানীরা ‘বডি ডিসমর্ফিক ডিসঅর্ডার’ (বিডিডি) বলে। এটা শুচিবাই বা ওসিডি এর অন্তর্গত এক ধরনের রোগ। এই রোগের রোগীরা সব সময় নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করতে থাকে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে এরা খালি ঠোঁটের গঠন, চোখের গঠন, গালের গঠন বা তিল নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। তবে অন্য ক্ষেত্রে যেমন, খুব মোটা মানুষ যদি স্থূলতা নিয়ে চিন্তা করে সেটা মানসিক সমস্যা নয়। সমস্যা হবে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকার পরও যদি নিজের গঠন নিয়ে অস্বস্তি হয় এবং অপরের সাথে বারবার তুলনার কথা চিন্তা আসে। মেয়েরা এই জিনিসে তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হয়। এমনকি স্তনের গঠন নিয়েও এদের অন্যের সাথে তুলনার কথা চিন্তায় আসে এবং অনেক ক্ষেত্রে হিংসে সৃষ্টি হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে হয় মাংসপেশীর গঠন, চোয়ালের উচ্চতা, নাকের উচ্চতা, পেটের মেদ, মুখের উপরে কোন তিল, জননাঙ্গের আকৃতি-এসব নিয়ে।
বডি ডিসমর্ফিক ডিসঅর্ডার-এ আক্রান্ত লোকদের নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, এদের ছেলেবেলায় এদের মা-বাবারা অন্যের সাথে বারবার তুলনা করতো। সন্তানকে অন্যের সাথে যে কোন কিছুতে বারবার তুলনা করা খারাপ। বডি ডিসমর্ফিক ডিসঅর্ডার-এর কারণে ছেলে মেয়েরা প্রায় টেনশনে থাকে, খাবারের রুচি চলে যায়, অসামাজিক হয়ে পড়ে এমনকি চরম ক্ষেত্রে রোগীদের বিষণ্ণতা বাড়তে বাড়তে অনেক সময় আত্মহত্যা প্রবণতার দিকে চলে যায়।
আধুনিককালে এই রোগের প্রকোপ একটু বেড়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখানে আর্টিফিশিয়াল সৌন্দর্য তৈরি করার কারণে মানুষ তুলনার সুযোগ বেশি পাচ্ছে। এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ‘স্ন্যাপচ্যাট ইউজারদের’। স্নাপচ্যাট বিউটি ফিল্টার প্রথমে আনার কারণে মানুষ তার গঠনকে বিকৃত করে সেটাকেই সুন্দর ভেবে নিচ্ছিল। এখন প্রায় প্রত্যেক ক্যামেরা বা সামাজিক সাইটে এটা করা যায়। বিভিন্ন দেশের প্লাস্টিক সার্জনরা কমপ্লেইন করছে যে টিনএজাররা এসব এপ্লিকেশন দিয়ে নতুনভাবে চেহারা গঠন করে ও তাদের কাছে এনে সেভাবে বানিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করছে। এটাকে বিজ্ঞানীরা নতুনভাবে ‘স্ন্যাপচ্যাট ডিসমর্ফিয়া’ নামে আখ্যায়িত করেছে।
গবেষকরা বলেন, এই বডি ডিসমর্ফিক ডিসঅর্ডার রোগ বায়োসাইকোসোশ্যাল ভাবে প্রধানত সৃষ্টি হয় এবং ৪৩ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি বংশগতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ও পরিবাহিত। বায়োসাইকোসোশ্যাল উৎপত্তি মানে প্রাত্যহিক সামাজিক জীবনে আশেপাশের মানুষ দিয়ে যদি নিগৃহীত, অত্যাচারিত, অপমানিত বা তুলনাকৃত হয়ে যদি স্থায়ীভাবে মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তন হয়। ১৮৮৬ সালে ইতালির টিউরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এনরিকো মরশেলি এই রোগকে ডিসমর্ফোফোবিয়া নাম দেন। পরে ১৯৯৩ ও ২০১৩ তে সংশোধিত হয়ে বর্তমানে পুরোপুরি মানসিক সমস্যা নামে এটি আখ্যায়িত।
এন্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ আর পেশেন্ট মোটিভেশান ছাড়া আর কোন ওষুধ নেই এই রোগের। তাই এই ক্রমবর্ধমান আধুনিক রোগ থেকে বাঁচতে শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে রাখা ও প্রাত্যহিক জীবনে অন্যের সাথে তুলনা করা থেকে বিরত রাখতে হবে।