সামনে ৩৭ তম বিসিএস এর মৌখিক পরীক্ষা।মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
কেমন হয় ভাইভা বোর্ডঃ
পিএসসি মেম্বারের রুমে বোর্ড বসে।রুমের বাইরে ভাইভা প্রার্থী অবস্থান করে, সিরিয়ালী এক জন এক জন করে রুমে ঢুকে।প্রতি বোর্ডে ১৫ জনের মত ক্যান্ডিডেট থাকেন।প্রতিটি বোর্ডে ১ জন পিএসসি মেম্বার এবং দুই জন এক্সটারনাল থাকেন।এক্সটারনাল যে কোন সাবজেক্টের হতে পারেন,মেডিসিন,সার্জারী,গাইনি,পেডি,ফরেনসিক, সাইকিয়াট্রি,প্যাথলজী ইত্যাদি।প্রথমে সাধারণত পিএসসি মেম্বার প্রশ্ন করেন।তারপর এক্সটারনালরা প্রশ্ন করেন।পিএসসি মেম্বার জেনারেল টপিক্স থেকে প্রশ্ন করেন আর এক্সটারনাল গন মেডিকেল রিলেটেড বিষয়গুলা নিয়ে প্রশ্ন করে থাকেন।
কি ধরনের প্রশ্ন করা হয়ঃ
একটি প্রশ্ন মোটামুটি সবার জন্যই কমন,Introduce yourself. এরপর নিজ জেলা,উপজেলা,মেডিকেল কলেজ,মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবঙ্গু,দেশ ও বিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা,রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
তারপর প্রশ্ন করেন সম্মানিত এক্সটারনাল গন।উনারা ক্যারিয়ার, কমন মেডিকেল ডিজিজ,যে ধরনের রোগী উপজেলায় বেশি পাওয়া যায়,টীকাদান কর্মসূচি,মা ও শিশু স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকেন।
কি কি পড়তে হবেঃ
দুই ভাগে ভাগ করে পড়তে হবে।জেনারেল বিষয় এবং মেডিকেলের বিষয়।
জেনারেল বিষয়ঃ
বাংলাদেশের ইতিহাস বিশেষ করে ৪৭-৭১,বঙ্গবন্ধুর জীবনী বিশেষ করে অসমাপ্ত আত্মজীবনী,৭ মার্চের ভাষণ,১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ,৭ নভেম্বর, স্বাধীনতার ঘোষনা,মার্চ মাস,ডিসেম্বর মাস,যে মাসে ভাইভা সে মাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন,ভাইভার দিনের বাংলা ও আরবি তারিখ,জন্মদিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার,সকল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর নাম,সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,প্রধানমন্ত্রীর পদবী,লিখিত বই,পুরষ্কার,সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা দেশ ও বিদেশ,এমডিজি,এসডিজি এগুলোতে বাংলাদেশের অর্জন,স্বাস্থ্য ক্যাডারের পদ সোপান,মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব, কমিউনিটি ক্লিনিক, নিজ জেলার নামকরণ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ,রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধার নাম,মেডিকেল কলেজের ইতিহাস,মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, সরকারের বিভিন্ন নীতি,স্বাস্থ্য খাতে পলিসি,তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।সাধারন বিষয়ে জেনারেল ক্যাডারে যারা ভাইভা দেয় তাদের যে প্রশ্নগুলা করা হয় সেগুলো সংগ্রহ করা যেতে পারে,একটা আইডিয়া পাওয়া যায়।এগুলা সাধারণত বিসিএস ভাইভা রিলেটেড ফেসবুক গ্রুপ এ পাওয়া যায়।
মেডিকেলীয় বিষয়ঃ
মেডিকেলীয় যে কোন বিষয় থেকে প্রশ্ন হতে পারে।যে সাবজেক্টের এক্সটারনাল থাকেন, তিনি সেই সাবজেক্ট রিলেটেড প্রশ্ন করতে পারেন।আবার অনেক সময় জিজ্ঞেস করা কোন সাবজেক্টে ক্যারিয়ার করতে চাও,ওই রিলেটেড প্রশ্ন করা হয়।তাই সব সাবজেক্ট ই গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।তবে কিছু কমন টপিক থেকে সবাইকেই প্রশ্ন করা হয়,যেমনঃউপজেলায় Chest pain pt আসলে কি ম্যানেজমেন্ট দিবেন,৫ টি কমন রোগ যা উপজেলায় পাওয়া যায়,কিভাবে ডেথ ডিক্লেয়ার করবেন,কাউন্সেলিং করা ইত্যাদি।
মেডিসিনঃ
এখান থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয়।মেডিসিনের স্যার থাকলে case scenario based question করতে পারেন।গুরুত্বপূর্ণ টপিকঃ MI,TB,Rheumatoid arthritis,osteoarthritis,pneumonia,lung cancer,pleural effusion,MS,hemophilia,thalassemia,DM,hepatitis,PUD,Stroke,Ckd ইত্যাদি অর্থাৎ যে টপিকগুলা ইম্পরট্যান্ট হিসেবে আমরা জানি অইগুলাই।যে কোন ফাইনাল প্রফের গাইডবুক থেকে পড়ে নিলেই হবে বিশেষ করে scenario based question গুলা।
পেডিঃ পেডি মেডিসিন এবং সার্জারি দুইটাই গুরুত্বপূর্ণ। diarrhoea,pneumonia, bronchiolitis,valvular heart diseases, LBW,PEM,AFP,EPI,Vaccine,growth and development,PNA,breast feeding technique ইত্যাদি।
গাইনীঃ Prenatal checkup,delivery related complications, EOC,MCH,contraceptives ইত্যাদি।
সার্জারীঃ Common surgical problems in UHC,appendicitis, hernia,hydrocele,acute abdomen,RTA,SSTI ইত্যাদি।
কমিউনিটি মেডিসিনঃ Public health,eradication,elimination, surveillance, epidemic,endemic,water purification, sanitation, community clinic,WHO ইত্যাদি।
সাইকিয়াট্রিঃ প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২-৩ টি বোর্ডে সাইকিয়াট্রির স্যার থাকেন।তাই এইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। Schizophrenia,Anxiety,Childhood psychiatric problem,Anorexia nervosa,HCR,Depression,Autism,Post partum psychosis ইত্যাদি।
Poisoning: OPC,datura,sedative, ইয়াবা,alcohol ইত্যাদি।
ফরেনসিকঃ Autospy,hanging, chalan,medical jurisprudence, suicide, homicide,rape,drowning,snake bite,medical certificate ইত্যাদি।
বেসিক সাবজেক্টঃ বেসিকের স্যাররা প্রায়ই থাকেন বিশেষ করে ফিজিওলজির স্যার।Physiology,biochemistry and anatomy র গুরুত্বপূর্ণ টপিকস গুলা দেখে যেতে হবে।
বিভিন্ন ন্যাশনাল গাইডলাইন such as rabies,tb,malaria ইত্যাদি।
কোন কোন বই পড়বেনঃ
ডাঃ শাখাওয়াতের bcs viva for health cadre একটা বই আছে,সেটা কিনতে পারেন।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিসিএস ভাইভার আলাদা বই পাওয়া যায়।অসমাপ্ত আত্মজীবনী ভাল মত পড়ে যেতে হবে।জেনারেল টপিকস এর জন্য assurance, professor,oracle ইত্যাদি যে কোন ভাইভা গাইড।মেডিকেলীয় বিষয়ের জন্য প্রথম,২য় ও ফাইনাল প্রফের গাইডবুক।সাম্প্রতিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে,ভাইভা গ্রুপে প্রতিদিনের শেয়ার করা প্রশ্নগুলা সলভ করতে হবে।যে জেনারেল টপিকস গুলা বললাম সেগুলা আসলে বইগুলাতে সুন্দরভাবে সাজানো নাই।তারপর ও বিভিন্ন বই দেখে,রিটেনের বই দেখে,ইন্টারনেট ঘেটে এই টপিক গুলার উত্তর রেডী করতে হবে। মেডিকেলীয় বিষয় থেকেই বেশি প্রশ্ন করার সম্ভাবনা বেশী।
ভাইভার আগে করনীয়ঃ
সুন্দর,ভদ্র পোশাক-আশাক পরে যেতে হবে।কাগজপত্র সব গুলা ভালভাবে দেখে নিতে হবে।চেষ্টা করতে হবে অন্তত যেন ১ ঘন্টা আগে পরীক্ষার হলে পৌছানো যায়।পরীক্ষার দিনের পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে যেতে হবে।
শেষ কথাঃ
ভাইভা পরীক্ষা সাধারন প্রফের ভাইভার মতই।স্যাররা পাশ করানোর মানসিকতা নিয়েই বসেন।খুব বেশি মেজর ভুল না করলে,রাজনৈতিক টপিক্স এ ব্যালেন্সড উত্তর দিলে,কমন টপিকস পারলে আর বেয়াদবি না করলে সাধারণত ফেইল হয় না।তাছাড়া ভাইভার উপর ক্যাডার প্রাপ্তি নির্ভর করে না।রিটেন + ভাইভা নাম্বার যোগ করে ফলাফল হয়।রিটেনে ভাল নাম্বার থাকলে ভাইভা টা মোটামুটি পাশ করতে পারলেই হল।তাই অযথা টেনশন না করে ভালমত প্রস্তুতি নিলে পাশ করার কনফিডেন্স বাড়বে।সবার জন্য শুভকামনা।
লিখেছেন : ডা. আমিনুল ইসলাম,৩৪ ও ৩৫ তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ।