বেতনবিহীন কোভিড ডিউটি, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় অনিশ্চয়তার দোলাচলে শসৈনইমকহার ইন্টার্নরা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ অক্টোবর ২০২০, বুধবার  

হালিমা আফরিন
ইন্টার্ন ডাক্তার, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কিছু বলতে এসেছি। বলে হয়ত লাভ হবে না। কিন্তু আমরা আসলে কী করবো? কী করা উচিত? শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ। অধ্যাপক ডাক্তার মনছুর খলিল স্যারের স্বপ্নের মেডিকেল। স্যার বলতেন,”এই মেডিকেল তোমাদের মা, আর আমি তোমাদের বাবা”। আহা, আজ যদি স্যার থাকতেন! স্বপ্নটা বুঝি স্যার প্রয়াণের সাথে সাথেই ভেঙ্গে গেলো!

এই মেডিকেলের চতুর্থ ব্যাচ আমরা। আমাদের পূর্বে আরো তিন ব্যাচ সদর হাসপাতাল থেকে ইন্টার্নশিপ  সম্পূর্ণ করে বেরিয়েছে। তখনো আমাদের হাসপাতাল চালু হয় নি। এ বছর মার্চের ১৭ তারিখ হাসপাতালের উদ্বোধন হয়। আমরা যারা নতুন ইন্টার্ন, প্রায় সবাই এখানে জয়েন করি। নতুন হাসপাতালে বুক ভরা আশা নিয়ে আমরা গিয়ে বসে থাকতাম। রোগী আসা শুরু হয়েছে, মেডিসিন, শিশু ওয়ার্ড ফিল আপ হয়ে গেছে, ওটি চালু করার প্রক্রিয়া চলছে, এর মধ্যেই ঘোষণা এলো এই হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড করে ফেলা হবে। ভালো কথা! কিন্তু ইন্টার্ন ডাক্তারদের কী হবে সেটা ভাবার প্রয়োজন কেউ বোধ করে নি। একটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাজ কী? এখানে রোগীর সেবার পাশাপাশি ডাক্তার তৈরি করা হয়। এটাই তো জেনে এসেছি। আমরা যখন আমাদের জয়েনিং ফর্ম জমা দিতে গেলাম, তখন সেটা জমা নিলো না। আমরা ডিউটি কোথায় করবো, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট কিছু বলে নি। স্যারদের অনুমতিক্রমে আমরা সবাই বাসায় চলে গেলাম। কিন্তু ৪ মাস বাসায় থাকার পরও যখন আমাদের কোন ব্যবস্থা করা হচ্ছিলো না, সবাই আগস্টে এসে কোভিড হাসপাতালেই জয়েন করলাম। স্যাররা তখন বলেছিলেন ২ সপ্তাহের মধ্যেই নন- কোভিড চালু হয়ে যাবে! যাই হোক, সেই দুই সপ্তাহ এখনো শেষ হয় নি। এখন করোনার সেকেন্ড ওয়েভের প্রিপারেশান হিসেবে এটাকে কোভিডই রাখা হচ্ছে। যদিও ৫০০ শয্যার ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রোগী মাত্র ১৫ জন, এর মধ্যে বেশিরভাগ আবার নেগেটিভ! তাছাড়া এলাকার স্থানীয় অন্যান্য রোগীদের সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।সামান্য কিছু হলেই সদর থেকে ময়মনসিংহ কিংবা ঢাকায় রেফার করার কারণে অনেক গরীব রোগী সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আগস্টে এসে জয়েন করার পর আমাদের থেকে কোভিড ডিউটি করার অঙ্গীকারনামা রাখা হয় এবং আমাদের আগের এক মাসের ডিউটি বাতিল করে দেয়া হয়। প্রায় তিন মাস কোভিড ডিউটি করার পরও আমরা এখনো বেতন পাই নি! কিছুদিন আগে আমাদের কয়েকজন ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্যার, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) স্যারসহ আরো কয়েকজনের সাথে দেখা করে আমাদের সমস্যাগুলোর স্মারকলিপি দিয়েছিলো। মহাপরিচালক স্যারও তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন শীঘ্রই এখানে নন কোভিড চালু হবে। ডিরেক্টর স্যার আবার বলেছিলেন সদর হাসপাতালে আমাদের শেখার ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু এতেও আমাদের শিক্ষকগণ রাজি নন। তারা কেনো সদরে যাবেন? তারা তো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের! আচ্ছা, যদি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরই হন, তাহলে এখানে তাদের কাজটা কী? দুইমাসে দুই দিন কোভিড ডিউটি করে বেতন পাচ্ছেন, এই আরাম তারা ছাড়তে চাচ্ছেন না! ক্ষতি কারোরই হচ্ছে না, কেবল আমরা যারা ইন্টার্ন তাদেরকেই পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। ৫ বছর এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করে যদি কোয়াক হই, তবে কী দরকার ছিলো আমাদের এই পরিশ্রমের? কোন কোন শিক্ষক আবার বুদ্ধি দিয়েছেন, পরে অনারারি করে নিতে! আচ্ছা, অনারারি যদি করতেই হয়, তাহলে এই এক বছর ইন্টার্নশিপ কেনো? আমাদের প্রত্যেকের মানসিক অবস্থা খুবই বিপর্যস্ত। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে দিয়ে আমাদের এতোটা সময় পার করলো! এখনো মিথ্যা বলে যাচ্ছে। উপরওয়ালা একজন আছেন। তিনি নিশ্চয়ই আমাদের সাথে করা এই অন্যায়ের শাস্তি দিবেন। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।

বেশ কিছু সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেও এখন পর্যন্ত কোনো রকম সাহায্য পাইনি। আমরা কেবল এটুকুই জানতে চাই যে, আমরা যারা ইন্টার্ন আছি এখানে তাদের শেখানোর দায়িত্ব কি কারো নেই?দায়িত্ব যদি নাই থাকে, তবে এখানে এই মেডিকেল চালু রাখার দরকার টা কি? বন্ধ করে দিলেই তো হয়।

 

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সফলভাবে জরায়ুর ৩২ টি টিউমার অপসারণ করলেন গাইনী কনসালটেন্ট ডা. নুসরাত আরা ইউসুফ

Wed Oct 21 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ অক্টোবর ২০২০, বুধবার   ১৯ বছরের অবিবাহিতা মেয়ে রাবেয়া (ছদ্ম নাম) বাড়ি কাঠখালি, কিশোরগঞ্জে। ৬- ৭ বছর যাবত ভুগছিল জরায়ুর টিউমার এর সমস্যায়। সমস্ত জরায়ুতে টিউমার। কেউ এই রোগীর অপারেশন করতে রাজি হয় না। কারণ এটা জটিল অপারেশন যেহেতু এত বেশী সংখ্যক টিউমার (ফাইব্রয়েড) ফেলে জরায়ু রক্ষা করা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo